চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফরিদা খানম বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চট্টগ্রামে প্রকৃতভাবে যারা আহত হয়েছেন তারা যেন প্রকৃত নামের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। প্রকৃত আহত ছাড়া তালিকায় কারও নাম কোনোভাবে যাতে আসতে না পারে সে বিষয়টি নিরপেক্ষভাবে দেখতে হবে। আন্দোলনে যারা নিহত হয়েছেন তাদের স্মরণ সভা করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত রয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০ টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের মত গুরুত্বপূর্ণ জেলায় জন্ম-মৃত্যুর রেকর্ড হার মাত্র ৫১-৫৩ শতাংশ। এ ব্যাপারে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। পারফরমেন্স খারাপ হলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। সিভিল সার্জন ও স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালকের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে গুরুত্বের সাথে কাজ করলে প্রকৃত জন্ম-মৃত্যুর হার নির্ধারণ করা যাবে। আমরা মৃত্যুহারে কিছুটা এগিয়ে থাকলেও জন্মহারে পিছিয়ে আছি। এলাকায় সন্তানের জন্মগ্রহণ ও লোক মারা যাওয়ার সাথে সাথে তা রেজিস্ট্রেশন করে রাখলে প্রকৃত জন্ম-মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পাবে। জেলা প্রশাসক বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের সরাসরি প্রতিনিধি জেলা প্রশাসন। সমম্বয় সভার সিদ্ধান্তগুলো মন্ত্রিপরিষদে পাঠানোর পর সেখান থেকে সিন্ধান্তের পর বাস্তবায়ন হয়। আমরা অনুরোধ করবো- সরকারের যে সকল উন্নয়নমূলক কার্যক্রমগুলো আছে সেগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়নে তদারকি বৃদ্ধি করতে হবে। সকল কাজে যেন সংস্কার থাকে সেটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্দেশনা। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা সকলে মিলে জেলার সার্বিক উন্নয়নে সমন্বিতভাবে কাজ করবো। সরকারি প্রত্যেক দপ্তরকে সংস্কারের আওতায় এনে মেধা, দক্ষতা ও সততা দিয়ে আমাদের কার্যক্রমগুলো সুনিশ্চিত করবো। এ জন্য আপনাদের সকলের সহযোগিতা চাই।
সভায় জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, বর্তমান সময়ে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত অক্টোবর মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৪৩০ জন ও মৃত্যুবরণ করেছে ৯ জন এবং চলতি ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৭০৯ জন ও মৃত্যুবরণ করেছে ১৪ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে ১২২ জন। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতায় সর্বত্র প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে।
সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামরুজ্জামান বলেন, টাস্কফোর্স কমিটি গঠনের পর নিত্যপণ্যের বাজার মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। মোবাইল কোর্টের অভিযানে অসাধু ব্যবসায়ীদেরকে রেকর্ডসংখ্যক জরিমানা করা হয়েছে। এর পরেও সয়াবিন তেল, পেঁয়াজ ও আলুর দামে ঊর্ধ্বগতি। আসন্ন রমজানকে কেন্দ্র করে নিত্যপণ্য যাতে ক্রয়-ক্ষমতার মধ্যে থাকে সে লক্ষ্যে বাজার মনিটরিং আরও জোরদার করতে হবে। নকল ও ভেজাল ওষুধ রোধে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের সভাপতিত্বে ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামরুজ্জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. দিদারুল আলম, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (স্থানীয় সরকার) মোহাম্মদ নোমান হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাসেল, জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, পরিবার পরিকল্পনা চট্টগ্রাম জেলার উপপরিচালক মোহাম্মদ আবুল কালাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক চৌধুরী (ফটিকছড়ি), মো. রাজীব হোসেন (চন্দনাইশ), ইনামুল হাছান (লোহাগাড়া), মাসুমা জান্নাত (কর্ণফুলি), ইশতিয়াক ইমন (আনোয়ারা), জেসমিন আক্তার (বাঁশখালী), অংগ্যজাই মারমা (রাউজান), রিগ্যান চাকমা (স›দ্বীপ), এবিএম মশিউজ্জামান (হাটহাজারী), হিমাদ্রী খীসা (বোয়ালখালী), বোয়ালখালী পৌর প্রশাসক কানিজ ফাতেমা, মহানগর কোর্ট ইন্সপেক্টর মো. রফিক উল্লাহ, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জহির রায়হান, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. ফরিদুল আলম, বিসিক’র ডিজিএম মো. নিজাম উদ্দিন, বিএডিসি’র উপ-পরিচালক (বীজ বিপণন) মোহাম্মদ নাঈমুল আরিফ, বিএডিসি’র যুগ্মপরিচালক (সার) মো. কামরুজ্জামান সরকার, সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. শাহরিয়ারসহ বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পৌর প্রশাসক ও জেলার সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা সভায় উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি