পূর্বদেশ ডেস্ক
মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম মসজিদ সংযুক্ত আরব আমিরাতের শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ। এটি এখন বিশ্বের লাখো ভ্রমণপিপাসু পর্যটকের গন্তব্য হয়ে উঠেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রয়াত জাতির জনক শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের উদ্যোগে এবং তার নামে প্রতিষ্ঠিত দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলীর এই মসজিদ। এতে ২০০৫ সাল থেকে নিয়মিত রমজান মাসের প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত পুরো মাসজুড়ে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য গণইফতারের ব্যবস্থা করা হয়। কেবল করোনাভাইরাস মহামারীর সময় তা স্থগিত ছিল।
গোড়ার দিকে ২ হাজার মানুষের জন্য বিনামূল্যে ইফতারের ব্যবস্থা থাকলেও এর পরিধি বাড়তে থাকে। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪০ হাজার মানুষকে এখানে ইফতার দেওয়া হয়। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে ইফতার গ্রহণে ইচ্ছুকদের উপস্থিতি ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যায় এবং রমজানের শেষদিকে এই সংখ্যা আরও বাড়ে। খবর বিডিনিউজ’র
মসজিদটিতে বিকেল থেকেই শুরু হয় রোজাদারদের আগমন। বিভিন্ন শ্রমিক নগরী থেকে এখানে আসতে বিনা ভাড়ার বাসের ব্যবস্থা থাকে। মসজিদ এলাকায় রয়েছে নারী, শিশু ও বয়স্কদের জন্য ৭০টি শাটল যান এবং ৫০টি হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা। ধীরে ধীরে একসময় ভরে ওঠে মসজিদের প্রাঙ্গণ। কাছেই শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত তাঁবুগুলোয় ইফতারের বাক্স মওজুদ থাকে। খবর বিডিনিউজের।
সুশৃঙ্খল পরিবেশ ছয়শ স্বেচ্ছাসেবকের তদারকিতে সারি সারি সাজানো হয় ইফতারের বাক্স। এতে থাকে খেজুর, পানীয় ও স্বাস্থ্যকর খাবার। ইফতার জোনের পাশেই থাকে পুলিশ, জরুরি চিকিৎসাকর্মী আর বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনী সদস্যরা।
মসজিদ চত্বরের ১৭ হাজার বর্গমিটার এলাকায় ইফতারের এ বিশাল আয়োজনে গালিচা বিছিয়ে বসার ব্যবস্থা করা হয়। ইফতার শেষে সবার গন্তব্য হয় শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদের অপূর্ব স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শনটির দিকেই। আমিরাতের জাতির পিতা শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের সমাধিও রয়েছে মসজিদের পাশে। ২ বিলিয়ন দিরহাম ব্যয়ে পারস্য মুঘল ও আলেকজান্দ্রিয় স্থাপত্যশৈলীর অনুকরণে নির্মিত শেখ জায়েদ মসজিদে রয়েছে বিশ্বের অন্যতম বড় গালিচা, যা ৫ হাজার ৬২৭ বর্গমিটার আয়তনের এবং রয়েছে বিশাল ঝাড়বাতি।
জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শীর্ষ সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে স্বীকৃত। এই মসজিদ তৈরির কাজ শুরু হয় ১৯৯৬ সালে। প্রায় ৫৪৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ১২ বছরে এর কাজ শেষ হয়।
৪০-৫০ হাজার মুসল্লীর ধারণ ক্ষমতা এই মসজিদে। এখান থেকে পুরো আবুধাবি শহরের মসজিদগুলোতে বেতার প্রযুক্তির মাধ্যমে একযোগে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আজান স¤প্রচার হয়। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের সূত্রমতে, ২০২৪ সালে ৬৫ লাখ দর্শনার্থীকে স্বাগত জানিয়েছে জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ সেন্টার, যা আগের বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি।
মাসব্যাপী গণইফতারের আয়োজনের মাধ্যমে মসজিদটির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে প্রতি বছরের মতো এবারও আমিরাতের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যসহ আবুধাবির বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর প্রবাসী বাংলাদেশিদের এসে অংশ নিতে দেখা গেছে।
গণইফতারে দেখা হয় জাপানের ওসাকা থেকে ভ্রমণ করতে আসা পর্যটক কেনঝো তাতসুকি দম্পতির সঙ্গে। তারা আমিরাত ভ্রমণে এসে এই আয়োজনের কথা শুনেছেন। জানালেন, দেশটাকে তাদের পছন্দ হয়েছে, আবহাওয়া ও মানুষগুলো ভাল। উচ্ছ্বাস নিয়ে তারা বলেন, “সবার সঙ্গে বসে ইফতার করার সুযোগ আগে কখনো হয়নি, অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা হচ্ছে।”
আবুধাবিতে কাতার দূতাবাসে কর্মরত বাংলাদেশি জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসাইনের সঙ্গে দেখা হলে তিনি বলেন, “ধনী-গরিব সব শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে ইফতারের এই চমৎকার আয়োজনে বরাবরই আসি আমি। অনেক মানুষের সঙ্গে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়, এই আশায়। ভালো লাগে।”
আবুধাবি প্রবাসী ব্যবসায়ী ও সংগঠক আবু তৈয়ব চৌধুরী বলেন, “দেশি-বিদেশি মানুষের সঙ্গে একই সারিতে বসে ইফতারের আনন্দই আলাদা। এখানে এলে বহু পুরনো বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়, আনন্দ পাই।”
প্রবাসী সাংবাদিক মো. আবদুল মান্নান বলেন, “সারাদিনের রোজা পালনের পর ৪০ হাজার মানুষের সঙ্গে একই কাতারে বসে ইফতার করতে পারাটা সৌভাগ্যের। আমি প্রতিবছর কমপক্ষে একবার হলেও জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদের এই বিশাল ইফতার মাহফিলে আসি।”