আজ পবিত্র হজ

7

পূর্বদেশ ডেস্ক

পবিত্র হজ পালন করতে সৌদি আরবের মক্কায় সমবেত হয়েছেন বিশ্বের লাখ লাখ হজযাত্রী। ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক…’ ধ্বনিতে ইহরামের সাদা কাপড় পরিহিত হাজীদের আগমনে মক্কা এখন এক আবেগ ও উৎসবের নগরী। হাজীরা গতকাল বুধবার ইহরাম বেঁধে সারাদিন মিনায় অবস্থান করেন। গত মঙ্গলবার থেকেই অনেকে মিনায় যাওয়া শুরু করেন। এর মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় পবিত্র হজের কার্যক্রম।
আজ বৃহস্পতিবার হজের মূল কার্যক্রম হিসেবে আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করবেন হজযাত্রীরা। হজের অংশ হিসেবে হজযাত্রীরা ৮ থেকে ১২ জিলহজ মিনা, আরাফাত, মুজদালিফা ও মক্কায় অবস্থান করবেন। এরপর সাঈ, তাওয়াফ ও দমে শোকর আদায়ের মাধ্যমে পাঁচ দিনব্যাপী হজের কার্যক্রম শেষ হবে।
নিয়ম অনুযায়ী, সৌদি সময় অনুযায়ী ৭ জিলহজ সন্ধ্যার পর মক্কার পবিত্র মসজিদুল হারাম বা নিজ আবাসন থেকে হজের নিয়ত করে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে মিনার উদ্দেশে রওনা হন হজযাত্রীরা। তাদের পরনে সেলাইবিহীন দুই টুকরা সাদা কাপড়। ৮ জিলহজ জোহরের নামাজের আগে মিনায় পৌঁছা সুন্নত। সেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় ও রাতযাপন করাও সুন্নত। তাই হাজীদের সবার জন্য আলাদা তাঁবু স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে তারা তালবিয়া, জিকির, তিলাওয়াত ও দোয়ায় মগ্ন থেকে সারাদিন অবস্থান করবেন।
আজ বৃহস্পতিবার ফজরের নামাজ পড়ে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে আরাফাতের ময়দানে যাবেন হজযাত্রীরা। সেখানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত হাজিদের ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখর হবে পুরো ময়দান। এখানে অবস্থান করে তিলাওয়াত, জিকির, নামাজ, খুতবা শোনাসহ ইবাদত-বন্দেগির মধ্যদিয়ে হজের মূল কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা হজের আবশ্যিক বিধান।
চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে হজ করতে সৌদি আরব গেছেন ৮৭ হাজার ১৫৭ জন। গত ২৯ এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশ, সৌদি এয়ারলাইন্স ও ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্সের ২২৪টি ফ্লাইটে তাঁরা সৌদি আরবে যান। হজযাত্রীদের ফিরতি ফ্লাইট আগামী ১০ জুন থেকে শুরু হয়ে ১০ জুলাই পর্যন্ত চলবে।
উল্লেখ্য, হজের নিয়তসহ ইহরাম পরিধান করে নির্দিষ্ট দিনে আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা এবং পবিত্র কাবা শরিফ তাওয়াফ করাকে হজ বলে। পবিত্র এই দিনে মহান আল্লাহর কাছে নিজের উপস্থিতি জানান দিয়ে পাপমুক্তির আকুল কামনায় লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান মিনা থেকে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হন। মূলত হজ মুসলমানের জন্য একটি ফরজ ইবাদত। এতে শারীরিক শক্তি ও অর্থ ব্যয়, দুটিরই প্রয়োজন।
হজরত ইবরাহিম (আ.) কাবাঘরের পুননির্মাণ শেষ করে আল্লাহ তাআলার নির্দেশে হজের ঘোষণা দেন। হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ করে এবং অশ্লীল ও গুনাহর কাজ থেকে বেঁচে থাকে, সে নবজাতক শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়। আর প্রকৃত হজের পুরস্কার জান্নাত ছাড়া অন্য কিছুই নয়।’ (বুখারি: ১/২০৬)।
সমগ্র মুসলিম উম্মাহর সর্ববৃহৎ সম্মেলন হলো হজ। এটি উম্মাহর সামাজিক, রাজনৈতিক এবং পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব ও মমত্ববোধ সৃষ্টির পাশাপাশি আধ্যাত্মিক ঐক্যের প্রকৃত নিদর্শন হিসেবে পরিচিত। হজ ধনসম্পদ, বর্ণ-গোত্র কিংবা জাতীয়তার দিক থেকে ভেদাভেদ ভুলিয়ে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হতে শেখায়।
রাজা, প্রজা, মালিক, ভৃত্য সবাইকে সেলাইবিহীন একই কাপড় পরিধান করায়। একই উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হয়ে সাম্যের আহবান জানায়। হজ মানুষকে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও শৃঙ্খলাবোধের শিক্ষা দিয়ে সহানুভূতিশীল করে গড়ে তোলে।
পবিত্র কাবাঘর প্রদক্ষিণ, আরাফাতের ময়দানে অবস্থান, সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মধ্যে দৌড়ানো, মিনার জামারায় পাথর নিক্ষেপ, আল্লাহর উদ্দেশে পশু কোরবানি ইত্যাদি হজের ইবাদত। এর প্রতিটি ইবাদতের মধ্যেই রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও ঐতিহ্য। এগুলোর সঙ্গে হজরত ইবরাহিম (আ.) ও হজরত ইসমাইল (আ.)-এর কোরবানি, আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা-বিশ্বাস, আনুগত্যের শিক্ষা রয়েছে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি, বিশ্বমানবের কল্যাণের জন্য তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে, তোমরা সৎ কাজের নির্দেশ দাও, অসৎ কাজে নিষেধ করো।’ (আল-ইমরান)।
কোন মুসলমানের ওপর যে বছর হজ ফরজ হয়, সে বছরই তা আদায় করা উচিত। অযথা বিলম্ব করা গুনাহ। হজ একবার ফরজ হলে তা আর কখনো মাফ হয় না। (আহসানুল ফাতাওয়া: ৪/৫২৮)।