আনন্দর‌্যালি ও মিষ্টি বিতরণ

2

কক্সবাজার প্রতিনিধি

৫০০ শয্যা বিশিষ্ট কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অনুমোদন পাওয়ায় খুশির জোয়ারে ভাসছে জেলাবাসী। দলমত নির্বিশেষে সবাই উচ্ছ¡সিত। রাজনীতিবিদ, পেশাজীবী সহ বিভিন্ন সেক্টরের বিশিষ্ট নাগরিকরা এটিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
আনন্দ র‌্যালি করেছে শিক্ষার্থীরা। র‌্যালি শেষে মিষ্টি বিতরণ করে একে অপরকে মিষ্টি মুখ করিয়ে ভাগাভাগি করেন আনন্দ।
কলেজের শিক্ষকদের মধ্যেও আনন্দে কমতি ছিল না। শিক্ষার্থীদের সাথে অধ্যক্ষ সহ শিক্ষকরাও আনন্দ ভাগাভাগি করেন। কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সোহেল বক্সকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান এবং মিষ্টি মুখ করিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া তিনিও মিষ্টি খাইয়ে দেন শিক্ষার্থীদের।
এসময় অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সোহেল বক্স বলেন, কক্সবাজারবাসীর এবং কলেজের প্রতিটি শিক্ষার্থীর প্রাণের দাবি ছিল- কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল। এটি ক্রয় কমিটির মিটিং এ চূড়ান্ত অনুমোদন হওয়ায় আমরা খুবই সন্তুষ্ট। আগামী ২ মাসের মধ্যে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হতে পারে। যেটি ২০২৯ সালের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার আশা করা হচ্ছে।
এদিকে ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অনুমোদন পাওয়ার নেপথ্যের ঘটনা জানিয়েছেন কক্সবাজার সদর রামু আসনের সাবেক এমপি লুৎফর রহমান কাজল। তিনি তার ফেসবুকে দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়ে লিখেছেন,
‘গত ৫ আগস্টের প্রায় ৩ মাস পরে বন্ধু ডাঃ আলম (শিশু বিশেষজ্ঞ) তৎকালীন কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ ফরহাদকে নিয়ে তার বাসায় যান। তারা একটি আবেদনপত্র দেন কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের প্রস্তাবিত ৫০০ বেডের হাসপাতাল নির্মাণের তদবির করার জন্য। তিনি মাননীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার পরিচিত একজনের সাথে মাননীয় উপদেষ্টার ঢাকাস্থ বাসায় আবেদনপত্রটি হস্তান্তর করেন। পরবর্তীতে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে অবহিত করলে তিনি হাসপাতাল নির্মাণের বিষয়ে মাননীয় পুর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমানকে অনুরোধ করেন। মাননীয় উপদেষ্টা সালাহউদ্দিন আহমদকে আশ্বস্ত করেন। কয়েকদিন আগে তিনি জানতে পারেন সকলের প্রচেষ্টা সফল হয়েছে। মাননীয় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সহ সংশি¬ষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা।’
মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বাস্তবায়ন কমিটির সংগঠক এবং কলেজটির শিক্ষার্থী আসিফুল হক বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করে যাচ্ছি হাসপাতালের জন্য। কলেজে হাসপাতাল না থাকায় প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরের কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে গিয়ে ব্যবহারিক ক্লাস করতে হত আমাদের। শিক্ষার্থীদের চেয়ে বাসের সংখ্যাও কম থাকায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যেতে হত। এখন হাসপাতাল হয়ে গেলে আমাদের এসব কষ্ট লাঘব হবে। হাসপাতাল অনুমোদন করায় আমরা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ধন্যবাদ জানাই।
আরেক শিক্ষার্থী জিন্নাতুন নাহার বলেন, কক্সবাজার মেডিকেলে হাসপাতাল বাস্তবায়ন হলে জটিল জটিল রোগের চিকিৎসা হবে এখানে। যেমন কিডনির ডায়ালাইসিস, আইসিইউ, সিসিইউ সহ সকল ডিপার্টমেন্ট থাকবে। একারণে আমাদের কষ্ট লাঘবের পাশাপাশি উপকৃত হবে এখানকার সাধারণ মানুষ।
কক্সবাজারের বাসিন্দা এবং কলেজটির শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান বলেন, কক্সবাজারের ২৯ লক্ষ সাধারণ মানুষ এবং ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বসবাস। এছাড়াও লক্ষ লক্ষ পর্যটকের সমাগম থাকে সবসময়। এ কারণে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল খুবই প্রয়োজন ছিল। এ কারণে আমাদের জেলা সদর হাসপাতালে গিয়ে ব্যবহারিক ক্লাস করতে হবে না। এবং কক্সবাজারবাসী সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে। এ কারণে আমি কক্সবাজারের বাসিন্দা এবং শিক্ষার্থী হিসেবে খুবই খুশি।
জানা যায়, ২০০৮ সালের ৮ ফেব্রæয়ারি কক্সবাজার সদর হাসপাতালের পাশে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে শুরু হয় কলেজের কার্যক্রম। এরপর দীর্ঘ আন্দোলনের পর ২০১৭ সালে ঝিলংজায় নিজস্ব ক্যাম্পাসে শুরু হয় শ্রেণী কার্যক্রম। কিন্তু হাসপাতাল না থাকায় শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক ক্লাস করতে আসতে হতো ৮ কিলোমিটার দূরে জেলা সদর হাসপাতালে। নামে আধুনিক কলেজ হলেও শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে আছে মাত্র দুটি সাদামাটা বাস। সেই সাথে চরম শিক্ষক সংকট, আছে আবাসন সংকট। পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হবে, এমন প্রত্যাশার প্রহর গুণতে গুণতে দুর্ভোগ সাথী করেই বিদায় নিয়েছে কলেজের ১৪ টি ব্যাচ। একটি পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল কলেজের সাথে থাকার কথা ৫০০ শয্যার হাসপাতাল। ন্যূনতম ২০ টির মতো বিভাগে চিকিৎসা সেবা। কিন্তু এর কোনো ছোঁয়াই পায়নি কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ। শূন্য পড়ে আছে অধ্যাপক, সহযোগি অধ্যাপকের অধিকাংশ পদ।
ওএসডি মূলে সহকারী অধ্যাপককে কলেজে সংযুক্তি দিলেও মূলত জুনিয়র শিক্ষকদের দিয়ে কলেজটির কার্যক্রম জোড়াতালি দিয়ে চলছে। এছাড়াও ১০ তলার একাডেমিক ভবনে নির্মাণ হয়েছে ৬ তলা। দুটি ছাত্রাবাসের ছয় তলা করে হওয়ার কথা থাকলেও তিনতলা করেই ফেলে রাখা হয়েছে। যার জন্য কক্ষ সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে থাকতে হয় গণরুমে। এতে করে ব্যাহত হয় নিয়মিত পড়াশোনা।