আবেদ হোসেন খান

1

আবেদ হোসেন খান, একজন বাংলাদেশী উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পী, সেতার বাদক ও সুরকার। তার জন্ম হয় উপমহাদেশের অন্যতম এক সঙ্গীত পরিবারে। তিনি ১৯৭৩ সালে ‘ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ সঙ্গীত নিকেতন’ প্রতিষ্ঠা করেন। সঙ্গীতে অবদানের জন্য তিনি ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত একুশে পদক লাভ করেন।
আবেদ হোসেন ১৯২৯ সালের ১ এপ্রিল তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামের এক সঙ্গীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ একজন বরেণ্য উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পী এবং মাতা উমার উন-নেসা খানম। তার চাচা ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ। ছয় ভাইবোনের মধ্যে মোবারক সর্বকনিষ্ঠ। তার বড় তিন বোন আম্বিয়া, কোহিনূর, ও রাজিয়া এবং ছোট দুই ভাই প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ বাহাদুর হোসেন খান এবং সঙ্গীত গবেষক ও লেখক মোবারক হোসেন খান।
পারিবারিক ঐতিহ্য অনুযায়ী ছেলেবেলা থেকে সঙ্গীত সাধনা করেছেন। দেশ বিভাগের পূর্ব থেকে তাঁর পিতার গান শিখানোর উদ্দেশ্যে কুমিল্লা জেলায় যাতায়াত ছিল এবং ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তাঁরা সপরিবারে সেখানে চলে যান। আবেদ সেখানে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে স্নাতক পাস করেন।
আবেদ হোসেন ১৯৫০ সালে বাংলাদেশ বেতারের নিজস্ব শিল্পী হিসেবে যোগ দেন। বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনে তাঁর সুরকৃত গান প্রচারিত হত। তিনি চলচ্চিত্রের সঙ্গীতও পরিচালনা করেন। তিনি কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন কাদির রচিত উপন্যাস নদী ও নারী অবলম্বনে নির্মিত নদী ও নারী চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করেন। তিনি ৩৬ বছর বাংলাদেশ বেতারে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং ১৯৮৬ সালে মুখ্য সঙ্গীত প্রযোজক পদে থাকাকালীন অবসর গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে চুক্তিভিত্তিতে আরো প্রায় ১০ বছর এই দায়িত্ব পালন করেন।
বাংলাদেশ বেতারে ফজল-এ-খোদা রচিত ও আবেদ হোসেন খান সুরারোপিত দেশাত্ববোধক গান ‘যে দেশেতে শাপলা শালুক ঝিলের জলে ভাসে’ অসম্ভব জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
আবেদ হোসেনের ৩ খন্ডে রচিত সুর-লহরী গ্রন্থটি সঙ্গীত বিষয়ের পাঠ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত। তিনি ঢাকা সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম। ১৯৭৩ সালে তিনি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে ‘ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ সঙ্গীত নিকেতন’ নামক সঙ্গীত একাডেমী প্রতিষ্ঠা করেন এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
আবেদ হোসেনের পুত্র শাহাদাত হোসেন খানও একজন গুনী সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব। তার দুই জমজ নাতনী আফসানা খান সেতার বাদক ও রুখসানা খান সরোদ বাদক।
আবেদ হোসেন ১৯৯৬ সালের ২৯ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। সূত্র : উইকিপিডিয়া