নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তঃকর্তৃপক্ষ সমন্বয় ছাড়া নগরের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। গতকাল চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
‘চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্প’র আলোকে ‘মহানগরের উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনার বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি’ বিষয়ে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন প্রধান অতিথি ছিলেন। সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম সভায় সভাপতিত্ব করেন।
চট্টগ্রামকে প্রকৃত ‘গ্রিন, ক্লিন সিটি’ হিসেবে গড়ে তোলার উপর গুরুত্বারোপ করে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আন্তঃকর্তৃপক্ষ সমন্বয় ছাড়া চট্টগ্রাম মহানগরের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। নগরীর পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় একটি টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দরকার। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্প’র মাধ্যমে ‘সেকেন্ডারি ডাম্পিং স্টেশন’ স্থাপনের জন্য সিডিএ’র সহযোগিতা প্রয়োজন।
মেয়র তার বক্তব্যে নগরের বাসিন্দাদের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য ‘খেলার মাঠ ও উন্মুক্ত স্থান’ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন। এ স্থানগুলোর সুরক্ষা এবং উন্নয়নে সিটি করপোরেশন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে মর্মে আশ্বাস দেন।
চট্টগ্রামের উন্নয়নের স্বার্থে সিডিএ ও চসিক এর মধ্যে কোন বিভেদ ভবিষ্যতে আর হবে না উল্লেখ করে মেয়র সিডিএর মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন ও সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন, সাধারণ জনগণের উপস্থিতি নিশ্চিত, ওয়ার্ডের মহল্লা কমিটি, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সহায়তা গ্রহণে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
সভাপতির বক্তব্যে সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম বলেন, আজকের অনুষ্ঠান আন্তঃকর্তৃপক্ষ সমন্বয়ের ‘প্রথম’ পদক্ষেপ। মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্প বাস্তবায়নে তথ্য ও সম্পদের অবাধ বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে।
সভায় মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্প যথাযথভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে আধুনিক, পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই চট্টগ্রাম মহানগর গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।
অনুষ্ঠানে সিডিএ বোর্ড সদস্যগণের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এ এস এম জাইদুল করিম, প্রকৌশলী মানজারে খোরশেদ আলম, এডভোকেট সৈয়দ কুদরত আলী, মো. নজরুল ইসলাম, স্থপতি সৈয়দা জারিনা হোসেন এবং স্থপতি ফারুক আহমেদ।
এছাড়া চসিক ও সিডিএ হতে যথাক্রমে উপস্থিত ছিলেন চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, চসিক প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবুল কাশেম এবং সিডিএ সচিব রবীন্দ্র চাকমা, প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস।
সভায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) কর্তৃক প্রণয়ানাধীন ‘চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্প’র উপর পরিবেশনা প্রদান করেন প্রকল্প পরিচালক মো. আবু ঈসা আনছারী। পরিবেশনায় তিনি প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রামের পুকুর, খাল, পাহাড়সহ পরিবেশগত দিকগুলোর সংরক্ষণে সিডিএ ও চসিক’র কাজের সমন্বয়ের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘চট্টগ্রাম শহরের খাল সংস্কার ও জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প’র পরিচালক প্রকৌশলী আহম্মদ মঈনুদ্দিন জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান কার্যক্রম বাস্তবায়ন তরান্বিত করতে, খাল পরিষ্কারের ‘টেকসই কার্যক্রম’ নিয়ে আলোচনা করেন এবং আবর্জনা ব্যবস্থাপনা ও খাল পুনঃভরাট প্রতিরোধে চসিকের সহযোগিতা কামনা করেন।
সিডিএ বোর্ড মেম্বার স্থপতি সৈয়দা জারিনা হোসেন মাস্টারপ্ল্যান’র প্রণয়নের সাথে সাথে তার সঠিক বাস্তবয়নের উপর গুরুত্ব দেন। সিডিএ’র লোকবল সংকট এবং ক্যাপাসিটি বিল্ডিংয়ের প্রয়োজনিয়তা তুলে ধরে তা সমাধানে অপর বোর্ড মেম্বার প্রকৌশলী মানজারে খোরশেদ আলম মত দেন।
প্রকল্প পরিচালক আবু ঈসা আনছারী সিটি কর্পোরেশন আওতাধীন এলাকার আয়তন বৃদ্ধির প্রস্তাবে সমর্থন করেন। তিনি সিটি করপোরেশনের পরিষেবা সম্প্রসারণের মাধ্যমে আরও প্রায় ২৪ লাখ মানুষকে এ সুবিধার আওতায় আনার পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন, যা নগরীর সার্বিক উন্নয়ন এবং নাগরিক সেবার প্রসারে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।