নিজস্ব প্রতিবেদক
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে নগরীর নিউমার্কেট মোড়ে বিক্ষোভ করেছেন কয়েক হাজার আন্দোলনকারী। গতকাল শনিবার বেলা তিনটা থেকে মুহুর্মুহু স্লোগানে উত্তাল ছিল নিউমার্কেট ও আশপাশের এলাকা। এর আগে বেলা দু’টা থেকে শিক্ষার্থীরা খন্ড খন্ডভাবে নিউমার্কেট মোড়ে জড়ো হন। সমাবেশের পরিধি বিস্তৃত হয় কোতোয়ালী, রিয়াজউদ্দিন বাজার, স্টেশন রোড, জুবিলি রোড এবং সিটি কলেজ অভিমুখি সড়কে। বিপুল জনসমাগমের কারণে নিউমার্কেটের আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা বিক্ষোভকালীন কার্যত অচল ছিল। এসব সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচলও বন্ধ ছিল। এছাড়া গতকাল বহদ্দারহাট এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ৪ জন। আহত ৪ জনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, গতকাল শনিবার বিকেল তিনটা থেকে নগরীর নিউমার্কেট মোড়ে জড়ো হতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। আধঘণ্টার মধ্যেই সেখানে হাজারো মানুষের সমাগম ঘটে। ছাত্র-জনতার জমায়েত থেকে মুহুর্মুহু স্লোগান দেওয়া হয়। বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠে পুরো এলাকা। নিউমার্কেট মোড়ে বিক্ষোভস্থল থেকে ফুটপাতে বসানো পুলিশ বক্স ও সড়কে থাকা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা লক্ষ্য করে ঢিল ছোঁড়া হয়।শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে অভিভাবকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন। মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’/ ‘মরা দেহে প্রাণ দে, নইলে গদি ছাইড়া দে’/ ‘আমি কে, তুমি কে, রাজাকার রাজাকার’/ ‘কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার’/ ‘আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘উই ওয়ান্ট উই ওয়ান্ট, জাস্টিস জাস্টিস’ ইত্যাদিসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন।
জমায়েতের কারণে নগরীর জিপিও মোড়, সদরঘাট ও স্টেশন রোড এবং আমতল মোড়ে ব্যারিকেড দিয়ে আন্দোলনকারীরা নিউমার্কেট মোড় অবরুদ্ধ করে রাখে। নিউমার্কেট মোড় ঘিরে ব্যস্ততম চারমুখি সড়কে যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষোভস্থল থেকে পুলিশ বক্স ও সিসি ক্যামেরা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। তবে পুরো এলাকায় কোথাও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্রিয় অবস্থান লক্ষ্য করা যায়নি। এর আগে সারাদেশে ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা করে খুনের প্রতিবাদসহ নয় দফা দাবিতে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ সারাদেশে এই বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল।
এদিকে নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়েছে ৪ জন। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি মিছিল নগরের বহদ্দারহাট এলাকায় পৌঁছালে এ সংঘর্ষ হয়। আহত ৪ জনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নুরুল আলম আশেক গুলিবিদ্ধ ৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেন। এর আগে সন্ধ্যায় নিউ মার্কেট থেকে মিছিলের একটি অংশ টাইগারপাস মোড়ে এসে পুলিশ বক্স ভাঙচুর চালায়। পরে দুই নম্বর গেট এলাকায় শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বাড়িতে হামলা এবং বহদ্দারহাটে চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাড়িতেও হামলা চলানো হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে বহদ্দারহাটের দিকে আসলে পুলিশ তাদের থামানোর চেষ্টা করে। এ সময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়।