আবাসিক সংযোগের জন্য বেশি আবেদন পটিয়ায়

1

কাউছার আলম, পটিয়া

দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া, আনোয়ারা, কর্ণফুলী ও বোয়ালখালী অঞ্চলের শিল্পাঅঞ্চল এবং আবাসিক এলাকায় পানি সরবরাহ করতে চট্টগ্রাম ওয়াসা ‘ভান্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্প’ হাতে নিয়েছিল ৯ বছর আগে। বহু প্রত্যাশিত এই প্রকল্পটি এখন আলোর মুখ দেখেছে। দৃশ্যমান হচ্ছে প্রকল্পের কার্যক্রম। এর ফলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ১০ লাখ মানুষ পানি সংকট থেকে মুক্তি পাবেন। পাশাপাশি এসব এলাকার শিল্পাঞ্চলের পানির ঘাটতি মিটিয়ে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। প্রতিদিন ১৮০ মিলিয়ন লিটার পানি সরবরাহের সক্ষমতা তৈরির পাশাপাশি পানির গুণগত মান নিশ্চিত করা এবং অবৈধ সংযোগ রোধ করাও সম্ভব হবে। পানি বিতরণ নেটওয়ার্কের আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণ এবং পরিবেশবান্ধব ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত হবে বলে আশা প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের।
এদিকে চট্টগ্রাম ওয়াসা তাদের সেবা ডিজিটালাইজেশনের অংশ হিসেবে মোবাইল বিলিং অ্যাপ্লিকেশন চালু করেছে। ভান্ডালজুরি প্রকল্পের আওতায় এই অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে গ্রাহকরা তাৎক্ষণিকভাবে পানির বিল পরিশোধ করতে পারছেন এবং বিল সংক্রান্ত তথ্য পাচ্ছেন। এটি প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভ‚মিকা পালন করছে। তারই অংশ হিসেবে পটিয়ায় আবাসিক সংযোগ পেতে ইতোমধ্যে আবেদন করেছে ২ হাজার ৭৭৯ জন, তাদের মধ্য থেকে বাছাই করে ১ হাজার ৭১৯ জনের আবেদন গ্রহণ করে অনেকেই পানি সরবরাহের আওতায় আসছে। এ পর্যন্ত পটিয়ায় আবেদনের প্রেক্ষিতে ওয়াসার চাহিদা পূরণ করে আবাসিক সংযোগ পেয়েছে ১ হাজার ৪৭০ জন গ্রাহক। বোয়ালখালী উপজেলায় আবাসিক পর্যায়ে আবেদন করেছে ৩৭০ জন, তার বিপরীতে ওয়াসা বাছাই করে ২০৮ জনের আবেদন গ্রহণ করেছে। তাদের মধ্যে ওয়াসার পরিশোধিত বিল দিয়ে সংযোগ নিয়ে পানি সুবিধা পাবেন ১৬৫ জন গ্রাহক। কর্ণফুলী উপজেলা যদিও ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। কিন্তু আবেদন করেছেন ৩৫২ জন গ্রাহক। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ওয়াসা চাহিদার নোট দিয়েছে ৮৪ জনের জন্য। তাদের মধ্যে ওয়াসার পরিশোধিত গ্রাহকের চাহিদার নোট দিয়েছে ৪১ জনের। এ তিন উপজেলার মধ্যে বর্তমানে পটিয়ায় আবাসিক পর্যায়ে ১ হাজার ১৪২ জন গ্রাহক ওয়াসার পানি পাচ্ছে। বোয়ালখালীতে পাচ্ছে ১২০ জন গ্রাহক। কর্ণফুলী উপজেলায়ও সংযোগ দিতে কাজ করছে ওয়াসা। আর ইন্ডাস্ট্রিয়াল সংযোগ নিতে পটিয়ার বনফুল আর আনোয়ারার সিইউএফএল কে টাকা জমা দেয়ার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। তারা টাকা জমা দিলে তাদেরকেও সংযোগ দেয়া হবে।
চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, ওয়াসার ভান্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার প্রকল্প উৎপাদনে গেছে। এতে প্রতিদিন ৬ কোটি লিটার পানি সরবরাহের মাধ্যমে দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়াসহ আরো তিন উপজেলার এবং বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে কয়েক লাখ লাখ মানুষের পানি সংকট নিরসনে অবদান রাখছে। কর্ণফুলীর নদীর দক্ষিণ তীরে গড়ে ওঠা বিভিন্ন আবাসিক এলাকা, সরকারি ও বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠান, কোরিয়ান ইপিজেডসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপণায় পানি সরবরাহের জন্য এই প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে। বোয়ালখালীর জ্যৈষ্ঠপুরা গ্রামের ভান্ডালজুড়ি খালের পাড়ে এই প্রকল্পের শোধনাগার তৈরি করা হয়েছে। সেখান থেকে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত শিল্পকারখানা ও আবাসিক এলাকায় পানি যাচ্ছে। এ প্রকল্প থেকে প্রতিদিন ৬ কোটি লিটার পানি উৎপাদন হচ্ছে। প্রকল্পের প্রথম সংযোগ দেওয়া হয় কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ের কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইকোনমিক জোন, সিইউএফএল ও পটিয়ার আবাসিক এলাকাসহ অন্যান্য শিল্পাঞ্চলগুলোতে।
এদিকে, কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে রাঙ্গুনিয়া ও বোয়ালখালী উপজেলার সীমান্তবর্তী ৪১ দশমিক দুই ছয় একর জায়গাজুড়ে স্থাপিত এই প্রকল্প থেকে ৪ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হবে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ১৩টি বাণিজ্যিক সংযোগে এবং ২ কোটি লিটার পানি চার উপজেলার আবাসিক গ্রাহকদের জন্য বরাদ্দ থাকবে। তবে আনোয়ারা উপজেলায় সরকারি-বেসরকারি শিল্পগুলো আন্ডারগ্রাউন্ড পানি ব্যবহারে পরিবেশের ক্ষতি করছে, কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে বলে জানা গেছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, এক দফা সময় বৃদ্ধির পর ২০২৩ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে আরো ৬ মাস বৃদ্ধি করে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়। শেষ পর্যন্ত গত ডিসেম্বরেও কাজ শেষ করে উৎপাদনে যেতে পারেনি। চলতি বছরে আরো ৬ মাস সময় বৃদ্ধি করার পর তার আগ থেকেই এই প্রকল্প থেকে পানি উৎপাদন শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক।
পটিয়া আনোয়ারা ও কর্ণফুলীর শিল্পাঞ্চলে পানি সংকট দূর করার টার্গেট নিয়ে এই প্রকল্প নেওয়া হয়। প্রল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ১০ লাখ মানুষকে সুপেয় পানির আওতায় আনার পরিকল্পনা সংস্থাটির। এ প্রকল্পের মাধ্যমে পানি সরবরাহের জন্য পটিয়া বাইপাস এলাকায় ৫ একর জায়গায় এবং আনোয়ারার দৌলতপুর মৌজায় ২ দশমিক ৯৪ একর জায়গায় দু’টি জলাধার নির্মাণ করা হয়েছে। শেষ হয়েছে ১১৩ কিলোমিটার পাইপ লাইনের কাজও। বোয়ালখালীর ভান্ডালজুড়ি থেকে পানির পাইপলাইন বোয়ালখালী মিলিটারি পুলের কাছে এসে দুই ভাগ হয়েছে। একটি অংশ চলে গেছে আহলা দরবার শরীফ হয়ে পটিয়া পৌরসভায়। অপর অংশটি শিকলবাহা ও মইজ্জ্যারটেক হয়ে কর্ণফুলী ও আনোয়ারায় চলে গেছে। কর্ণফুলী ও আনোয়ারা অংশে যাওয়া পাইপলাইনটি কালারপুল ব্রিজের কাছে গিয়ে ক্রস কালভার্টের কাজ করার জন্য কিছু দিন আটকে থাকার পর শেষ করা হয়েছে। বাকি সব পাইপলাইনের কাজও শেষ হয়েছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা বলেন, প্রকল্পের কমিশনিং এবং বিতরণ লাইনের কাজ দুটি রিজার্ভারের নির্মাণও শেষ করে আমরা ইতোমধ্যে উৎপাদনে গেছি। এ মেগা প্রকল্পের পানির সুবিধা পাচ্ছে প্রান্তিক পর্যায়ের গ্রাহকের পাশাপাশি শিল্পাঞ্চলগুলোও।
প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. মাহবুবুল আলম বলেন, দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া ও আনোয়ারার শিল্পাঞ্চলে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে এ প্রকল্প থেকে। প্রাথমিকভাবে ৮০ শতাংশ বাণিজ্যিক এবং ২০ শতাংশ আবাসিকে পানি সরবরাহ করা হবে। শিল্পকারখানাগুলো পানির অভাবে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির যে সমস্যায় ভুগছিল, তা নিরসন হবে। ফলে উৎপাদন ক্ষমতাও বাড়বে। তবে পটিয়াতে সবচেয়ে বেশি গ্রাহকের আবেদন জমা পড়েছে। তাদের মধ্যে অনেক ডিমান্ড নোটের টাকা জমা হয়নি এখনো পর্যন্ত।