আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই চট্টগ্রামের এত উন্নয়ন

62


‘বাংলাদেশকে এখন আর কেউ ফকিরের পুত বলবে না, বিদেশে কেউ বলে না। একটা সময় ছিল, বিএনপি জোট ক্ষমতায় থাকাকালে বাংলাদেশের এমন অবস্থা হয়েছিল যে, বিদেশিরা বাংলাদেশকে বলতো বন্যার দেশ, জলোেচ্ছ্বাসের দেশ, প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। এখন আর কেউ এমন কথা বলে না। এখন বলে, বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল।’
গতকাল বুধবার বিকালে ঐতিহাসিক লালদিঘি মাঠে চট্টগ্রামের ১৬ আসনের আওয়ামী লীগ ও মহাজোট প্রার্থীদের পরিচিতি জনসভায় ধানমন্ডির সুধাসদন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর আওয়ামী লীগ এ জনসভার আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে আর কেউ ফকিরের পুত বলবে না। কোনোদিন বলবে না। বলতেও পারবে না। এখন আমরা উন্নত সমৃদ্ধ দেশ, উন্নয়নশীল দেশ। জাতির পিতা এ দেশ স্বাধীন করে গেছেন। এ দেশে আর ভিক্ষাবৃত্তি করার জন্য কোনো মানুষ থাকবে না। কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না। প্রত্যেক ঘরে ঘরে আমরা বিদ্যুতের আলো দেবো। প্রত্যেকটা মানুষের জীবনমান উন্নত করবো। প্রত্যেকটা মানুষ প্রতিষ্ঠিত হবে। ছেলে-মেয়েরা ভালোভাবে লেখাপড়া শিখবে। আমরা বহুমুখী বিশ্ববিদ্যালয়, ইনস্টিটিউট, ট্রেনিং সেন্টার, ট্রেনিং ইনস্টিটিউট করে দিয়েছি। যাতে ব্যাপক হারে কর্মসংস্থান হয়। এ দেশে ব্যাপক হারে কলকারখানা হবে, বিদেশি বিনিয়োগ হবে। দেশের মানুষ সবধরনের সুবিধা পাবে। জীবনমান উন্নত হবে। আমরা উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলবো।
চট্টগ্রামের উন্নয়নের প্রসঙ্গ টেনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, চট্টগ্রাম সবসময় অবহেলিত ছিল। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে, আওয়ামী লীগের মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী যখন নির্বাচিত হয়েছিলেন, তখনই রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হয়েছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে উন্নয়ন হয়। এখনো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই চট্টগ্রামে এমন উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য আগামী নির্বাচনে সকলের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই। যাতে করে আমরা আমাদের এই উন্নয়নের গতিধারাটা অব্যাহত রাখতে পারি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামের সাথে ঢাকার চারলেন বিশিষ্ট সড়ক নির্মাণ করে দিয়েছি। প্রথম আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট চট্টগ্রামে আমি করে দিয়েছিলাম। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইনের কাজ শুরু করে দিয়েছি। দ্রুত যাতায়াতের জন্য ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বুলেট ট্রেন করবো। পুরো চট্টগ্রাম জেলা, চট্টগ্রাম বিভাগের উন্নয়নে ব্যাপক কাজ আমি হাতে নিয়েছি। কাজগুলি দ্রুত সম্পন্ন করবো। প্রত্যেক উপজেলায় মসজিদ ও কালচারাল সেন্টার নির্মাণ করছি।
চট্টগ্রামে উন্নয়ন পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিরসরাইয়ে বিশাল জায়গায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি। সমগ্র চট্টগ্রামে ব্যাপক উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে। বে-টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। এসব কর্মসূচি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় থাকতে হবে। লুটেরা, দুর্নীতিবাজ, অর্থ আত্মসাৎকারী, দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারী, সাজাপ্রাপ্ত, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারী বিএনপি-জামায়াত জোট যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে। চট্টগ্রামবাসী সবসময় আওয়ামী লীগের পাশে আছে, পাশে ছিলো। আশা করি, আগামী নির্বাচনে চট্টগ্রামের জনগণ আওয়ামী লীগকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে তাদের সেবা করার সুযোগ দিবে।
প্রার্থী ও ভোটারদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, সকলেই এখানে উপস্থিত আছেন। চট্টগ্রাম বার আউলিয়ার দেশ। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ৩০ ডিসেম্বর নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনুন। আমরা আপনাদের সেবা করবো।
প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যের এক পর্যায়ে চট্টগ্রামের নেতাদের এক মিনিট করে বক্তব্য দিতে বলেন। শুরুতেই গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, গত ১০ বছর চট্টগ্রামে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। তার ধারাবাহিকতা রক্ষায় চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে মনোনয়ন দিয়েছেন আপনি। আমরা প্রত্যেকটি আসনই আপনাকে উপহার দিব। আমরা ওয়াদাবদ্ধ। উন্নয়ন চালাতেই আপনাকে আবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই।
বাংলাদেশ রাজার পুত : প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণ জেলার একজন নেতাকে বক্তব্য দিতে বললে স্পিকার হাতে নিয়ে বোয়ালখালীর সংসদ সদস্য মইন উদ্দিন খান বাদল বলেন, ‘আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ কতটুকু এগিয়েছে আজকের মিটিং তার প্রমাণ। এটা একটা অদ্ভূত মিটিং। ঢাকায় আছেন আপনি, চট্টগ্রামে কথা বলছেন।’ এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটাই ডিজিটাল বাংলাদেশ।’ মইন উদ্দিন খান বাদল বলেন, ‘আমি চাঁটগাইয়া ভাষায় একটু বলি। আপনার বুঝতে কষ্ট হলে পাশের কারো কাছ থেকে বুঝে নিবেন।’ জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি চাঁটগাইয়া ভাষা বুঝি।’ পুনরায় বাদল বলেন, ‘বাংলাদেশকে একসময় ফকিরের পুত বলা হতো, এখন রাজার পুত বলা হয়। সারাদেশের উন্নয়ন দেখলে বিশ্ববাসী অবাক হয়।’ পরে আবারো বক্তব্যকালে প্রধানমন্ত্রী বাদলের কথার জের টানেন।
৩টা ৩৩মিনিটে ভিড়িও কনফারেন্সে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুরুতেই আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতিহারের চম্বুক অংশ বিশালাকার স্ক্রিনে প্রদর্শন করা হয়। পরে প্রায় ১৯ মিনিট চট্টগ্রামের সাথে কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। চট্টগ্রামের পর কক্সবাজার, পিরোজপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পরিচিতি সভায় বক্তব্য রাখেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হওয়ার আগেই লালদিঘির মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। নগর ও আশপাশের উপজেলা থেকে ব্যাপক লোক সমাগম ঘটে। নৌকা, নৌকা ধ্বনিতে মুখরিত হয় লালদিঘির ময়দান। মঞ্চে বসানো বিশালাকার স্ক্রিনেই ছিলো সবার চোখ। ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে হাজির হন সংসদ সদস্য প্রার্থীর সমর্থকরা। প্রধানমন্ত্রীর মুখে পছন্দের প্রার্থীর নাম শুনতেই করতালি ও স্লোগানে উৎসাহ দেন নেতাকর্মীরা।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ সালাম ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। অনুষ্ঠানে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরী, সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়েশা খান, সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, নগর মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হাসিনা মহিউদ্দিনসহ উত্তর, দক্ষিণ ও নগর আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।