আনোয়ারা প্রতিনিধি
আনোয়ারা উপজেলায় বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, পুলিশের ওপর হামলা ও অস্ত্র উদ্বারের ঘটনায় ৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে পুলিশ বাদী হয়ে দুটি এবং উপজেলা বিএনপির আহব্বায়ক কমিটির সদস্য আব্দুল গফুর ও মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে দুটি মামলা দায়ের করেন। ৪ মামলায় ৬২ জনের নামোল্লেখ ও অজ্ঞাত আরো ১৪০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
গতকাল রাতে পুলিশের অভিযানে দু’পক্ষের ৭ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন দুধকুদড়ার নুরুল আবছার (৫৫), উত্তর বন্দরের আবুল কালাম আজাদ (৫৩), ডুমুরিয়ার মো. আরাফাত (২৬), পীরখাইনের শফিউল আলম (২৬), ভিংরোলের মো. এরফান (৩১), দুধকুমড়ার মো. কাশেম (৪৫) ও তেকোটার মোস্তাক আহমদ (৫৫)। তাদেরকে গতকাল আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া সংঘর্ষের সময় বিএনপি নেতা আব্দুল গফুর সওদাগরের মেয়ে জামাইকে অপহরণ করা হয়। এরপর তার হাতে বন্দুক দিয়ে ছবি এবং ভিডিও বানিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী মোস্তাফিজুর রহমান সুজন বাদী হয়ে ৬ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।
অভিযুক্তরা হলেন মোফাজ্জাল হোসেন জুয়েল, বোরহান উদ্দিন, গাজী মো. ফোরকান, জিয়াউল কাদের জিয়া, রবিউল ইসলাম নয়ন, মো. আরাফাত।
আনোয়ারা থানার এসআই জুয়েল বাদী হয়ে অপর একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব গাজী মো. ফোরকান ও উপজেলা যুবদল নেতা জিয়াউল কাদের জিয়াকে আসামি করা হয়।
এসআই জুয়েল বাদী হয়ে সংঘর্ষের সময় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় অপর একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় ৪২ জনের নামোল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরো ১২০ জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করা হয়।
অপর আরও একটি মামলা দায়ের করেন উপজেলা বিএনপির আহব্বায়ক কমিটির সদস্য আব্দুল গফুর সওদাগর। মামলায় ১২ জনকে নামোল্লেখ ও আরও ১০/১২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলাটি দায়ের করা হয়।
দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব লায়ন হেলাল উদ্দিন বলেন, ঘটনাটা পারকী সৈকত এলাকার বেড়িবাঁধ সংলগ্ন একটি জমি কেন্দ্রিক। জমির মালিক বিএনপি নেতা মো. ছাদেক। জামেম রহমান নামের এক লোক তার জমিটি জোরপূর্বক দখল করে। এজন্য তিনি থানায় অভিযোগ দেন। জায়েম রহমান কানাডা পালিয়ে যাওয়ায় তার ভাই পরিচয়ে আওয়ামী দোসর কবির নামে এক ব্যক্তিও জায়েম রহমানের পক্ষে থানায় অভিযোগ দেয়। পরে তাকে চ্যালেঞ্জ করলে সে আবার জায়েম রহমানের প্রতিনিধি দাবি করেন। পরে সোস্যাল মিডিয়ায় আওয়ামী ফ্যাসিষ্ট মন্ত্রী-এমপিদের সাথে তার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে সে থানা থেকে সকলের অগোচরে পালিয়ে যায়। পরে রাতে জমির মালিক ছাদেককে হাসান চেয়ারম্যানের লোকজন মারধর করলে আমার লোকজন তা প্রতিহত করে। বিষয়টা সেখানেই মিটমাট হয়ে যায়। পরে তারা সংঘবদ্ধ হয়ে প্রথমে সিইউএফএল এলাকায়, এরপর কাফকো এলাকায়, পরে রাত ১২ টায় মিছিল সহকারে শোডাউন দিয়ে থানায় অভিযোগ দিতে যায়।
এসময় তারা লাইভে আমার বিরুদ্ধে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এগুলো সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আমার পক্ষের লোকজন থানা থেকে ফেরার পথে প্রতিরোধ করলে সংঘর্ষ হয়। এসময় আমার নেতাকর্মীরা সুজন নামে একজন ছাত্রলীগের ক্যাডারকে অস্ত্রসহ আটক করে। শুনেছি তাকে পুলিশ ছেড়ে দিয়ে, উল্টো যারা ধরেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে।
আনোয়ারা থানার ওসি মো. মনির হোসেন বলেন, হাসান চেয়ারম্যান, আবদুল গফুর সওদাগর মিছিল সহকারে এসে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেয়। এসময় আমার কাছে খবর আসে তারা থানায় আসার খবরে লায়ন হেলাল উদ্দিনের অনুসারীরা বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে অবস্থান নেয়। পরে আমি তাদেরকে থানায় রেখে বের হয়ে লায়ন হেলালের অনুসারী নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলি। তারা আমাকে আশ^াস দেয় যে তারা আর কোনো সংঘর্ষ করবে না। তারা চলে যাওয়ার সময় হাসপাতাল মোড়ে পৌঁছলে চারিদিক থেকে লায়ন হেলালের অনুসারীরা ঘিরে ফেলে। এসময় পুলিশসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। পুলিশ সংঘর্ষ থামাতে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। ফাঁকা গুলি ছোড়ায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশকে ইটপাটকেল, কাচের বোতল নিক্ষেপ করে। এতে পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হয়।
তিনি বলেন, পরে সকালে একপক্ষ সুজন নামে একজনকে অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে তুলে দেয়। তদন্তে জানতে পারলাম অস্ত্রটি তাকে ফঁসানোর জন্য জোরপূর্বক হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আমরা মামলাগুলো গ্রহণ করেছি। ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সহকারী পুলিশ সুপার (আনোয়ারা সার্কেল) সোহানুর রহমান সোহাগ জানান, পুলিশ তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ না নিলে আরও বড় হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারত। এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্টকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না।