আগে গণহত্যার বিচার পরে অন্য কাজ

1

কক্সবাজার প্রতিনিধি

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ’২৪ এর গণহত্যার বিচার অবশ্যই আগে করতে হবে, পরে অন্য কাজ। তা না হলে শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানী করা হবে।
গতকাল শনিবার দুপুরে কক্সবাজার সরকারি কলেজ মাঠে আয়োজিত জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
২৪ এর অভ্যুত্থানকারী প্রজন্মকে সম্মান জানিয়ে আমির বলেন, তোমাদের নেতৃত্বে আমরা ছিলাম। সাড়ে ১৫ বছর আমরা আমাদের নেতৃত্বে আন্দোলন করেছি কিন্তু স্বৈরাচারের পতন ঘটাতে পারিনি। এটাই সত্য কথা। কিন্তু সাড়ে ১৫ বছরের ধারাবাহিকতায় তোমাদের নেতৃত্বে জাতি শেষ আঘাতটা ফ্যাসিজমের উপর দিয়েছিলো এবং জাতি সফল হয়েছিলো।
আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, অনেকে আবার নিজেরা কৃতিত্ব দাবী করে। আমি মাস্টারমাইন্ড, অমুক ভাই মাস্টারমাইন্ড, তমুক নেতা মাস্টারমাইন্ড। মহাপরিকল্পনাকারী মহান রাব্বুল আল আমিনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়েছে। এখানে কোনো মাস্টারমাইন্ড আমরা বিশ্বাস করিনা।
রাজনীতির সাথে চাঁদাবাজি, দুর্বৃত্তায়নের কোনো সম্পর্ক নেই এবং এ ধরনের অপকর্ম থেকে বিরত থাকার আহŸান জানিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, আগে যেমন চাঁদাবাজি ছিল, এখনও আছে। এ চাঁদাবাজি কারা করছে, তা বন্ধ করতে হবে।
‘জামায়াত বাংলাদেশের সবচেয়ে মজলুম দল’ উল্লেখ করে শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা এখনও নিবন্ধন ফিরে পাইনি। জামায়াত একমাত্র দল যার নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। দলকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ এই দল আল্লাহর আইন চায়। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে কোনো অপকর্ম জামায়াতে ইসলামীকে স্পর্শ করেনি। কিন্তু যে দলই অতীতে ক্ষমতায় এসেছে তারা দুর্নীতি, লুটপাট করেছে। জামায়াতের কারও বিরুদ্ধে সেই অভিযোগ নেই।
আইনের অঙ্গনে এসে যারা বেআইনী কর্মকান্ড করেছেন, প্রধান বিচারপতির দরজায় এসে লাথি দিয়েছিলো, আওয়ামী লীগ তাদের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বানিয়েছিলো। এদের কাছ থেকে বিচার পাওয়া যাবে না এটাই স্বাভাবিক। তাই অবিচারের শিকার হয়ে আমাদের ১১ জন কলিজার টুকরা শীর্ষ নেতা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। তাদেরকে ঠান্ডা মাথায় বিচারের নামে হত্যা করা হয়েছে। আমরা প্রতিশোধে বিশ্বাস করি না, তবে আমরা অবশ্যই অপকর্মের বিচার চাই। আমাদের কথা স্পষ্ট। সবগুলো খুনের বিচার হতে হবে। এ বিচার না হলে শহীদের আত্মা কষ্ট পাবে।
এ সময় জামায়াত আমির বলেন, ‘যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি। কারও উস্কানিতে আমরা কারও ক্ষতি করতে দেবো না। পলাতক সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বেনজীর এখন দেশের বাইরে থেকে ষড়যন্ত্র করছে। নানা ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে’।
দেশবাসীসহ দলীয় নেতা-কর্মীদের এ বিষয়ে সতর্ক ও সচেতন থাকার আহŸান জানান জামায়াতের আমির। ধর্ম যার যার, বাংলাদেশ আমাদের সবার মন্তব্য করে ডা. শফিক বলেন, আমরা আমাদের এ দেশে মেজরিটি মাইনরিটি একেবারেই মানিনা। বাংলাদেশে যারাই জন্মগ্রহণ করেছে তারা এদেশের মর্যাদাবান গর্বিত নাগরিক। ইসলাম কারো উপর জোর খাটানোর কোনো অধিকার রাখেনা। অন্য ধর্মও কোনো ধর্মের উপর জোর খাটাতে পারবে না যদি সেটি ধর্ম হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, সমাজের মধ্যে ‘সংখ্যাগুরু এবং সংখ্যালঘু’ বলে যুদ্ধ লাগিয়ে রাখা হয়েছিলো। এখানে মেজরিটি-মাইনরিটি বলে যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন ধরমের ভাই বোনদের নির্যাতন করা হয়েছে, তাদের সম্পদ গ্রাস করা হয়েছে, জায়গা জমি দখল করা হয়েছে , ইজ্জতের উপর হাত দেয়া হয়েছিলো, ক্ষেত্র বিশেষে তাদের ঘর বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আর দোষ দেয়া হয়েছে জামায়াতে ইসলামীর উপর।
ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি তিনি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, স্বাধীনতার ৫৪ বছরে কোথায় কোথায় জামায়াতের কর্মীরা এসব অপকর্ম করেছে, তা সুস্পষ্ট করে নাম ঠিকানা দিয়ে আমাদের সাহায্য করুন। আপনাদেরকে কথা দিচ্ছি, ন্যায় বিচার আমরা আপনাদের হাতে তুলে দেবো। আমরা নিশ্চিত এই অপকর্মের সাথে আমাদের সহকর্মীরা জড়িত নয়।
ডা. শফিক আরো বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ স্বাধীনতা অর্জন করার পর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। আমরাও সেভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবো, সেটা ছিলো আমাদের আশা। কিন্তু বাস্তবে সে আশা পূরণ হয়নি। যদি বলি একেবারেই পূরণ হয়নি, তাহলে কথাটা সত্য হবে না। কিন্তু পূরণ হবার বিশাল প্রত্যাশা মানুষের ছিলো। একটা স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা আমরা এখনো পেলাম না।
তিনি কক্সবাজারের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় না থাকায় আক্ষেপ করে বলেন, বৈষম্যের শিকার কক্সবাজার, নেই কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। তিনি প্রশ্ন রাখেন কক্সবাজার কোনো সৎ মায়ের সন্তান কিনা? না হয় ছোট ছোট জেলায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক স্থাপনা হলেও কক্সবাজারে হচ্ছে না কেন?
জেলা জামায়াতের আমির নুর মোহাম্মদ আনোয়ারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মী সম্মেলনে জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও কক্সবাজার-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ, মোহাম্মদ শাহজাহান ও শাহজাহান চৌধুরীসহ কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতা এবং জেলার কর্মী-সমর্থকরা উপস্থিত ছিলেন।
কর্মী সম্মেলন ঘিরে সকাল থেকে সম্মেলনস্থলে জড়ো হতে থাকেন দলটির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। সকাল ৯ টার মধ্যেই হাজারো মানুষে কানায় কানায় পূর্ণ হয় সম্মেলনস্থল। এবারের কর্মী সম্মেলনে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও অংশগ্রহণ করেন। তবে নারীরা কলেজের মাঠের বিপরীতের অবস্থিত ইলিয়াস মিয়া চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বসে নেতৃবৃন্দের কথা শুনেন।
বিপুল লোকের সমাগমকে শান্তিপূর্ণ, সুশৃঙ্খল ও নিরাপত্তার সাথে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সরকারি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি জামায়াতের নিজস্ব প্রায় এক হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত ছিলেন।