আয়নাঘরের অস্তিত্ব স্বীকার করল র‌্যাব

4

 

পূর্বদেশ ডেস্ক

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দপ্তরে গোপন নির্যাতন কেন্দ্র থাকার কথা এবং গুম-খুনের অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছেন বাহিনীর মহাপরিচালক একেএম শহিদুর রহমান। ‘গুম তদন্ত কমিশনের’ নির্দেশে ‘আয়নাঘর’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া সেসব গোপন নির্যাতন কেন্দ্র ‘অপরিবর্তিত অবস্থায়’ রাখার কথা বলেছেন তিনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার কারওয়ানবাজার র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ বাহিনীর বিরুদ্ধে থাকা বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন র‌্যাব প্রধান। খবর বিডিনিউজের।
বিভিন্ন সময়ে র‌্যাবের বিরুদ্ধে গুম খুনের যেসব অভিযোগ উঠেছে, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তার বিচারের প্রত্যাশা জানিয়ে ভুক্তভোগীদের পরিবারের কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন তিনি।
শহিদুর রহমান বলেন, যত ধরনের অভিযোগ আছে, গুমের বিষয়ে, খুনের বিষয়ে, আয়নাঘরের বিষয়ে, এটা গুম-খুন কমিশন তদন্ত করছে। আমরা তাদের সার্বিকভাবে এ তদন্তে সহায়তা করছি। আমরা আশা করব, এ তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতে একটা আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
র‌্যাবে ‘আয়নাঘর’ ছিল কি-না জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, র‌্যাবে যে আয়নাঘরের বিষয়টা এসেছে, এটাতো ছিল, আছে। কমিশন আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছে যে, সেটা যে অবস্থায় আছে ওই অবস্থায় রাখার জন্য। কোথাও এখন কোনরকম যেন পরিবর্তন, পরিবর্ধন না করা হয়। সে অনুযায়ী আমরা ঠিক ওইভাবেই রেখেছি, যা যেভাবে ছিল।
আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বিরোধী মতের বহু মানুষকে তুলে নিয়ে বিচার বহির্ভূতভাবে অজ্ঞাত স্থানে আটক রাখার অভিযোগ ওঠে, সেইসব বন্দিশালাকে প্রতীকী হিসেবে ‘আয়নাঘর’ নাম দেওয়া হয়েছে।
তুলে নেওয়া সেই সব মানুষদের কেউ কেউ বহু দিন পর পরিবারের কাছে ফিরে বীভৎস নির্যাতনের বিবরণ দিলেও অনেকেরই এখনও খোঁজ মেলেনি।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ‘গুমের’ ঘটনা তদন্তে গত ২৭ অগাস্ট অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের ‘গুম তদন্ত কমিশন’ গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কমিশনে যত অভিযোগ পড়েছে, তার বেশিরভাগই পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট র‌্যাবের বিরুদ্ধে।
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাÐের অভিযোগ তুলে ইতোমধ্যে র‌্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ করেছে বিএনপি, যদিও ২০০৪ সালে তাদের সরকারের সময়ই এ বাহিনী প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।
গতকাল গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে র‌্যাবের মহাপরিচালক ভবিষ্যতে ‘আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে’ তার বাহিনীর দায়িত্ব পালনের প্রতিশ্রæতি দিয়ে বলেন, ‘র‌্যাবের বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযোগ আছে। গুম-খুন, অপহরণ, এ ধরনের বেশকিছু অভিযোগ আমাদের বিরুদ্ধে আছে।
আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে জানাতে চাই, আজ পর্যন্ত যে সমস্ত জনগণের যারা র‌্যাব দ্বারা, নির্যাতিত বা অত্যাচারিত হয়েছে, তাদের কাছে এবং যারা হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে, যেমন নারায়ণগঞ্জের সাত খুনসহ যারা র‌্যাব কর্তৃক হত্যাকাÐের শিকার হয়েছে, তাদের পরিবারের কাছে আমরা দুঃখ প্রকাশ করি এবং ক্ষমা প্রার্থনা করি।
কেবলমাত্র সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচারের মাধ্যমেই আমরা দায়মুক্ত হতে চাই। আমি আপনাদের মাধ্যমে আবারও যারা র‌্যাবের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন। তাদের পরিবারের, তাদের কাছে আবারও দুঃখপ্রকাশ এবং ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বর র‌্যাব এবং এর সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।
এরপর বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সাড়া মেলেনি। যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বলে আসছে, নিষেধাজ্ঞা উঠানোর প্রক্রিয়া বেশ ‘জটিল’।
মহাপরিচালক জানান, গণঅভ্যুত্থানের সময় র‌্যাবের ১৬৮টি অস্ত্র খোয়া গিয়েছিল, যার মধ্যে ৯০টি উদ্ধার হয়েছে। আর লুট হওয়া ১২ হাজার গুলির মধ্যে ৭ হাজার উদ্ধার সম্ভব হয়েছে।