নিজস্ব প্রতিবেদক
উনিশ শ’ সাতচল্লিশ সালের দেশভাগের পর থেকে তৎকালীন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষা সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার চেষ্টা চালায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্টি হয় ভাষা আন্দোলন। ভাষা আন্দোলন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব ঐতিহাসিক ঘটনা যা পৃথিবীতে বিরল। যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ভেতর দিয়ে বা তীব্র সংগ্রাম আন্দোলন করে কোনো ভাষাকে মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। এটা হয়েছে শুধুমাত্র বাংলাদেশে। তাই আমরা এটাকে ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করতে পারি।
ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। ডিসেম্বর মাসে পশ্চিম পাকিস্তানের করাচিতে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে শিক্ষা সম্মেলনে ঊর্দূকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। অধিবেশনে বাংলাকে অনান্য ভাষার সাথে অন্যতম ভাষা হিসেবে ব্যবহারের দাবি উথাপন করা হয়। কিন্তু তৎকালীন মুসলিম লীগের কিছু নেতা এ দাবির বিরোধিতা করেন। ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এবং ২৪ মার্চ কার্জন হলে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে ঘোষণা করেন ঊর্দূই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা। বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ তখন অত্যন্ত প্রতিবাদমূখর হয়ে ওঠে এবং কায়েদ এ আযম
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ঘোষণার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান। ১৯৫২ সালের ৪ ফেব্রæয়ারি সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ একটি সভায় ২১ ফেব্রুয়ারি পূর্ব বাংলার সমস্ত এলাকাব্যাপী এক সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেয় এবং ওইদিন ভোর হতে স্বত:স্ফূর্তভাবে হাজার হাজার মানুষ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাস্তায় নেমে আসে এবং ধর্মঘট সফলভাবে পালন করেন। ওইদিনই ভাষা দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অবস্থা বুঝতে পেরে ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩০ দিনের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে মিছিল ও গণ জমায়েত নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। কিন্তু বাংলার বীর যুবা ও ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই শ্লোগান দিতে দিতে ঢাকার রাজপথে বেরিয়ে আসেন।
ভীত আতঙ্কিত পাকিস্তান সরকার পরবর্তীতে বাংলাকে অন্যতম প্রধান রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। এভাবে সফল হয় আমাদের ভাষা আন্দোলন। ভাষা আন্দোলনের চূড়ান্ত দিবস হিসেবে পালন করা হয় ২১ ফেব্রুয়ারিকে। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে বাঙালি জনতার বুক থেকে যে রক্ত ঝরেছিল সে রক্ত বৃথা যায়নি, বৃথা যেতে পারে না। যে কোনো আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে পারলে পরিকল্পনা সঠিক হলে এবং কোনো লোভ-লালসা না থাকলে অবশ্যই আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নেয়। যেটা বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা দেখিয়েছে ভাষা আন্দোলনে এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে।