আন্দোলনে শহীদ তানভীরের চাচাতো ভাইকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ

1

নিজস্ব প্রতিবেদক

পতিত আওয়ামী সরকারের পদত্যাগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলাকালে নগরীর বহদ্দারহাটে গুলিতে নিহত শহীদ তানভীর ছিদ্দিকীর চাচাতো ভাই কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলা যুবদলের সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়াকে অবৈধ অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ করেছে পরিবারের সদস্যরা। গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচিতে এমন অভিযোগ করা হয়েছে। এ সময় কারান্তরীণ জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন পরিবারের সদস্য, স্বজন ও ছাত্র-জনতা।
প্রতিবাদ সমাবেশে কারাগারে আটক জিয়ার স্বজনরা দাবি করেছেন, মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও শহীদ তানভীর সিদ্দিকী হত্যা মামলার অন্যতম আসামি তারেক বিন উসমান শরীফের ইন্ধনেই জিয়াকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে। এছাড়া, শহীদ তানভীর হত্যা মামলার আসামিদের অনেকেই এখনও গ্রেপ্তার না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে।
দেলোয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন শহীদ তানভীর সিদ্দিকীর চাচা মহেশখালী উপজেলা যুবদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু হেনা মোস্তফা কামাল, সাবেক ছাত্রদল নেতা রবিউল হাসান কর্ণেল, আরকান শাহরিয়ার, মো. কাজল, শ্রমিক দল নেতা সরওয়ার আলম, চট্টগ্রাম যুব ক্যাবের সভাপতি মো. আবু হানিফ, ছাত্রশিবির নেতা নিয়াজ উদ্দিন দিনার, সৈয়দ সোহরাব সোহেল, শিক্ষার্থী হিমেল ও আফসান প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ নভেম্বর ভোরে মহেশখালী উপজেলার কালারমার ছড়া ইউনিয়নের মোহাম্মদ শাহ ঘোনা গ্রামের নিজ বসতভিটা থেকে উপজেলা যুবদলের সাবেক ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ও ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের শহীদ তানভীর সিদ্দিকীর ভাই জিয়াউর রহমান জিয়াকে আটক করে কোস্টগার্ড। পরে তার কাছ থেকে থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে বলে জানানো হয়। কিন্তু পরিবারের দাবি জিয়াউর রহমান জিয়াকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে।
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচিতে শহীদ তানভীর সিদ্দিকীর ফুফি খায়রুন্নেছা রুবি বলেন, যুবদল নেতা জিয়াকে গ্রেপ্তারের পেছনে ইন্ধন দিয়েছে শহীদ তানভীর সিদ্দিকী হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ও ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি উসমান গণি। তার সে সময়ের রাজনৈতিক সহযোগী, বন্ধু ও ছাত্রলীগের ক্যাডারদের অনেকে বর্তমানে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত। সে এই মাফিয়া নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে জাতীয়তাবাদী নেতাকর্মী ও জুলাই অভ্যুত্থানের বিপ্লবীদের নিধনের ঘৃণ্য মিশনে নেমেছে। এই হত্যাকারী, কুচক্রী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের বিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে শাস্তির ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছে মহেশখালীর সাধারণ জনগণ ও সচেতন মহল।
তানভীর সিদ্দিকীর চাচা কামরুল হাসান রুবেল বলেন, বিগত ৫ ও ৬ আগস্ট বা তারও পরবর্তী সময়ে স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত খবরে মহেশখালী থানায় হামলা কিংবা পুলিশের অস্ত্র লুটের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে কক্সবাজার মডেল থানা, ঈদগাঁও থানা এবং সিএমপির চান্দগাঁও থানায় উত্তেজিত জনতা হামলার খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু জুলাই বিপ্লবের সেই উত্তাল সময়ে জিয়া মহেশখালী অবস্থান করছিলেন। এমতাবস্থায় তার কাছে পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারের তথাকথিত দাবি কীভাবে যুক্তিসঙ্গত হতে পারে? প্রশাসন যেভাবে তাকে একজন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে উপস্থাপন করলো তাতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে তাহলে কেনো তিনি দু’টি অস্ত্র এবং তাজা বুলেট নিয়ে নিঃসংকোচে নিজের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন?
শহীদ তানভীর সিদ্দিকীর দাদা মো. শফি বলেন, গতমাসে শহীদ তানভীর সিদ্দিকীর পরিবারকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণের পক্ষ থেকে একটি বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হয়। যা সারাদেশে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। বাড়ি হস্তান্তর অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিলেন শহীদ তানভীর সিদ্দিকীর চাচাতো ভাই জিয়া। তার তত্ত¡াবধানে হস্তান্তর অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয়। তখন সেখানে প্রশাসনের লোকজন, বিশেষ করে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্যবৃন্দ, পুলিশ ও এবং স্থানীয় সচেতন নাগরিকগণ উপস্থিত ছিলেন। তখন তো কারও মনে হলো না জিয়া একজন দুর্ধর্ষ ডাকাত? পরবর্তী সময়ে কক্সবাজার জেলার ডিসি মহোদয়ও শহীদ তানভীর সিদ্দিকীর কবর জিয়ারত ও তার পরিবারের খোঁজখবর নিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ও তার সাথে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্য ভুলেও বলেননি জিয়া ভয়ঙ্কর ডাকাত?