ইদানীং তাল মিলাতে পারছিনা, রটনার সাথে রচনার তথা ঘটনার সাথে লিখার। লাইসেন্স পেলাম সপ্তায় একটা ঘটনা ঘটছে দশটা, তাল মিলবে কেমনে? ফলে যা লিখি তা’ই বাসী হয়ে যায়, কারণ লিখা ছাপা হতে হতে আরো দশটা ঘটনা ঘটে যায়। তাই লেটেস্ট নিউজ সাপ্লাই করতেই পারছিনা, সব হয়ে যায় বেকডেটেড। ইদানীং প্রতিটি লিখাই লেখি এক মাস আগে বের হয় এক মাস পর। কারণ সিরিয়াল মেনটেইন, ধারাবাহিকতা রক্ষা, এটা করতে গিয়ে তাল রাখতে পারছিনা। অর্থাৎ যুগের সাথে তাল মিলাতে পারি না আরকি, সব বেতাল হয়ে যায় ফলে ঘটনায় খালি তালগোল পাকিয়ে ফেলি। জুতা আবিষ্কার কবিতায় হবু রাজা গবু মন্ত্রীকে ডেকে বলেন, ‘শুন গবু, আমার মাটি লাগায় মোরে মাটি, রাজ্যে আমার একি অনাসৃষ্টি!’ অর্থাৎ হবু হলেন দেশের রাজা, তাঁরই দেশের মলিনধূলা তাঁর পায়ে মাটি লাগাবেÑ এটি সরাসরি একটা অনাচার না?আপনারা কি বলেন?এ কথাটাই হবু রাজা সারারাত শুয়ে চিন্তা করেছিলেন। স্বাভাবিক, চিন্তা করার কথা, ঠিক আমিও তেমন সারারাত শুয়ে চিন্তা করছি, ‘আমার সরকার মোরে করছে গ্রেফতার রাজ্যে আবার একি হচ্ছে অনাচার!’ মাটি, কাটি সরা-ই-তে বুলডোজারের চাইতে আমি এক্সপার্ট (হানিফ সংকেত), সেই মাটি আমার পায়ে লাগাবে আবার মাটি, সহ্য করি কি করি এটি? ঠিক তেমনি মারি, ধরি, লড়িতে িি চ্যাম্পিয়নের (রেসলিং) চাইতে আমি এক্সপার্ট সেই আমি কত কষ্ট করেছি সরকার ক্ষমতায় আনতে। আজকে সেই সরকার আমাকে করছে গ্রেফতার, সহি কেমনে?আমার ছাও আমার খাও আমারে-ই কয় ম্যাও? আজি ছাড়িব না তারে,মারি অরি পারি যে কৌশলে, ছাড় দ্বার যাব অস্ত্রাগারে। পাঠাইব রামানুজে শমন-ভবনে, লঙ্কার কলঙ্ক আজি ভঞ্জিব আহবে। ঠিক তেমন পাঠাইব সরকারানুজে শমন-ভবনে, দলের কলঙ্ক আজি ভঞ্জিব আহবেÑ সরকারের অনুজকে যমালয়ে পাঠাইব আজ যুদ্ধ করিয়া দলের কলঙ্ক ঘুচাইব।
আশ্চর্য, ইচ্ছা হয় আমি ক্যাসিনো চালাব, আবার নয় এভেনিউ বানাব। মনে কয় জুয়া খেলব নয় ভুয়া মরাব সরকারের কি দরকার আমাকে করিতে গ্রেফতার? আমি চিনেছি আমারে সব আমি করিব ছারখার, সহিব না এসব কখনো বারবার। না, প্রথম দিকে একটু তর্জন-গর্জন হয়েছিল আরকি, তারপর তো সবাই দেখি কোঁতা মেরে গেছে। আর আওয়াজ-টাওয়াজ নাই সবাই কেমন যেন, চাচা আপন জান বাঁচাÑ কৌশল অবলম্বন করল দেখলাম আরকি। মাগো মা কি কাÐ? বগুড়ায় টাকা দেখলাম পুকুরে ফেলেছে, একটা দুটা না মনে হচ্ছিল পুরা এক ট্রাক! তা’ও আবার আস্ত না, কেটে টুকরা টুকরা করে ফেলেছে, যে সে টুকরা না, একদম কুচিকুচি করে ফেলেছে! ভাবছি কিভাবে করল এ কাম, কেমনে করল এমন কুচিকুচি? কি বেøন্ডার মেশিনে দিয়ে করল, না স’মিলে নিয়ে করেছে, নাকি ধান মাড়াইয়ের কলে করল তা আল্লাহই জানেন। কে করল কেন করল নেহি মালুম, তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে তারাই করেছে সেই কাজ। তাদের বাতিল নোটগুলি তারা মেশিনে কেটে ফেলে দিয়েছে, হক হে, অধিকার আছে। তাদের নোট তারা যা খুশী তা করবে, কিন্তু কথা হলো অচল নোট কতল করতে ব্যাংক এই সেনসিটিভ মুহূর্তটাকে কেন বেছে নিল?তাছাড়া আগে কখনো তারা একাজ করে নাই, অচল কিংবা নকল নোট অনল দিয়ে করে বিকল। ফলে নিন্দুক কি আর ছাড়ে? কুৎসা তো রটবেই, যখন সবাই টাকা সরাতে ব্যস্ত তখন তারা কুচাতে ন্যস্ত।
