‘ক্ষমা করো, ধৈর্য ধরো,/হউক সুন্দরতর/বিদায়ের ক্ষণ।’
ছোট্ট আছিয়া আর নেই। ইতিহাসের কালো ব্যানারে তার জন্মভূমি সোনার বাংলাকে একরাশ লজ্জা, ঘৃণা আর অভিশাপ লিখে দিয়ে ইহজগতের পাপাচারের গন্ধ থেকে নিজেকে মুক্ত করে পবিত্র ও শান্তির জগতে চলে গেলেন। আছিয়ার বিদায় হয়ত হয়েছে হৃদয় বিদারক, বাস্তবে তা হয়েছে সুন্দরতম। আধ্যাত্মিকতার ভাষায় বলা যায়, ‘শিশু আছিয়া মরিয়া বেঁচে গেছেন আর বাংলাদেশ নামক দেশটির বরং মৃত্যু হয়েছে’। আছিয়া বেঁচে থাকলে হয়ত এ সমাজ তাঁর দিকে একের পর এক ঢিল ছুড়ে মারত আর গোটা পরিবার ধুকে ধুকে নিঃশ্বেষ হতো। অতীতের অভিজ্ঞতা অন্তত তাই বলে। দীর্ঘ আটদিন অন্তত পাঁচটি হাসপাতালে চিকিৎসা হয়েছে, চিকিৎসকরা অন্তপ্রাণ চেষ্টা করেও আছিয়ার অন্তিমযাত্রাকে রুখতে পারে নি। সর্বশেষ তিনি গত বৃহস্পতিবার মহান আল্লাহর ইচ্ছায় মুক্তির অনন্তযাত্রায় পাড়ি জমিয়েছেন। ১ মার্চ আছিয়া মাগুরার বড় বোনের কাছে গিয়েছিলেন বেড়াতে। সেখানে বোনের শ্বশুরের লিপ্সার শিকার হন আছিয়া। ছোট্ট আছিয়া সেই যৌন নিপীড়ন আর সইতে পারে নি। নির্মমভাবে তাকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়। অবশেষে মাগুরা হাসপাতাল , ফরিদপুর হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল হয়ে সিএমএইচে শেষ নিঃম্বাস ত্রাগ করলেন ছোট্ট এ সোনামনিটা। আছিয়ার এ যাত্রায় সারা বাংলা কেঁদেছে। কেঁদেছে বিশ্বের মানবতাবাদী মানুষগুলো। শুধু কাঁদেনি মানুষ নামক একপ্রকার দানব, যারা নরপিচাশ; যাদের কাছে নিজের সন্তান, মা কিংবা সন্তানতুল্য মেয়ে, কিংবা ছেলের বউ কিছুই পরিচয় নেই। তারা কামুক, মানুষের দেহ শোষন করে। এ শোষণের সহযোগী আমাদের সমাজ, রাষ্ট্র। আছিয়ার নিষ্ঠুর অকাল যাত্রার দায় কী শুধু মাগুরার ঘৃণিত সেই ধর্ষক বা তার পরিবার? না, এর দায় আমাদের ঘুনেধরা সমাজের, রাষ্ট্রের। আমরা আছিয়ার মৃত্যুর শোকে যখন স্তব্ধ তখন আরেকজন হতভাগা পিতা তার মেয়ের ধর্ষণের মামালা করতে গিয়ে হত্যার স্বীকার হয়েছেন। যে সংবাদটি আছিয়ার মৃত্যু শোকে অনেকটা আড়ালে চলে গেছে। এভাবে দেশে কত শত আছিয়াকে অকালে প্রাণ দিতে হচ্ছে, কত মায়ের বুক খালি হচ্ছে। কত চোখের জলে বেদনার নহর বয়ে যাচ্ছে! আছিয়া আমরা ক্ষমা পাওয়া যোগ্য নয়, এরপরও তোমার কাছে আমরা ক্ষমা চাচ্ছি। আমরা লজ্জিত, আমরা দুঃখিত। আমরা রাষ্ট্র নামক এ যন্ত্রেও কাছে তোমাকে যারা হত্যা করেছে, তামার পবিত্র, নির্মল শরীরকে যারা ক্ষত বিক্ষত করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। রাষ্ট্র বলেছে দ্রæত শাস্তি দিবে-আমরা এ বাংলার জনগন সেই দিন পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকব। মহান আল্লাহ তোমাকে শান্তিতে রাখুক জান্নাতের শ্যামল সুন্দর উদ্যানে।