পূর্বদেশ ডেস্ক
২০১৩ সালে গুম হন হাসিনা বেগমের ছেলে তরিকুল ইসলাম। এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ ১১ বছর। ছেলের খোঁজে দ্বারে দ্বারে ঘুরেও সন্ধান পাননি। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হাসিনা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘আমার পরিচয়ই হয়ে গেছে গুম হওয়া ছেলের মা’।
গতকাল শুক্রবার সকালে বিভিন্ন সময়ে নিখোঁজ-গুমের শিকার ব্যক্তিদের খোঁজে শহীদ মিনারে জড়ো হয়েছিলেন হাসিনা বেগমের মতো ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুম হওয়া স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’র মানববন্ধন ও সমাবেশে আপনজনের খোঁজ চেয়েছেন তারা। খবর বাংলানিউজের
এসময় গুম হওয়া স্বজনদের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন কেউ কেউ। গুম হওয়া মাজহারুল ইসলামের বোন লাবণী আক্তার বলেন, ২০১২ সালে আমার ভাইকে গুম করা হয়। ভাইয়ের খোঁজ চেয়ে তিনি বলেন, আমরাও মানুষ। আমাদের মধ্যেও আবেগ আছে, প্রিয়জনের প্রতি ভালোবাসা আছে। আমাদের কষ্টের কথাটুকু বলতে দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, শোনা যাচ্ছে বিভিন্ন বাহিনীর ‘আয়নাঘর’ নামের অনেক বন্দিশালা আছে। যেখানে যত আয়নাঘর আছে, সব খুলে দিয়ে বন্দীদের মুক্তি দেওয়ার দাবি জানাই।
২০১৪ সালে গুম হওয়া আবদুল কাদেরের মা আয়েশা আলী বলেন, ‘সবাই বলছে, দেশ নতুন করে স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু আমার জন্য এখনো দেশ স্বাধীন হয়নি। আমি আমার ছেলেকে ফিরে পাইনি। জানি না, সে বেঁচে আছে কি না’।
সৈয়দা শাম্মি সুলতানা জানান, ২০১৩ সালে তার স্বামী খালেদ হাসানকে তুলে নেওয়ার পর থেকে শুধু কান্না নিয়েই দিন কাটছে তার সংসারে। তিনি তার স্বামীর খোঁজ চান।
রিনা আলম বলেন, ২০১৫ সালে আমার স্বামী নূর আলমকে তুলে নেওয়া হয়। আমার স্বামী যদি মারাও গিয়ে থাকেন, তাহলে অন্তত তার কবরটি কোথায় আছে, তা জানতে পারলে সন্তানদের নিয়ে কবর জিয়ারত করতে পারতাম।
মানববন্ধনে ‘মায়ের ডাক’র সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম জানান, ২০১৩ সালে তার ভাইকে গুম করা হয়েছে। তখন থেকেই গুম হওয়া স্বজনদের নিয়ে এই সংগঠন গড়ে তোলা হয়। এত দিন (শেখ হাসিনার শাসনামলে) তারা তাদের বেদনার কথা বলতে পারতেন না।
গুম করে বন্দী রাখার ‘আয়নাঘর’ ভেঙে ফেলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণের অর্থে কোনো বাহিনী যেন কোনো বন্দিশালা গড়ে তুলতে না পারে, সে ব্যবস্থা করতে হবে। গুম হওয়া মানুষের মুক্তি ও তাদের বিষয়ে সম্পূর্ণ তথ্য শ্বেতপত্র আকারে প্রকাশ করতে হবে।
মানববন্ধনে আরও কথা বলেন নূরুল ইসলাম, মো. শহীদুল্লাহ, রেহেনা আক্তার, সাঈদুল ইসলামসহ অনেকে। গুম অবস্থা থেকে সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া মাইকেল চাকমা, সাবেক কূটনীতিক মারুফ জামান, সংগীতশিল্পী রানা তাদের গুম হওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন।
সমাবেশে সংহতি জানিয়ে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, এবি পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক তাজুল ইসলাম, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় নেতা ফয়জুল হাকিম, মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের জ্যেষ্ঠ গবেষক তাসকিন ফহমিনা, আইনজীবী সারা হোসেন, সংগীতশিল্পী সায়ান, সাংবাদিক সাঈদা গুলরুখ প্রমুখ বক্তব্য দেন।