আগেভাগে বৃষ্টি হওয়ায় লবণাক্ততা সমস্যা হয়নি

2

এম এ হোসাইন

নগরে পানির সংকটের ইতিহাসে কর্ণফুলী নদীর লবণাক্ততা দীর্ঘদিন ধরেই একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে কর্ণফুলী নদীর পানিতে লবণের মাত্রা বাড়ে। বিশেষ করে মার্চ থেকে মে মাসে সেটা প্রকট হয়। এতে করে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি শোধন কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটে এবং নগরবাসী পড়েন বিশুদ্ধ পানির সংকটে। কিন্তু চলতি বছর সেই সংকট থেকে অনেকটাই রেহাই পেয়েছে নগরবাসী। টানা বর্ষণ, কাপ্তাই হ্রদের পানির অতিরিক্ত স্তর এবং সময় মতো হ্রদ থেকে মিঠাপানির প্রবাহ কর্ণফুলীতে আসায় এবার লবণাক্ততা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ফলে স্বস্তিতে রয়েছে ওয়াসা ও নগরবাসী।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, এবার লবণাক্ততা সমস্যায় তেমন পড়তে হয়নি। মার্চে কয়েকদিন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল, কিন্তু তখনই কাপ্তাই হ্রদ থেকে পানি ছেড়ে দেওয়া হয়। যার কারণে দ্রæতই কর্ণফুলীর লবণাক্ততা কমে যায়। এখন যেহেতু নিয়মিত বৃষ্টি হচ্ছে, এবং এটি অব্যাহত থাকছে। সেহেতু আর বড় ধরনের লবণাক্ততার ঝুঁকি নেই। আগামি বছর থেকে আমাদের নতুন প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। সব মিলিয়ে হয়তো আমরা লবণাক্ততা সমস্যা থেকে স্থায়ীভাবে মুক্তি পেতে পারি।
চট্টগ্রাম ওয়াসার তথ্য অনুযায়ী, কর্ণফুলী নদীতে বর্তমানে লবণাক্ততার মাত্রা মাত্র ০.৩ পিপিটি (পার্ট পার থাউজেন্ড)। অথচ গত বছর এই সময়ে এই মাত্রা ২.৮ পিপিটি ছাড়িয়ে গিয়েছিল। সাধারণত ১ পিপিটির বেশি হলেই ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে পানিশোধন ব্যয় ও সময় অনেক বেড়ে যায়। লবণাক্ততার মাত্রা বেড়ে গেলে পানি উৎপাদন প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমে আসে এবং পাম্পিংয়ে বাড়তি সময় ও খরচ লাগে। এবছর সেই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি ওয়াসাকে। বরং স্বাভাবিকের চেয়েও সহজ ছিল উৎপাদন প্রক্রিয়া।
চট্টগ্রাম শহরের প্রতিদিনের পানি চাহিদা প্রায় ৫০ কোটি লিটার। এর মধ্যে কর্ণফুলী ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থেকে ১৪ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হয়। যার মূল উৎস কর্ণফুলী নদী। তাই নদীর পানির গুণগত মান ভালো থাকলে ওয়াসার পানিশোধন কার্যক্রম নির্বিঘ্নে চলতে পারে। ওয়াসার মতে, বর্তমানে তারা ৯০-৯৫ শতাংশ সক্ষমতায় পানি উৎপাদন ও সরবরাহ করতে পারছে। যা অন্য বছরগুলোর তুলনায় বেশ ভালো।
চট্টগ্রাম ওয়াসাকে এই স্বস্তির পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা। চলমান বর্ষণের কারণে হ্রদের পানির উচ্চতা রুলকার্ভের চেয়ে প্রায় ১৭ ফুট বেশি হয়ে গেছে। বর্তমানে হ্রদের পানির উচ্চতা ৯৭ দশমিক ১১ ফুট (এমএসএল)। যেখানে জুন মাসে এটি থাকার কথা ছিল ৮০ দশমিক ৪২ ফুট। এই অতিরিক্ত পানি কর্ণফুলী নদীতে প্রবাহিত হওয়ায় নদীর মিঠা পানির চাপ বৃদ্ধি পায় এবং সাগর থেকে ঢুকে পড়া লবণাক্ত পানি সরিয়ে দিতে সক্ষম হয়। ফলে কর্ণফুলীর পানি লবণমুক্ত থাকে এবং ওয়াসার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে শোধন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় না।
কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে জানা যায়, হ্রদের পানির স্তর বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে পাঁচটি ইউনিট চালু রেখে প্রতিদিন গড়ে ১৯৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে।
কেন্দ্রটির ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান বলেন, আমরা এখন রুলকার্ভের চেয়ে অনেক বেশি পানি পাচ্ছি। পানির উচ্চতা বাড়ায় আমরা সবগুলো ইউনিট চালু রেখেছি। প্রয়োজনে আরও উৎপাদন বাড়ানো যাবে।