আসাদুজ্জামান রিপন
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের সাগর ও সড়ক উভয় পথ মাদক পাচারের রুট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এ পথে প্রায়ই মাদকের চালান আটক হচ্ছে। এসব ঘটনায় গ্রেপ্তার হচ্ছেন মাদক বহনকারী যুবক-কিশোর, নারী ও রোহিঙ্গারা। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হচ্ছে নিয়মিত। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নিয়মিত অভিযানের পরও থামছে না ইয়াবা পাচার। প্রতিনিয়ত নিত্য নতুন রুট বেছে নিচ্ছেন মাদক কারবারিরা। অপ্রতিরোধ্য গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে সর্বনাশা মাদক ইয়াবা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইয়াবা পাচারের শক্তিশালী চক্রের মূল রুট কাটা না গেলে নিচের স্তরে অভিযান পরিচালনা করে বড় কোনো পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। মাদক শুধু আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা নয়, এটি জাতীয় নিরাপত্তা, জনস্বাস্থ্য এবং সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য এক বিশাল হুমকি।
স¤প্রতি চট্টগ্রামের নতুনব্রিজ এলাকায় ইয়াবার এক বড় চালান ধরা পড়ে। এ সময় ১০ হাজার ইয়াবাসহ হাসান নামে এক ইয়াবা পাচারকারিকে আটক করে চট্টগ্রাম মেট্রো মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নগরীতে অভিযান চালিয়ে ইয়াবা চোরাচালানে জড়িত আরো দুইজনকে আটক করে। এটিই ছিল গতমাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইয়াবার চালান আটকের ঘটনা। গত মাসে সবচেয়ে বড় চালান ধরা পড়ে ৩ জুন। কর্ণফুলি উপজেলা অফিসের সামনে অভিযান চালিয়ে ২০ হাজার ইয়াবাসহ দুইজনকে আটক করে। তারা বাসের যাত্রীবেশে ইয়াবা পাচার করেছিল। এদের মধ্যে একজনের বাড়ি উখিয়া হলেও আরেকজনের বাড়ি কর্ণফুলি উপজেলায়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত একমাসে চট্টগ্রাম শহর ও তার আশেপাশে ২০টি অভিযান চালিয়ে ৬৭ হাজার ৪০টি ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। আটক করা হয় ২২ জন মাদক কারবারিকে। এর মধ্যে ১৬ জন পুরুষ, ৩ জন মহিলা এবং ৩ জন মিয়ানমারের নাগরিক রয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সূত্র বলছে আটক ব্যক্তিদের বেশিরভাগই পাচারকারি। মাদক কারবারি মূলহোতারা আড়ালে থেকে যায়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) কর্মকর্তারা বলছেন, ডিএনসি নিয়মিত অভিযানে নেমে বড় বড় চালান আটকে দিতে পারলেও নিত্যনতুন কৌশলে সক্রিয় মাদক কারবারিরা। তাদের একটি বড় অংশ মিয়ানমার সীমান্ত থেকে ইয়াবা এনে চট্টগ্রাম হয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দিচ্ছে। আটক ব্যক্তিদের বেশিরভাগই বাহক বা মধ্যস্থতাকারী। মূল পরিকল্পনাকারী ও গডফাদাররা রয়েছেন আড়ালে। মাদকের চোরাচালানের সাথে রাজনৈতিক নেতারাও জড়িত। মাদকের টাকার ভাগ প্রভাবশালী বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার পকেটেও যায়। ফলে মাদকের মূল জাল ভাঙা যাচ্ছে না।
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, নিম্নস্তরে অভিযান ও গ্রেপ্তার বড় কোনো পরিবর্তন আনতে পারছে না। কারণ মাদকচক্রের রুট, অর্থায়নকারী ও পৃষ্ঠপোষকদের ধরা না হলে ইয়াবা চোরাচালান বন্ধ করা সম্ভব নয়। মাদক এখন শুধু একটি আইন-শৃঙ্খলা বিষয় নয়। এটি জাতীয় নিরাপত্তা, জনস্বাস্থ্য এবং সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য এক ভয়াবহ হুমকি হয়ে উঠেছে।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চল (উত্তর ও দক্ষিণ) উপপরিচালক হুমায়ন কবির খোন্দকার বলেন, মাদক পাচারের ধরন পাল্টাচ্ছেন কারবারিরা। নিয়মিত অভিযান পরিচালনার কারণে বেশ সতর্ক হয়েছেন কারবারিরা। সাগর ও সড়ক পথে বেশ কয়েক ধাপে হাতবদল হয়ে পাচার হচ্ছে। বিনিময়ের মাধ্যমে এসেছে পরিবর্তন। এখন টাকা নেয় না কারবারিরা। ইয়াবার বিনিময়ে নিত্যপণ্য চলে যাচ্ছে ইয়াবার মূল কারবারির হাতে। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।