আমাদের সংস্কারের গল্প বলার দরকার নেই

1

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আমাদেরকে সংস্কারের গল্প বলার দরকার নেই। এই গল্প যারা নতুন নতুন সংস্কার শিখেছে, তাদের মধ্যে আর আপনাদের মধ্যে রেখে দিন। ৩১ দফা সংস্কার আকাশ থেকে পড়েনি। এটি প্রণয়নের পেছনে অনেক বিতর্ক, আলোচনা ও প্রস্তাবনা এসেছে। সকলের ঐক্যমতের ভিত্তিতেই আমরা ৩১ দফা প্রণয়ন করেছি। বাংলাদেশের মানুষের আগামী দিনের পরিবর্তনের বার্তা এই ৩১ দফার মাধ্যমেই দেওয়া হয়েছে। এই বার্তা নিয়ে আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় ঘুরে বেড়াচ্ছি এবং সংস্কারের জন্য আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তিনি গতকাল শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেসিয়াম চত্বরে অমর একুশে বইমেলার মঞ্চে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও বই মেলা উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব প্রকাশক শাহাবুদ্দিন হাসান বাবুর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহব্বায়ক এরশাদ উল্লাহ, কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহব্বায়ক ইদ্রিছ মিয়া, সদস্য সচিব লায়ন হেলাল উদ্দিন, স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।
আমীর খসরু বলেন, কোনো ব্যক্তির ভিশন বা কোনো গোষ্ঠীর মিশনের ভিত্তিতে সংস্কার হবে না। বাংলাদেশের জনগণের মতামতের ভিত্তিতেই সংস্কার হবে। ৩১ দফার জন্য আমাদের জনগণের কাছে যেতে হবে। জনগণ যখন এসব দফার প্রতি সমর্থন জানিয়ে ভোট দেবে, তখন আমরা এটি বাস্তবায়ন করতে পারব। বিএনপির ৩১ দফা ও অন্যান্য সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে তিনি বলেন, এখন যারা সংস্কারের কথা বলেন, তাদের কাছে কোনো ম্যান্ডেট আছে? তাদের পক্ষে কার সমর্থন আছে? তাদেরকে কে বলেছে? হ্যাঁ, প্রণয়ন করুন, কমিশন হয়েছে, ভালো কথা। এগুলো সব আমরা আগামী সংসদে প্রস্তাব আকারে উপস্থাপন করবো। আপনারা কষ্ট করে করেছেন, অনেক ধন্যবাদ। এগুলো আমরা আগামী সংসদে পেশ করব। ৩১ দফা সংসদে আলোচনা হবে। আমরা বলেছি, হয়ে যাবে, তা নয়, সংসদে আলোচনা হবে। অন্য কোনো দলের যদি কোনো প্রস্তাব থাকে, সেটাও সংসদে উপস্থাপন করুক। কারণ, আমরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে চাই। জনগণের চিন্তার প্রতিফলন রাষ্ট্র পরিচালনায় ও দৈনন্দিন জীবনে ঘটাতে হবে।
আমীর খসরু বলেন, বইমেলা জিনিসটা আমি ভুলে গিয়েছি। কারণ, বিগত দিনে বইমেলা বলতে যা বোঝানো হতো, তা হলো, একটি দলের প্রতিষ্ঠাতা, তার মেয়ে, তার পরিবার, তাদের চিন্তা ভাবনা ও দর্শন প্রতিফলিত হতো সেই বইমেলায়। এমনকি স্কুলের শিক্ষার্থীদেরও তাদের পরিবারের দর্শন ও চিন্তা ভাবনা কারিকুলামের মাধ্যমে পড়তে, শিখতে বাধ্য করা হয়েছে। কোনো বিশেষ দর্শন, চিন্তা বা পরিবার যেন বাংলাদেশের মনোজগতে এককভাবে প্রবেশ করতে না পারে, সেটা আমরা আগামী দিনে নিশ্চিত করবো।
ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, চসিক বাংলাদেশের একমাত্র সিটি করপোরেশন যেখানে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রায় ১০০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আমি মনে করি, এই বিপুল শিক্ষা কাঠামোকে কাজে লাগিয়ে বাংলা ভাষার প্রসারে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব। আমরা চাই সঠিকভাবে বাংলা অনুবাদ হোক। নগরীতে বিভিন্ন ইংরেজি সাইনবোর্ড ও দিকনির্দেশনামূলক চিহ্নের বাংলা অনুবাদ করতে এবং ভাষার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে সিটি করপোরেশন সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে। নগরীর সাইনবোর্ড ও গুরত্বপূর্ণ স্থাপনার ইংরেজি লেখাগুলোর সঠিক বাংলা অনুবাদ নিশ্চিত করতে একটি বিশেষ টিম গঠন করার ঘোষণা দিয়ে মেয়র বলেন, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার পরামর্শে এই উদ্যোগ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমি আসলে উনার কথার সূত্র ধরে এটাই বলছি যে আমরা এ ধরনের একটা টিম তৈরি করতে চাই, যেটা সাইনবোর্ডগুলোর অনুবাদ করবে।
আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে অনেক অগ্রসর। চসিকের মতো এতটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সারা বাংলাদেশের আর কোথাও গয়ে ওঠেনি। সেজন্য আমি সিলেটবাসীর পক্ষ থেকে চসিকের সকল কর্মকর্তাকে ধন্যবাদ জানাই। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে বাচ্চাদেরকে মিথ্যা ও ভুল তথ্য দিয়ে অন্ধকারে রেখেছিল। তাই দেশের প্রকৃত ইতিহাস লেখকদের লেখনীর মাধ্যমে তুলে আনতে হবে।
এতে উপস্থিত অন্যদের মধ্যে ছিলেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহব্বায়ক এম এ আজিজ, এডভোকেট আব্দুস সাত্তার, এস এম সাইফুল আলম, হারুন জামান, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, আহব্বায়ক কমিটির সদস্য জয়নাল আবেদীন জিয়া, আবুল হাশেম, ইস্কান্দর মির্জা, মো. সালাউদ্দিন, মো. কামরুল ইসলাম, মশিউল আলম স্বপন, জাফর আহমেদ, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান, বিভাগীয় শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক শেখ নুরুল্লাহ বাহার, মহানগর মহিলা দলের সভাপতি মনোয়ারা বেগম মনি, সাধারণ সম্পাদক জেলি চৌধুরী, জাসাসের আহব্বায়ক এম এ মুসা বাবলু প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি