‘আওয়ামী প্রভাব’ ঠেকাতে নতুন ব্যানারে কর্মসূচি

11

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘ম্যাস গ্যাদারিং ফর প্যালেস্টাইন’ নামে একটি বৃহৎ সমাবেশের ডাক দিয়েছিলেন দেশের বিভিন্ন পীর-মাশায়েখ ও সুন্নি নেতারা। আয়োজকদের দাবি- মূলত এটি একটি বিশুদ্ধ সুন্নি জনতার ঐক্য সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। যার মূল আয়োজক ছিল রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট। তবে পূর্বঘোষিত এই কর্মসূচির অনুমতি দেয়নি প্রশাসন। পরিবর্তে ‘আধিপত্যবাদ বিরোধী মুসলিম ঐক্য মঞ্চ’ নামের একটি নতুন প্লাটফর্ম থেকে আজ শনিবার সকালে রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে একই উদ্দেশ্যে জমায়েতের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
অনেকে আশঙ্কা করছেন, এই আয়োজনের আড়ালে ফের মাঠে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে ছাত্রলীগের একাংশ এবং আগের সরকারের ঘনিষ্ঠ কিছু মুখ এই কর্মসূচিকে ব্যবহার করে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্তে লিপ্ত হতে পারে- এমন সন্দেহ ঘনীভ‚ত হয়েছে রাজনৈতিক ও নাগরিক মহলে। আয়োজিত ‘সুন্নি সমাবেশ’কে ঘিরে স¤প্রতি নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ সামাজিক মাধ্যমে হঠাৎ করে সক্রিয় হয়ে ওঠে। তাদের সক্রিয়তাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয় বিভ্রান্তি ও উদ্বেগ। এই প্রেক্ষাপটেই আলাদা ব্যানারে সমাবেশ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেন আয়োজকরা। প্রশাসন শর্তসাপেক্ষে গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ পালনের মৌখিক অনুমতি দেয়।
‘ভিন্ন নামে ও শর্ত সাপেক্ষে’ অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা ১৫ তারিখে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু অনুমতি পেয়েছি পরে, তাও সরকারের পছন্দমতো নতুন নামে। যারা আওয়ামী লীগের আমলে নির্বাচন করেছে, তারা যেন সমাবেশে অংশ নিতে না পারে- এমন শর্তও দেওয়া হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা হারিয়ে দেশত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। একই সময় দেশ ছাড়েন আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা। তবে দেশে এখনো দলটির কিছু গুরুত্বপূর্ণ নেতা রয়ে গেছেন, যারা বিভিন্ন ইস্যুতে গোপনে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ অবস্থার মধ্যে আজ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘ম্যাস গ্যাদারিং ফর প্যালেস্টাইন’ আয়োজনের ঘোষণা দেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ কর্মসূচির অনুমতি না দেয়ার বিষয়ে জানিয়ে দেয়া হয়। এরপর চট্টগ্রামেও এ কর্মসূচির প্রভাব পড়ে। বৃহস্পতিবার রাতে মুরাদপুর এলাকায় সুন্নী জনতা অনুমতি না দেওয়ার প্রতিবাদে বিভিন্ন এলাকায় মিছিল বের করে। মুরাদপুরে সড়ক অবরোধ করে তারা। এছাড়াও একে খান থেকে সিটি গেইট পর্যন্ত মিছিল নিয়ে গিয়ে সিটি গেইটেও অবরোধের চেষ্টা করে তারা। তবে সেই মিছিলেও আওয়ামী ঘরানার লোকজন গোপনে অংশ নিয়েছে- এমন অভিযোগ উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। কয়েকটি ফেসবুক পেজ ও ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে দাবি করা হয়, মিছিলের মধ্যে আওয়ামী লীগের কিছু মুখ দেখা গেছে।
‘আধিপত্যবাদ বিরোধী মুসলিম ঐক্য মঞ্চ’ এর সচিব হাসান আল আজহারী জানান, তাদের আন্দোলনে আওয়ামী লীগের কোনো স্থান নেই। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বা ফেসিবাদী আমাদের ভিতরে ঢুকে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। আপনারা জানেন, আমি ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ছিলাম। ছাত্রদের নিয়ে বিপ্লব ঘটিয়েছিলাম। সেখানে আওয়ামী লীগ মিশে যাবার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের মৌখিক অনুমতি দেয়া হয়েছে। লিখিত অনুমতিও আমরা হাতে পাবো।
হাসান আল আজহারী বলেন, যারা ওদের আনতে চেয়েছিল, তাদের সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। যাদের সাথে সম্পর্ক নেই, তারা কি করে আসবে? আমরা ভিন্ন ব্যানারে আয়োজন করছি। আগে যারা করতে চেয়েছিল, তারা তাদের কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই সমাবেশ ঘিরে মাঠে নামা বিভিন্ন পক্ষ নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টা করছে। কেউ আন্দোলনের নেতৃত্ব নিতে চায়, কেউ সেটিকে বিতর্কিত করতে চায়। ফলে সরকার, প্রশাসন ও সাধারণ নাগরিকদের উচিত- ধর্মীয় অনুভ‚তিকে ঘিরে কোনো গোষ্ঠীর রাজনৈতিক সুযোগ গ্রহণ ঠেকাতে সজাগ থাকা।
এই ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকারকর্মী মীর জাহান ক্ষোভ প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ছাত্রলীগের হবিগঞ্জ জেলা সভাপতি, সেক্রেটারি, সাবেক সেক্রেটারিরা ফের সক্রিয়। ভারতের বিরুদ্ধে একটি ফেসবুক পোস্ট করেছিল বলেই আবরার ফাহাদকে যারা হত্যা করেছিল, ইসরায়েলকে যারা বন্ধু ভাবে, তারা এখন কীভাবে ফিলিস্তিনপ্রেমী হলো?
তিনি আরও লেখেন, ফুলতলীর মুনাফেক এবং মাজারপূজারিদের ষড়যন্ত্র রুখে দাও বাংলাদেশ। ২৬ তারিখে যেন মাইর একটাও মাটিতে না পড়ে।
এদিকে আয়োজকদের পক্ষে এক বিবৃতিতে বলা হয়, আওয়ামী স্বৈরতন্ত্রের দোসররা পূর্বঘোষিত সমাবেশে প্রবেশ করে আয়োজনটিকে বিতর্কিত করতে চেয়েছিল। সেই কারণেই পুরনো ব্যানার বাতিল করে ‘আধিপত্যবাদ বিরোধী মুসলিম ঐক্য মঞ্চ’-এর ব্যানারে আজকের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
‘আগের বিভ্রান্তিকর অবস্থান ও দুটি ফ্রন্টের বিবৃতির প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবার রাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাধারণ সুন্নি জনতা বিক্ষোভ করেন। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ফ্যাসিবাদের দোসররা সাধারণ মানুষের আবেগকে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। কিন্তু তরুণ আলেমরা সেই অপচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছেন’- এমনটা দাবি করা হয় বিবৃতিতে।
এতে বলা হয়, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের আগ্রাসন ও ভারতের ওয়াকফ বিল পাসসহ মুসলমানদের অধিকার হরণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ থেকে সোচ্চার হওয়ার জন্যই এ আয়োজন। আমরা স্পষ্টভাবে জানাচ্ছি, আওয়ামী স্বৈরতান্ত্রিক শক্তি এবং তাদের দোসরদের কোনোভাবেই এই প্লাটফর্মে স্থান নেই।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইসরায়েল ও ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সচেতন জনগণ আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিবাদ জানাবে। আমাদের লক্ষ্য- দেশীয় ও বৈশ্বিক সবধরনের শোষণ, স্বেচ্ছাচার ও সা¤প্রদায়িক জুলুমের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলা।