আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগে অবরোধ

5

পূর্বদেশ ডেস্ক

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাকার শাহবাগ মোড়ে বিক্ষোভকারীদের অবরোধ চলছে, সেখানে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে স্লোগান দিচ্ছেন তারা। গতকাল শুক্রবার বিকাল থেকে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ জুলাই অভ্যুত্থানে যুক্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সেখানে ‘ব্যান, ব্যান, আওয়ামী লীগ’ সহ নানা স্লোগান দিচ্ছেন বিক্ষোভকারী। রাত ১০টার সময়ও তাদের অবরোধ চলছিল।
এর আগে বিকালে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনার কাছে মিন্টো রোডের প্রবেশমুখে সমাবেশ শেষে বিক্ষোভকারীরা শাহবাগ মোড়ে গিয়ে অবস্থান নেন। সমাবেশ থেকে শাহবাগ অবরোধের ঘোষণা দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশ ছাড়ার ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে হাসনাত নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দিয়ে যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচির ডাক দেওয়ার পর সেখানে একদল বিক্ষোভকারী জড়ো হন। শুক্রবার জুমার পর তারা মিন্টো রোডের প্রবেশ মুখে মঞ্চ বানিয়ে সেখানে সমাবেশ করেন। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন হাতে তাতে অংশ নেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। সেই অবস্থান কর্মসূচির অস্থায়ী মঞ্চে সমাবেশ শাহবাগ মোড় অবরোধের ঘোষণা দিয়ে এনসিপি নেতা হাসনাত বলেন, ‘ইন্টেরিমের (অন্তর্বর্তী সরকারের) কানে আমাদের দাবি পৌঁছায়নি। তাই আমরা সমাবেশস্থল থেকে শাহবাগ অবরোধে যাচ্ছি। দাবি না আদায় পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করব।’
হাসনাত আবদুল্লাহ সমাবেশে বলেন, ‘১০০টা ফেরাউন একসঙ্গে করলেও একটা হাসিনা পাওয়া যাবে না। আওয়ামী লীগকে কেন রাজনৈতিক দল বলা হয়? আমরা শুনতে পাচ্ছি প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসার চেষ্টা করছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে তিনি নাকি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘ইতিহাসের প্রত্যেকটা স্তরে স্তরে আওয়ামী লীগের হাতে রক্ত লেগে রয়েছে। ২০০৬ সালে লগি-বৈঠা দিয়ে তারা হত্যা করেছে। ভারতীয়দের সহায়তায় আমাদের দেশপ্রেমিক বিডিআরদের পিলখানায় হত্যা করা হয়েছে। শাপলায় গণহত্যা চালিয়েছে। আওয়ামী লীগের ফিরিস্তি অনেক দেওয়া হয়েছে, আর নয়। আওয়ামী লীগ নামক ভাইরাস নিয়ে এ বাংলাদেশে থাকতে চাই না।’
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আগ পর্যন্ত এই ‘ব্লকেড’ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয় সমাবেশ থেকে। হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা সবাইকে একত্রিত করতে এই জমায়েতের ব্যবস্থা করেছি। এখান থেকে গিয়ে আমরা এখন আমরা শাহবাগ অবরোধ করব।’
সমাবেশে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, ইসলামী আন্দোলনের আশরাফ আলী আকন, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপার রাশেদ প্রধান, ইনকিলাব মঞ্চের শরীফ ওসমান হাদিসহ অন্যরা বক্তব্য দেন। বিকাল ৪টার পর আন্দোলনকারীরা শাহবাগের দিকে এগোতে থাকেন। ফলে শাহবাগমুখী সবগুলো রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অবরোধের ঘোষণা আসার পর ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে নেতাকর্মীরা শাহবাগ মোড়ে জড়ো হতে শুরু করলে বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
অবরোধ চলাকালে শাহবাগ মোড় থেকে কাঁটাবন মোড়, মৎস্য ভবন, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউসহ আশেপাশের বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আটকে থাকা মোসাদ্দেক আলী নামে এক প্রাইভেট কারচালক বলেন, ‘তীব্র যানজটের কারণে সামনে-পেছনে কোথাও যেতে পারছি না। সন্ধ্যা থেকে যানজটে আটকে আছে।’ অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আলমাস হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত শাহবাগ ছাড়বো না। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেই হলে ফিরবো।’ এদিকে সমাবেশ চলার মধ্যেই এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানিয়ে একটি বিবৃতি দেওয়া হয় প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে। সেখানে বলা হয়, ‘স¤প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও জনগণের পক্ষ থেকে স্বৈরশাসন ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার যে দাবি উঠেছে, তা সরকার গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে। এ ব্যাপারে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ইতোমধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করেছে, তাদের সাথে আলোচনা করে দ্রæত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের নেতা ও সমর্থকদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিষয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদন সরকার বিবেচনায় রাখছে।’
এ বিষয়ে সবাইকে ধৈর্য ধারণ করার আহবান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার ‘জনদাবির’ প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রচলিত আইনের অধীনে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে। চলমান তদন্তে সহযোগিতা করার পরিবর্তে, আওয়ামী লীগ দেশের ‘স্থিতিশীলতাকে বিপন্ন করার জন্য স্পষ্টতই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে’।
দ্রুত সিদ্ধান্ত না এলে সারা দেশ থেকে ঢাকা মার্চ : আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত না এলে সারা দেশ থেকে আবার ঢাকা শহরে মার্চ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহব্বায়ক নাহিদ ইসলাম। গতকাল শুক্রবার রাত আটটার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে এক পোস্টে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘শাহবাগের অবস্থান চলমান থাকবে। দলমত নির্বিশেষে আওয়ামী লীগ ও দেশের সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে জুলাইয়ের সকল শক্তি এক থাকবে, এটাই প্রত্যাশা।’
ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে ‘ব্লকেড’ চালু হয়েছে জানিয়ে ফেসবুক পোস্টে নাহিদ ইসলাম লিখেছেন, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত না এলে সমগ্র বাংলাদেশ আবারও ঢাকা শহরে মার্চ করবে।’
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে নাহিদ ইসলাম আরও লিখেছেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্ববিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী, জুলাইবিরোধী, গণতন্ত্রবিরোধী, ইসলামবিরোধী, নারীবিরোধী, মানবতাবিরোধী ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসী মুজিববাদী সংগঠন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধকরণে বাংলাদেশপন্থী সকল শক্তি ঐক্যবদ্ধ হই।’
এই পোস্টের আগে নাহিদ ইসলাম তাঁর ফেসবুক পেজ থেকে আরেকটি পোস্টে তিনটি দাবি তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে ১. আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করতে হবে। ২. আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে আওয়ামী লীগের দলগত বিচারের বিধান যুক্ত করতে হবে। ৩. জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে।