আর কত রক্ত ঝরলে ফিলিস্তিনরা মুক্তি পাবে!

1

মধ্যপ্রাচ্যের মরুপ্রান্তরে চলছে রক্তের হুলিখেলা। যুদ্ধের উত্তেজনা এখন গাজা থেকে ছড়িয়ে পড়েছে লেবানন, ইরান ও সিরিয়ায়। এদিকে ইরানের দুঃসাহসে আঘাত আনার পায়তারাও থেমে নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে ইরানকে কঠোর হুমিয়ারি দিয়েছে। সবদিক বিবেচনায় বলা যায়, রক্তাক্ত মধ্যপ্রাচ্য উত্তেজনা বা যুদ্ধাবস্থা পুরো মুসলিম বিশ্বকে ছুঁয়ে যাওয়ার পথে। আন্তর্জাতিক যুদ্ধ ও প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ অঞ্চলের উত্তেজনা আরববিশ্ব ছাড়িয়ে পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া কিংবা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের শঙ্কাও বাড়িয়ে তুলতে পারে; যা দীর্ঘদিন ধরে বলা হচ্ছে। বিশ্ব সম্প্রদায় গভীর উদ্বেগ নিয়ে গুঞ্জনের সত্যতা মিলানোর চেষ্টা করছেন। গত সপ্তাহে ইসরায়েল সেনা ঘাঁটিতে ইরানের হামলার কয়েকদির পর পাল্টা হামলা করে ইসরায়েল। এতে বিশ্বব্যাপী নতুনভাবে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। কী হতে যাচ্ছে বা কোন দিকে মোড় নিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ! অবশ্য ইরানের উপর এ সপ্তাহে ইসরায়েলের সর্বশেষ ভয়াবহ আক্রমণের পর ইরানের পাল্টা আক্রমণের সম্ভাবনা এবং তা কোন ভয়াবহতার দিকে পরিস্থিতি ধাবিত করতে পারে, তা নিয়ে নানা উদ্বেগ ও শঙ্কার ডালপালা বিস্তার করলেও আপাতত ইরানের প্রতিক্রিয়ায় সেই শঙ্কা করছেন না বিশ্লেষকরা। এটি এই মুহূর্তের জন্য স্বস্তির খবর হলেও দীর্ঘমেয়াদে অঞ্চলটিতে স্বস্তি ও শান্তির কোনো ইঙ্গিত পরিলক্ষিত হচ্ছে না। কেননা শুধু ইরান নয়, একই সঙ্গে এ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ফিলিস্তিন, লেবাননও। এটা উদ্বেগের। গত শুক্রবার রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন এলাকায় রাতভর ইসরায়েলি হামলা পরিচালিত হয়। এতে নিহত হয় ইরানি চার সৈন্য। এর প্রতিক্রিয়া ইরান জানাবে কি না, তা এই মুহূর্তের সবচেয়ে বড় আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু এটি স্পষ্ট যে, হামলাটি দেশ দুটির মধ্যে কয়েক দশক ধরে চলা দ্ব›দ্ব-সংঘর্ষে ভয়ানক মাত্রা যুক্ত করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, হামলা ও পাল্টা হামলা যদি চলতে থাকে তাহলে একপর্যায়ে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে বড় ধরনের যুদ্ধ বেঁধে যাবে। তবে ইরানে এ হামলাকে ইসরায়েলের ‘আত্মরক্ষার’ অধিকার এবং এতে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে ইরানকে পাল্টা হামলা না করতে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সার্বিকভাবে যুদ্ধের বিরুদ্ধে যদি হতো যুক্তরাষ্ট্রের এ সতর্কতা নিশ্চয়ই ইতিবাচক হিসেবে ভাবা যেত। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশে বিশেষ করে ফিলিস্তিনে ইসরায়েল এই মুহূর্তে যে বর্বরতায় মত্ত, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান বিশ্বব্যাপী সমালোচিত ও প্রশ্নবিদ্ধ। গত এক বছরের কথাই যদি ধরা যায়, দেখা যাবে ইসরায়েল শুধু ফিলিস্তিনিদেরই হত্যা করেছে ৪২ হাজারের বেশি। সমগ্র ভূখন্ড ধ্বংসস্তুপে পরিণত করা হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত হয়েছে যুদ্ধাপরাধ, প্রতিনিয়ত লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবাধিকার। এ নিয়ে বিশ্বব্যাপী ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে কণ্ঠ উচ্চকিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোয় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে। কিন্তু কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না তাকে। এ ইস্যুতে বারবার দেখা গেছে আমেরিকার ইসরায়েলের পক্ষাবলম্বন। এমনকি তারা ইসরায়েলকে অস্ত্র ও সেনা দিয়ে সহযোগিতা করছে প্রকাশ্যেই। সাম্প্রতিক সময়ে লেবাননের ইরানের সহযোগী হিজবুল্লাহর ওপর হামলার নামে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সাত শতাধিক লেবানিজকে হত্যা করেছে। হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াসহ ইরান ও তার মিত্র শক্তিগুলোর শীর্ষস্থানীয় অনেক নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। আবার ইরানের আরেক সহযোগী ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ চলমান। এ হুথিদের মধ্যপ্রাচ্যের ঈগল বলা হচ্ছে।
বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের উপর যা করছে, তা অনেক ক্ষেত্রেই আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি আইনের লঙ্ঘন। জাতিসংঘ ইসরায়েলের মানবাধিকার লঙ্গনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেও আমেরিকা নির্লজ্জভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলকে। ফরে জাতিসংঘের মত বিশ্বসংস্থা মানবতার বিরুদ্ধের এ অপরাধকে থামাতে পারছে না। প্রতিদিন নিরীহ ফিলস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের এ হত্যাযজ্ঞ- আধুনিক সভ্যতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে। হাজার হাজার শিশু ও নারীকে তারা নির্বিচারে হত্যা করেছে। আমেরিকা ও ইসরায়েল মূলত সভ্যতার নামধারণ করে তা অসভ্যতাই জারি রেখেছে! আমরা মনে করি, যুদ্ধ কোনোদিন শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। যদি তাই হতো ফিলিস্তিন এতোদিন স্বাধীনতা ভোগ করত। আমরা মনে করি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যস্থতায় দুই দেশ নীতির ভিত্তিতে টেবিলে বসে যুদ্ধের সমাপ্তি টানতে হবে। এজন্য বিশ্বনেতৃত্ব ও সংস্থাগুলোর পাশাপাশি আরববিশ্বের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান অত্যন্ত জরুরি। যুদ্ধের রণাঙ্গনের বিস্তার নয়, সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ পরিহার করে শান্তিপূর্ণ উপায়ে ফিলিস্তিনিদের মুক্তির উপায় বের করবে বিশ্ব সম্প্রদায়-এমনটি প্রত্যাশা আমাদের।