রিজার্ভ হ্যাক, সোনা ট্যাগ, ইত্যাদি নিয়ে জনমনে জমেছে প্যাঁক, এখন এলো আবার কাটা টাকার ব্যাগ ফলে শুরু তো হবেই র্যাগ। কানাই তুমি খের খেলাও কেনে রঙে রঙিলা কানাই। রঙে রঙিলা বাংলাদেশ ব্যাংকও দেখি চরম সময় পরম খের খেলায়। সোনা মোনা হওয়ার কারণ নাকি ভাষা বিভেদ অর্থাৎ বাংলার ৪০ ইংরেজিতে ৮০। তাহলে ৪ হাজার ৮ হাজার, বাহ্ কি চমৎকার দারুণ এক আবিষ্কার। মোনা = অগ্রভাগস্থিত লৌহদÐ। বলে না গিবতকারী শয়তানের ভাই, আসলে তাই। এখন তারা বলছে বাংলাদেশ ব্যাংক কাকে বা কি আড়াল করছে?মনে তো হচ্ছে সর্ষের ভেতরই ভুত। কি বলব, ভাল কাজ করাই ভাল না।
আসলে নিন্দুকের কাজ নিন্দা করা কুকুরের কাজ কামড় দেয়া, সেসবে মাথা দিয়ে লাভ নাই।তাই তো কবি বলেছেন, কুকুরের কাজ কুকুর করেছে কামড় দিয়েছে পায়, তাই বলে কিরে কুকুররে কামড়ানো মানুষের শোভা পায়? কিন্তু সমস্যায় পড়ে যাচ্ছি হুইপ আর মেয়রের কথায়। আমাদের চট্টগ্রামের ছেলে জাতীয় সংসদের সম্মানিত হুইপ বললেন, জুয়া ছাড়া ক্লাব চলবে না, আর জুয়া না থাকলে ছেলেরা ছিনতাই করবে। আবার চট্টগ্রামের মেযর ফতোয়া জারি করলেন; জুয়া সংবিধানে নাই, জুয়া ইসলামে নাই, জুয়া হারাম। ওমা একি কথা? হুইপ বলেন জুয়া আরাম, মেয়র বলেন জুয়া হারাম, আমাদের তো শুরু হল ব্যারাম। কারণ কার কথা বিশ্বাস করব, দুজনই জ্ঞানী ফলে আমি হয়ে গেলাম অজ্ঞান। ঐদিকে আমাদের আরেক চট্টগ্রামের সন্তান, তথ্য নিয়ে তাঁর কাজকারবার, তিনি খালি নতুন নতুন সব তথ্য দেন। তিনি আবার সব কিছুতে খালি বিএনপি কানেকশন খুঁজে পান, জুয়া-ক্যাসিনোতে বিএনপি কানেকশন, শামীম-স¤্রাট বিএনপির লোক, গুটি-ইয়াবা বিএনপি সবার বাবা। র্যাব-পুলিশের অভিযানে এখন যারা ধরা পড়ছে সব বিএনপির হাবা। যাক ভাল হল আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন, না হলে কার সাথে না কার সাথে মিশে কোথায় না কোথায় আবার ফেঁসে যেতাম।তবে তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের সাথে যুবলীগ চেয়ারম্যানের কথার মিল নেই।
আবার চেয়ারম্যানের সাথে দেখি হুইপ সাহেবের কথার মিল আছে; ‘বিরাজনৈতিকী করণ করার জন্য এসব হচ্ছে, সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা চলছে। এতদিন কোথায় ছিলেন, এতদিন কি আঙ্গুল চুষছিলেন? জুয়া না থাকলে ছেলেরা ছিনতাই করবে।’ মাশাল্লাহ্ কি হুঙ্কার, প্রথম প্রথম কি ফুঁসা ফোঁসছিলেন মনে হল কিং কোবরা। তারপর দেখি ফস করে ফুস হয়ে গেল, স্বর নেমে গেল, এখন বলছে যারা ধরা পড়ছে তারা আমাদের লোক না, সবাই অনুপ্রবেশকারী। কিন্তু সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া হুইপপুত্রের ‘প্যান্ট খুলে নিবেন’ অডিওতে শুনা গেল কে একজন নেতা তাঁর পিতাকে অনুপ্রবেশকারী আখ্যায়িত করেছেন। নেতা বলছেন হুইপ সাহেব নাকি কোথা কোথা ঘুরে কি কি করে শেষে এখানে এসে জুটেছেন।
লা হাওলা ওয়া লাÑবড় লোকের বিরাট কারবার সেসব চর্চা করে আমরা আদার ব্যাপারী জাহাজের খবর নিয়ে লাভ নাই। জুতা আবিষ্কার কবিতায় অনেক পঙ্কতির মধ্যে একটি হল; করিতে ধূলা দূর, জগৎ করিলে ধূলায় ভরপুর। কথায় বলে পুরীষস্তুপ যত ঘোঁটিবে ততই দুর্গন্ধ বেশী নির্গত হইবে। ঠিক তেমন উনাদের নিজেদেরঘুঁটাঘুঁটিতে জগৎ ধূলায় ভরপুর আরো বেশী হচ্ছে। কি আশ্চর্য, যে দেশে মানুষের নুন আনতে পান্তা ফুরায় সে দেশে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী কাজ পাইয়ে দিতে ক্যাসিনো শামীমের কাছ থেকে ১১০০ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন! আর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী নিয়েছেন ৪০০ কোটি। কি হচ্ছে এসব দেশে? ফরিদপুর মেডিকেলে পর্দার দাম দেখলাম সাড়ে ৩৭ লক্ষ টাকা, এখন আবার রংপুর মেডিকেলে ডেন্টাল চেয়ারের দাম সাড়ে ৫৬ লক্ষ টাকা। অথচ মাত্র ২০ হাজার টাকায় সে চেয়ার কিনতে পাওয়া যায়।
অসুবিধা নাই প্রবাদ আছে, সরকারি মাল দরিয়াতে ঢাল। সম্প্রতি পত্রিকায় দেখছি ক্যাসিনো, জুয়াস¤্রাটদের টাকা, সোনা আর অস্ত্রের মেলা। চট্টগ্রাম শহরের এক ছিঁচকে নেতা, সেও নাকি মাসে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা আয় করে। তার বাহিনী নাকি কিশোর গ্যাং, সে কিশোরদের বড় ভাই, তাদের দিয়ে সে চকবাজার, পাঁচলাইশ এলাকায় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি সব করায়। একসময় ভাত খেতে ভাত পেত না, এখন কোটিপতি, আমাদের চোখের দেখা। শহরজুড়ে দেখি পুঁচকে ছেলেদের পোস্টার, এ টাকা তারা কোথায় পায়? দেশে দেখছি কৌন বনে গা ক্রোরপতি শুরু হয়ে গেল। সরকারি ধান্দাবাজ, সরকারি চাকুরেরা যদি বিনাশ্রমে রাতারাতি হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যেতে পারে। আমরা তাহলে কি দোষ করলাম?আমরাও তো এদেশের নাগরিক, আমরা এত কষ্টে ব্যবসা করে, চাকরি করে ভালভাবে একটু চলতে পারি না। আর তারা অস্ত্র দু-চারটা জোগাড় করে টাকার পাহাড়ে ঘুমাচ্ছে। আশ্চর্যÑ যে শুধু দুই জনকে দেড় হাজার কোটি টাকা ঘুষ দেয় তার আয় কত এবং এ আয় সে করে কিভাবে? যে শুধু একজনের কাছ থেকে ১১০০ কোটিটাকা ঘুষ নেয় সে কত হাজার কোটি টাকার মালিক? র্যাব অভিযানে শুধু স্বর্ণ আর টাকা বেরুচ্ছে, এ অর্থ আমাদের বিবেক মাটি করছে। সে জন্যে আজ আমাদের চরিত্রে মাটির প্রলেপ পড়ছে।
আমাদের দেশে অনিয়ম, দুর্নীতির শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত, এখানে আমাদের বাজেটের বড় ভূমিকা রয়েছে। সাড়ে পাঁচ লক্ষ কোটি টাকার বাজেট আমাদের কোন দরকার নাই, বিষয়টি নিয়ে আলোকপাত করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কলেবর সংকট তাই অন্যদিন করব এবং বিস্তারিত করব। জানা গেছে ঐ প্রকৌশলীরাই কেবল প্রতি টেন্ডারের দশ শতাংশ ঘুষ খায়। তাদের উপরে নিচে আরো রয়েছে না, তারা কত খায়? তাহলে বাজেটের অর্ধেক তো খালি ঘুষই চলে যায়, তারপর দলের একান্ত অনুগত নিবেদিত প্রাণরা আছে না? তাহলে বাজেটের আর থাকে কত?‘মলিন ধূলা লাগিবে কেন পায়? আমার মাটি লাগায় মোরে মাটি।’ দেশটা হল দুর্নীতির ঘাঁটি, বিশাল বাজেট আগুনে দিচ্ছে কাঠি, তাতে মোদের বিবেক হচ্ছে মাটি। ‘নিজের দুটি চরণ ঢাকো তবে ধরণী আর ঢাকিতে নাহি হবে।’ ঠিক তেমন, আগে মানুষ জোগাড় করো খাঁটি তবে দূর হবে দুর্নীতির ঘাঁটি। এখন খাঁটি মানুষ কোথায় পাব, সবাই তো লোভী, লোভী খাঁটি হয় কেমনে? অতএব মাটি ছাড়া আমাদের কপালে আর কিছু নাহি। আল্লাহ্ তুমি আমাদের একজন নির্লোভ মানুষ দান কর, আমিন।
লেখক : কলামিস্ট