পূর্বদেশ ডেস্ক
আগামী দেড় বছরের মধ্যে যে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে তা যাতে এ যাবৎকালের সেরা হয়, সেই লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আমরা এটিকে (নির্বাচনকে) একটি উদাহরণ, একটি ঐতিহাসিক উদাহরণ হিসেবে নজির গড়তে চাই।
গতকাল রোববার নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হাকোন আরাল্ড গুলব্র্যান্ডসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এ মন্তব্য করেন বলে তার দপ্তর জানিয়েছে। তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে তাদের এই সাক্ষাৎ হয়। খবর বিডিনিউজের।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দুই দিন বাদে শান্তিতে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের যাত্রা হয়। এরপর বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে এসে তিনি আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি নিয়ে ধারণা দেন।
ইউনূস বলেছিলেন, ভোট কবে হবে তা নির্ভর করবে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে কতটা সংস্কার করে নির্বাচনে যাওয়া হবে, তার ওপর। মোটাদাগে এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে হতে পারে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন।
এরমধ্যে শনিবার সিইসি নাসির উদ্দিন বলেছেন, আমি আগে একাধিকার বলেছি, ১৬ ডিসেম্বরের ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা যে বক্তব্য দিয়েছেন জাতীয় নির্বাচনের টাইমফ্রেম নিয়ে- সেটা মাথায় রেখেই ইসি কাজ করছে। আমরা আমাদের সেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
এই নির্বাচন যাতে বাংলাদেশের ইতিহাসে নজির গড়তে পারে, সেই পরিকল্পনার কথা নরওয়ে রাষ্ট্রদূতকে জানালেন সরকারপ্রধান।
বৈঠকে মুহাম্মদ ইউনূস নরওয়েকে তাদের পণ্যের আঞ্চলিক বিপণনকেন্দ্র হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলার আহবান জানান।
তিনি বলেন, নরওয়েজিয়ান পণ্য এশিয়ায় বিপণনের জন্য বাংলাদেশকে কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করুন, যাতে আপনাদের নিজ দেশের মানুষদের নিয়ে আসার প্রয়োজন না হয় এবং আমাদের তরুণ জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগানো যায়।
নরওয়েজিয়ান টেলিকম জায়ান্ট টেলিনরের প্রথম বিদেশি উদ্যোগ গ্রামীণফোনের উদাহরণ তুলে ধরে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এটি বছরের পর বছর ধরে টেলিনর পরিবারের সবচেয়ে লাভজনক উদ্যোগে পরিণত হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দৃঢ় সমর্থন প্রকাশ করে লেখা নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী জোনাস গহর স্টোরের লেখা একটি চিঠি হস্তান্তর করেন রাষ্ট্রদূত গুলব্র্যান্ডসেন।
এসময় তিনি বলেন, (নরওয়ের) প্রধানমন্ত্রী আপনার প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রক্রিয়া এবং অবাধ ও সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক নির্বাচন পরিচালনার প্রচেষ্টার প্রতি দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করেছেন।
রাষ্ট্রদূত এও বলেন, নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের মানবাধিকার সুরক্ষা এবং পরিবেশগত টেকসই উন্নয়নে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছেন।
গুলব্র্যান্ডসেন বলেন, জাহাজ পুনর্ব্যবহারযোগ্য শিল্প এবং সবুজ শক্তি রূপান্তরে বাংলাদেশের সঙ্গে নরওয়ে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চায়।
মিয়ানমারের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে নরওয়ের সমর্থন চান প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস। তিনি বলেন, নরওয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বড় ভূমিকা রেখেছে। তাই রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আমরা আপনাদের সহায়তা চাই।
গুলব্রান্ডসেন বলেন, ফিলিস্তিন সংকট, আন্তর্জাতিক কর এবং প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের সঙ্গে নরওয়ে নিবিড়ভাবে কাজ কতে আগ্রহী।
ফিলিস্তিনে মানবিক সহায়তা প্রবেশাধিকারের প্রশ্নে জাতিসংঘে নরওয়েজিয়ান নেতৃত্বাধীন প্রস্তাবে ‘স্পনসর’ করার জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ঢাকায় নরওয়ের ডেপুটি হেড অব মিশন ম্যারিয়ান্নে রাবে নেভেলগ্রুড।