আনোয়ারা প্রতিনিধি
আনোয়ারায় বেড়িবাঁধের কাজে মালামাল সরবরাহ করা নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গত রবিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে উপজেলা হাসপাতাল মোড়ের প্রধান সড়কে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশসহ ১০ জন আহত হয়েছেন। এসময় তিনটি প্রাইভেট কার, দুইটি মোটর সাইকেল ভাঙচুর ও একটি মোটর সাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এসময় গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। পুলিশও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় একাধিক মামলার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এতে আহতরা হলেন আব্দুল গফুর, শাহজাহান, আব্দুল জব্বার, গিয়াসউদ্দিন, আব্দুল মোতালেব, আশফাকুল হাসান চৌধুরী, এমদাদ হোসেন, মোহাম্মদ রাশেদ, মোহাম্মদ হেলাল, আব্দুর রশিদ ও আবুল কাশেম। বর্তমানে তারা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
জানা যায়, আনোয়ারা উপজেলার পারকী সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন বেড়িবাঁধের প্রায় ৬০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। উপজেলা বিএনপির আহব্বায়ক কমিটির সদস্য আব্দুল গফুর এই কাজে মালামাল সরবরাহের জন্য ঠিকাদারের সাথে কথা বলেন। পার্শ্ববর্তী কানাডা পালিয়ে যাওয়া প্রাইম ব্যাংকের পরিচালক জায়েম রহমানের একটি ৪৪ শতক জায়গায় বেড়িবাঁধে সরবরাহের জন্য আনা মালামালগুলো রাখার প্রস্তুতি নেয়। জায়গাটি নাকি বিগত সরকারের আমলে এক বিএনপি নেতার কাছ থেকে জোরপূর্বক দখল করা হয় বলে ঐ বিএনপি নেতা থানায় একটি অভিযোগ দেন। গতকাল ঐ জায়গায় আব্দুল গফুর মালামাল রাখতে গেলে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব লায়ন হেলাল উদ্দিন পক্ষের লোকজন বাধা দেয়। এর জের ধরে রাতে সিইউএফএল এলাকায় আবারো উভয় পক্ষে হাতাহাতি এবং ধস্তাধস্তি হয়। পরে রাত ১২টার দিকে আব্দুল গফুর ও হাসান চেয়ারম্যানের লোকজন জড়ো হয়ে মোটর সাইকেল, হাইয়েছ ও কার নিয়ে মিছিল সহকারে আনোয়ারা থানায় ঘটনার অভিযোগ দিতে যায়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে লায়ন হেলাল পক্ষের লোকজন আনোয়ারা থানার সামনে, হাসপাতাল মোড়ে, কালাবিবির দীঘির মোড়ে, টানেল সড়কে অবস্থান নেয়। পরে আব্দুল গফুরের লোকজন থানা থেকে বের হয়ে হাসপাতাল মোড়ে আসলে তাদেরকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে লায়ন হেলাল পক্ষের লোকজন। এসময় উভয়পক্ষে সংঘর্ষ বেধে যায়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে প্রেরণ করে।
এ ব্যাপারে হাছান চেয়ারম্যান বলেন, উপজেলা বিএনপির আহব্বায়ক কমিটির সদস্য আব্দুল গফুর বেড়িবাঁধের মালামাল সরবরাহের কাজ পেলে লায়ন হেলালের লোকজন তা ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠে। তারা প্রথমে আব্দুল গফুরসহ আরো নেতাকর্মীকে সিইউএফএল এলাকায় হামলা চালায়। পরে রাতে আমরা তাদেরকে নিয়ে আনোয়ারা থানায় অভিযোগ দিয়ে ফেরার পথে চারদিক থেকে ঘিরে পুলিশের সামনেই আমাদের উপর হামলা চালিয়ে সবাইকে আহত করে। এসময় তিনটি কার, দুইটি মোটর সাইকেল ভাঙচুর করে একটিতে অগ্নিসংযোগ করে। আমাদের তিনজন লোককে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে তাদের একজনকে অস্ত্র দিয়ে পুলিশকে দিয়ে দেয়। এখনো দুইজন নিখোঁজ রয়েছে।
জানতে চাইলে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব লায়ন হেলাল উদ্দিন বলেন, আওয়ামী লীগের লোকজন নিয়ে আব্দুল গফুর, হাসান চেয়ারম্যান ও হারেসের নেতৃত্বে আনোয়ারায় বিএনপি নেতার জায়গা দখল করতে গেলে জনগণ তাদের প্রতিরোধ করে। এসময় একজনকে অস্ত্রসহ আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।
আনোয়ারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনির আহমদ বলেন, বেড়িবাঁধের মালামাল সরবরাহের জন্য আনা মালামাল রাখার একটি জায়গা নিয়ে আব্দুল গফুর ও লায়ন হেলাল অনুসারীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এ নিয়ে রাতে তাদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আব্দুল গফুর ও হাসান চেয়ারম্যান পক্ষ মিছিল নিয়ে থানায় অভিযোগ দিয়ে ফেরার সময় আগে থেকে সড়কে অবস্থান নেওয়া লায়ন হেলাল অনুসারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়। এসময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করে। সকালে এক পক্ষ একজনকে অস্ত্রসহ এনে পুলিশকে দেয়। আমরা বিষয়টি তদন্দ করছি। এ ঘটনায় একাধিক মামলার প্রস্তুতি চলছে।