আজ আপিল করে জামিন চাইবেন মাহমুদুর রহমান

1

পূর্বদেশ ডেস্ক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যাচেষ্টা মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত আমার দেশ পত্রিকার সাবেক ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সাজার বিরুদ্ধে আপিল করবেন। আজ তার পক্ষে আপিল করে জামিন চাওয়া হবে বলে জানান তার আইনজীবী ব্যারিস্টার তানভীর আহমেদ।
তিনি বলেন, মাহমুদুর রহমানকে দেওয়া সাজার বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আমরা আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে আপিল করব। সেইসঙ্গে তার জামিন চেয়ে আবেদন করব। আপিল আবেদন গৃহীত হওয়া সাপেক্ষে আমরা আপিল শুনানির জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি।
গত রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) এ মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। ওইদিন মামলাটিতে আপিলের শর্তে জামিন আবেদন করলে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে এ আদেশ দেন। খবর বিডি ও বাংলানিউজের।
এদিকে একই মামলায় দন্ডিত সাংবাদিক শফিক রেহমানের সাজা স্থগিত হলেও মাহমুদুর রহমানকে কেন কারাগারে যেতে হল, সেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন, যায়যায়দিনের সাবেক সম্পাদক শফিক রেহমান সাজা স্থগিতের আবেদন করলেও মাহমুদুর রহমান তা করেননি। সে কারণে দুজনের ক্ষেত্রে আলাদা ফল এসেছে। গতকাল ফেসবুকে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় এ ব্যাখ্যা দেন আসিফ নজরুল।
এ মামলায় ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট যায়যায়দিন সম্পাদক শফিক রেহমান, আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানসহ পাঁচজনকে সাত বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছিল। সাজাপ্রাপ্ত অন্য তিনজন হলেন, জাতীয়তাবাদী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সহসভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুন, তার ছেলে রিজভী আহাম্মেদ ওরফে সিজার এবং যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ভূঁইয়া।
২০১৫ সালের ৩ আগস্ট পল্টন থানায় পুলিশের করা এ মামলায় ২০১৬ সালের ১৬ এপ্রিল গ্রেপ্তার হয়েছিলেন শফিক রেহমান। পাঁচ মাস কারাগারেও থাকতে হয়েছিল তাকে। পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে ২০১৮ সালে যুক্তরাজ্যে চলে যান তিনি।
ছয় বছর পর গত ১৮ আগস্ট যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফেরেন বর্ষীয়ান এই সাংবাদিক। এরপর গত ২২ সেপ্টেম্বর আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতামতের আলোকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আপিলের শর্তে এ মামলায় তার সাজা এক বছরের জন্য স্থগিতের কথা জানানো হয়।
অন্যদিকে মাহমুদুর রহমানও আওয়ামী লীগ আমলে গ্রেপ্তার হয়ে বিভিন্ন মামলায় সাড়ে তিন বছর কারাগারে ছিলেন। ২০১৬ সালের নভেম্বরে মুক্তি পাওয়ার পর তিনিও লন্ডনে চলে যান। সাড়ে ৫ বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে সা¤প্রতি তিনি দেশে ফেরেন। এরপর ২৯ সেপ্টেম্বর তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করলে ঢাকার একজন মহানগর হাকিম তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এক বছরের বেশি সাজা হলে হাকিম আদালত জামিন দিতে পারে না। সে কারণে ওই আদালতে মাহমুদুর রহমানের জামিন চাওয়ারও সুযোগ ছিল না।
বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করে আইন উপদেষ্টা ভিডিও বার্তায় বলেন, মাহমুদুর রহমান ভাই যে মামলায় শাস্তি পেয়ে আজকে জেলে আছেন, প্রকৃতপক্ষে এ মামলায় আরেকজন বরেণ্য সাংবাদিক শফিক রেহমানেরও সাজা হয়েছিল। উনি এই মামলার সাজা স্থগিত চেয়ে আপিলের আবেদন করেছিলেন। আইন মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের ভিত্তিতে সেটা অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু মাহমুদুর রহমান ভাই এটা করেন নাই।
মাহমুদুর রহমানকে ‘অত্যন্ত দৃঢ় আত্মসম্মানবোধ, প্রচন্ড দেশপ্রেমিক মানুষ’ হিসেবে বর্ণনা করে আসিফ নজরুল বলেন, হয়ত উনার এ রকম ব্যক্তিত্বের কারণে তিনি মনে করেছেন উনি সাজা স্থগিতের আবেদন করবেন না।
ভিডিও বার্তায় শুরুতেই আইন উপদেষ্টা বলেন, এ দেশে শেখ হাসিনার যে ফ্যাসিবাদী শাসন ছিল সেটার বিরুদ্ধে বুদ্ধিভিত্তিক লড়াইয়ের সূচনা করেছিলেন মাহমুদুর রহমান ভাই। এ জন্য উনাকে প্রচন্ড নিপীড়ন-নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে। যেটার সঙ্গে কোনো কিছুর তুলনা হয় না। উনাকে একটি ভুয়া মামলায় ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার শাস্তি দিয়েছিল। উনার অবর্তমানে শাস্তি দিয়েছিল। এই মামলার মেরিট নিয়েও প্রশ্ন তোলা যেতে পারে।