প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের অনেক দূর যেতে হবে। উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ব, এটাই প্রতিজ্ঞা। গতকাল রবিবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে সারাবিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধানরা শুভেচ্ছা দিয়েছেন। এটা আমাদের সম্মানের, এটাই আমাদের সার্থকতা। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে পাঁচ দেশের প্রধান এসেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও ২৭টি প্রতিষ্ঠান থেকে শুভেচ্ছাবার্তা আমরা পেয়েছি। এটা বাংলাদেশের জনগণের জন্য অত্যন্ত সম্মানের। এটাই আমাদের সার্থকতা।
করোনা ভাইরাস মহামারীর নতুন যে ধাক্কা আসছে, তা মোকাবেলার প্রস্তুতি নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, করোনা ভাইরাস ‘সাময়িকভাবে কিছু বাধা’ সৃষ্টি করলেও তাতে থেমে না গিয়ে সরকার দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ অব্যাহত রেখেছে।
সেই ক্ষেত্রে আমি আমার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী যে যেখানে আছেন, তাদেরকে বলব এবং আওয়ামী লীগ ও প্রতিটি সহযোগী সংগঠন যখন করোনা ভাইরাসের প্রচন্ড মহামারির আকার ধারণ করল, সেই সময় যেমন মানুষের পাশে আপনারা দাঁড়িয়েছিলেন, আবারও সেই করোনার একটা ধাক্কা আমরা দেখতে পাচ্ছি আসছে।
এখন আমাদের সবাইকে প্রস্তুতি নিতে হবে যে করোনা ভাইরাসে যেন মানুষের কষ্ট না হয়। একটা রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের পাশে দাঁড়ানো এটা আমাদের কর্তব্য।
গত জানুয়ারি ও ফেব্রূয়ারি মাসে দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হার কমে এসেছিল; কিন্তু মার্চের শুরু থেকে তা আবার দ্রুত বাড়ছে। খবর বিডিনিউজের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, রোববার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৩ হাজার ৯০৮ জনের মধ্যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে; মৃত্যু হয়েছে আরও ৩৫ জনের।
দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৯৫ হাজার ৭১৪ জনে। তাদের ৮ হাজার ৯০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঠিক আগের মতনই আপনাদের এখন থেকে প্রস্ততি নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। সেই সাথে সাথে কতগুলো নির্দেশনা যা আমরা আগে দিয়েছিলাম আবারও পুনর্ব্যক্ত করব, সেইগুলো আবার পালন করার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।
কারণ সরকারের পক্ষ থেকে আমরা যেমন করব, কিন্তু সাথে সাথে আমাদের রাজনৈতিক দল- যে দল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হাতে গড়া, তিনি ১৯৫৬ সালে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদকের পদে থেকে দলকে সংগঠিত করেছিলেন। তার চিন্তা ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
কাজেই যে দল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছে, সেই দলের অনেক দায়িত্ব কর্তব্য রয়েছে এদেশের মানুষের প্রতি। কাজেই আবার আমাদেরকে সেইভাবেই মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।
কেউ যেন মাস্ক ছাড়া ঘরের বাইরে না যায়, সেই নির্দেশ দিয়ে মহামারির মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে উন্মুক্ত জায়গায় দলীয় কর্মসূচি পালনের উপর জোর দেন শেখ হাসিনা।
মহামারির মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যদিও আমরা স্কুল খুলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়াতে ঠিক এখন না করে রোজার ঈদের পরে স্কুল-কলেজ-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেব।
বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে যা যা করণীয়, সরকার তা করবে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ভ্যাকসিন প্রদান কর্মসূচিও চলমান থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৭ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের ১০ দিনের অনুষ্ঠানমালা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সম্পন্ন করা হয়েছে।
এই আয়োজনে প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং, নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারী, শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে ও মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ যোগ দেওয়ায় তাদের ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। পাশপাশি যেসব রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠান শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছে, তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এসব শুভেচ্ছা বার্তা যে বাংলাদেশের জনগণের জন্য ‘অত্যন্ত সম্মানের’, সে কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, সব বার্তা সব আমরা শোনাতে পারিনি বা দেখাতে পারিনি, সেটা ছিল সময়ের অভাবে। কিন্তু আমাদের তরফ থেকেও আমাদের এই প্রচেষ্টা থাকবে যে এখন ডিজিটাল বাংলাদেশে আমরাই করেছি, কাজেই এই সমস্ত বার্তাগুলো আমাদের রক্ষিত আছে, এটা আমি দেব। এবং সেগুলো ধীরে ধীরে আমাদের তরফ থেকে আমাদের একেবারে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত প্রচার করতে হবে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ অনুষ্ঠানে দলের সভাপতিমÐলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, মো. আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ, হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেনসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
গণভবন প্রান্ত থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।











