আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি সরকারের বিবেচনায়

3

পূর্বদেশ ডেস্ক

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি ‘গুরুত্বের সঙ্গে’ বিবেচনা করার কথা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় জানিয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আইনে ‘প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার’ উদ্যোগ নিয়েছে। সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগের খবর নিয়ে আলোচনার মধ্যে বৃহস্পতিবার রাত থেকে সরকারপ্রধানের বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নিয়েছেন এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ নেতৃত্বাধীন একদল বিক্ষোভকারী। তাতে সংহতি প্রকাশ করেছে জামায়াতে ইসলামী, এবি পার্টি, ইসলামী ছাত্রশিবির, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হেফাজতে ইসলাম এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
গতকাল শুক্রবার জুমার পর সেখানে ‘বড় জমায়েতের’ আয়োজন হয়। এরমধ্যেই দুপুরের পর প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করে বিবৃতি দেওয়া হলো। খবর বিডিনিউজের
সেখানে বলা হয়েছে, ‘সম্প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও জনগণের পক্ষ থেকে স্বৈরশাসন ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার যে দাবি উঠেছে, তা সরকার গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে। এ ব্যাপারে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ইতোমধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করেছে, তাদের সাথে আলোচনা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের নেতা ও সমর্থকদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিষয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদন সরকার বিবেচনায় রাখছে’।
এ বিষয়ে সবাইকে ধৈর্য ধারণ করার আহবান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার ‘জনদাবির’ প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রচলিত আইনের অধীনে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে।
সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগের বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ফ্যাসিবাদী’ সরকারের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও হত্যা মামলার আসামি আবদুল হামিদের বিদেশ গমন সম্পর্কে জনমনে ক্ষোভের বিষয়ে সরকার অবগত। এ ঘটনার সাথে জড়িত সকলের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনগত ব্যবস্থা নিতে সরকার বদ্ধপরিকর রয়েছে’।
আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নেওয়ার পর জামায়াতে ইসলামীর কয়েকজন শীর্ষ নেতার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। দল হিসেবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার দাবিও তখন জোরালো হয়। সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচারের আলোচনাও চলে প্রায় এক যুগ ধরে। সেজন্য আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়ার কথা বললেও আওয়ামী লীগ সরকার সে কাজ আর শেষ করেনি।
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় দমন-পীড়নকে মানবতাবিরোধী অপরাধ বিবেচনা করে সেই ট্রাইব্যুনালে এখন আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার যে ইঙ্গিত দিচ্ছে, তাতে আওয়ামী লীগ আইনে যে সংশোধনী করেনি, সেই সংশোধনী এনেই এখন ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগের বিচার হতে পারে। ক্ষমতার শেষ সময়ে এসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে ‘সন্ত্রাসী কর্মকান্ড’ চালানোর অভিযোগে নির্বাহী আদেশে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির এবং তাদের অঙ্গ সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল আওয়ামী লীগ।
১ আগস্টের সেই নির্বাহী আদেশ টেকেনি এক মাসও। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ২৮ অগাস্ট ওই আদেশ প্রত্যাহার করে নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এখন আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে নির্বাহী আদেশে ব্যবস্থা নেওয়া হলে তা ভবিষ্যতে টেকসই হবে না মত দিয়ে অনেকেই আইন সংশোধনের তাগিদ দিচ্ছিলেন।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার প্রশ্নে সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমরা বলেছি, এটা জনগণের ব্যাপার, জনগণ যদি চায়। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, যে কোনো রাজনৈতিক দল সেটা নিষিদ্ধ হবে কি হবে না তাতে জনগণের দায়িত্ব রয়েছে। যদি আইন ভঙ্গ হয়ে থাকে, তাহলে বিচার বিভাগ দায়িত্ব নিতে পারে’।
বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, ‘রাজনৈতিক দল হিসেবে আমি আরেকটা রাজনৈতিক দলের নিষিদ্ধ করার কথা বলি না। জামায়াতে ইসলামীর মত দলকেও আওয়ামী লীগ যখন নিষিদ্ধ করেছে, আমরা বিরোধিতা করেছি। এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে কথা বলতে হবে। আমি দেখতে পারি না, সেজন্য আপনি খারাপ, আপনার উপর সব চাপিয়ে দিলাম, এটা ঠিক নয়’।
তাহলে কি বিএনপি চায় না আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হোক? ফখরুল বলেন, ‘আমরা কখনই এ কথা বলিনি, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে নই। সব রাজনৈতিক দল যদি চায় আমরা সাথে সাথে- কিন্তু প্রক্রিয়াটা কী হবে?’