আমিনুল ইসলাম

3

একজন চিত্রশিল্পী। তিনি ঢাকা আর্ট কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাত্র এবং প্রথম সরকারি গেজেটভুক্ত শিক্ষক। চিত্রকলায় অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ১৯৮১ সালে একুশে পদক এবং ১৯৮৮ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে। আমিনুল ইসলাম ১৯৩১ সালের ৭ নভেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) টেটিয়া গ্রামে তার মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় ঢাকার মাহুতটুলী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার পর তিনি আরমানিটোলা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এসময়ে তিনি জাপানি, চীনা, ও ভারতীয় চিত্রশিল্পীদের কাজ অনুসরণ করতেন। তিনি জ্ঞানেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাজ পছন্দ করতেন। ১৯৪৭ সালে তিনি মেট্রিকুলেশন পাস করেন এবং চিত্রকলা বিষয়ে পড়াশুনার জন্য কলকাতা আর্ট কলেজে ভর্তি হতে যান। সেখানে তার জয়নুল আবেদীন, কামরুল হাসান, শফিউদ্দিন আহমেদের সাথে সাক্ষাৎ হয়। তারা তাকে পরামর্শ দেন যে তার কলকাতায় ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন নেই কারণ ঢাকায়ই একটি আর্ট কলেজ হতে যাচ্ছে। তিনি জয়নুল আবেদীনের সাথে ঢাকায় ফিরে আসেন। ১৯৪৮ সালে নব্যপ্রতিষ্ঠিত গভর্নমেন্ট ইনস্টিটিউট অব আর্ট (বর্তমান চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) এ ভর্তি হন। ফলে তিনি ছিলেন এই প্রতিষ্ঠানের প্রথম ব্যাচের ছাত্র। হামিদুর রহমান, ইমদাদ হোসেন, ইসমাইল, আবদুল কাদের তার সহপাঠী ছিলেন। ১৯৫৩ সালে তিনি প্রথম বিভাগে স্নাতক সম্মান লাভ করেন এবং একই বছর ইতালি সরকারের বৃত্তি নিয়ে তিন বছরের জন্য ফ্লোরেন্সের আকাদেমি দেল বেল্লে আর্তে-এ উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে যান।
আমিনুল ১৯৫৬ সালে ইতালি থেকে দেশে এসে ঢাকা আর্ট কলেজের শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। এই প্রতিষ্ঠানে তিনি প্রথম সরকারি গেজেটভুক্ত শিক্ষক। ১৯৭৮ সালে তিনি আর্ট কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৩ সালে নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই তিনি শিক্ষকতা থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেন।
ঢাকার বিভিন্ন স্থানে আমিনুল ইসলামের করা ম্যুরালসমূহ হল: বাংলাদেশ ব্যাংকের পুরাতন ভবনের অভ্যন্তরের দেয়াল (১৯৬৮), ওসমানী হলের সামনের দেয়ালে নির্মিত মোজাইক ম্যুরাল (১৯৮৪), মতিঝিলে অবস্থিত জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের প্রবেশমুখে ২০ী২০ ফুট আয়তনের ম্যুরাল (১৯৮৬), বাংলাদেশ ব্যাংকের বত্রিশ তলা ভবনের ললাটে উৎকীর্ণ ৮৪ী১৫.১ ফুট আয়তনের ম্যুরাল (১৯৯৬)
আমিনুল ইসলাম ২০১১ সালের ৮ জুলাই বার্ধক্যজনিত কারণে ঢাকার গুলশান-২ তার নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জুমার নামাজের পর তার জানাজার পর তাকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়। সূত্র : বাংলাপিডিয়া