সীমান্তের ৫ পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে আবারও ঢুকে পড়ছে রোহিঙ্গারা-দৈনিক পূর্বদেশসহ সংবাদপত্রে প্রকাশিত এমন খবর জানা গেলে সেটি কতটা উদ্বেগের তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কেননা, ২০১৭ সালে মিয়ানমার সরকার দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর যোগসাজসে রাখাইনে জাতিগত গণহত্যা চালিয়ে সেই দেশের প্রায় ৭ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছিল। যাদো অধিকাংশই বাংলাদেশের কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার উখিয়া, লামা ও নাইক্ষাংছড়ির নিকটবর্তী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছিল। জনগণের দাবি ও তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছিল। এর আগেও কয়েকদফায় রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। যাদের সংখ্যা ছিল ৪ লাখের অধিক। পরবর্তীতে আরো প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা যুক্ত হয়। বর্তমানে প্রজননজনিত বর্ধিত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ লাখের উপর। ২০১৭ সালে যখন রোহিঙ্গাদেও আশ্রয় দেয়া হয়, তখন জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরাম ও সম্প্রদায় আশ্বস্থ করেছিল শিগগিরই রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়া হবে। কিন্তু দীর্ঘ আট বছরেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কোনো অগ্রগতি হয়নি। এমতাবস্থায় আবার যদি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে তবে তা কোনোভাবেই এড়ানোর সুযোগ নেই। প্রসঙ্গত বলা দরকার, গত রবিবার দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপ এলাকায় সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির সংঘাত আরও তীব্র হয়েছে। এ সুযোগে দুই দেশের সীমান্ত দালালদের যোগসাজসে সীমান্তের ৫টি পয়েন্ট ঘুনধুম-তুমব্রæ, পশ্চিমকুল, জলপাইতলী, হেডম্যানপাড়া, রাইশফাড়ি এলাকা দিয়ে রোহিঙ্গরা অনুপ্রবেশ করছে। গত শনিবার এ রকম অনুপ্রবেশকারী ১৪ রোহিঙ্গাকে আলিকদম থেকে গ্রেফতার করেন বিজিবির সদস্যরা। খবওে বলা হয়, ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্ত এলাকা দিয়ে বড় একটি দালাল চক্র গড়ে উঠেছে, যারা বড় অংকের টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশে সহযোগিতা করে থাকেন। এরকম প্রতিদিন প্রায় ১০ থেকে ৩০ জন রোহিঙ্গা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে পরিবেশকে অসহনীয় করে তুলছে। এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর মংডুর বিভিন্ন এলাকায় আরকান আর্মিও সাথে দেমটির জান্তা বাহিনীর দফায় দফায় সংঘাত শুরু হলে ১২ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশে করেন। একদিকে সীমান্তবর্তী এলাকায় মিয়ানমার সমরকারের সাথে আরকান বিদ্রোহীদের সংঘাত-সংঘর্ষ, অপরদিকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এসব ঘটনায় কক্সবাজারের টেকনাফ, লামা ও উখিয়ার অধিবাসীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। আমরা মনে করি, সৃষ্ট পরিস্থিতিতে যেমন টেকনাফের বাসিন্দাদের আতঙ্কের বিষয়টি আমলে নিতে হবে, তেমনি এটাও এড়ানো যাবে না যে, রাখাইনে চলমান সংঘাতের মধ্যে সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বাড়লেও রোহিঙ্গাদের অনেকেই পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে বলেও জানা যাচ্ছে। সীমান্তের একাধিক সূত্র মতে, সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছেন আরো প্রায় ১২ হাজার রোহিঙ্গা। অন্যদিকে, সীমান্তের ওপারে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ার চেষ্টায় রয়েছেন আরও প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা। এছাড়া জানা যায়, গত শনিবার একদিনেই বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ঢুকে পড়েছে প্রায় ৫০ রোহিঙ্গা। আমরা বলতে চাই, যখন এটা সামনে আসছে যে, ছয় মাস ধরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাত চলছে। আর এখন সংঘাত সবচেয়ে তীব্র আকার ধারণ করেছে, তখন সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে, কিন্তু এই চাপ কতদিন সইবে? এমন প্রশ্ন বারবার সামনে এসেছে। অন্যদিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। ফলে এরই মধ্যে আবার যখন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের বিষয়টি সামনে আসছে, তখন তা কতটা উৎকণ্ঠার সেটি এড়ানোর সুযোগ নেই।
উল্লেখ্য, টেকনাফে আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সহকারী পুলিশ সুপার বলেছেন, কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে ঢুকে পড়েছে। তাদের নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। নতুন করে কোনো রোহিঙ্গা যেন ঢুকতে না পারে, সে ব্যাপারে আশ্রয়শিবিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে। অনুপ্রবেশের সময় বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে নাফ নদী থেকে আবার মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদী ও সীমান্তে টহল জোরদার করা হয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে। উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জানিয়েছে, বিজিবি ও কোস্টগার্ড বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে এরই মধ্যে অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ রুখতে সরকার আরো কঠোর হবেন-এমনটি প্রত্যাশা আমাদের।