‘আওয়ামী পন্থীদের’ পদোন্নতি দিতে চেয়ারম্যানের তোড়জোড়

10

আসহাব আরমান

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার পদোন্নতি দিতে তড়িঘড়ি করে সিলেকশন কমিটির সভা আয়োজন করার অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইলিয়াস উদ্দিন আহাম্মদের বিরুদ্ধে। আওয়ামীপন্থী শিক্ষক নেতার স্বাভাবিক কার্যকাল শেষ হওয়ার আগেই বোর্ডের চেয়ারম্যান নিজের দল ভারী করতে বন্ধের দিনে এই আয়োজন বলে সংশ্লিষ্টদের দাবি।
বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, গতকাল শনিবার বেলা ১১টায় বোর্ডের সভাকক্ষে সিলেকশন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই কমিটিতে এক্সপার্ট হিসেবে রয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষক নেতা ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম তফজল হক। আওয়ামী আমলে সিলেকশন কমিটিতে নিয়োগ পাওয়া এই তফজল হক পতিত সরকারের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নওফেলের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং সে সময় নওফেলের কব্জায় থাকা প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ছিলেন। তাছাড়া তিনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা বলেও জানা গেছে।
শিক্ষাবোর্ডের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, সিলেকশন কমিটির সভায় বেশ ক’টি এজেন্ডা রাখা হলেও মূলত ফ্যাসিস্টের দোসর তিন কর্মকর্তার পদোন্নতির জন্য তড়িঘড়ি এই সভা আহবান বলে সূত্রের দাবি। সূত্র মতে, বিধি মোতাবেক সিলেকশন কমিটির সভা আহবান করার তিন কর্মদিবস আগে নোটিশ করতে হয়। কিন্তু শনিবারের সভার নোটিশ করা হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। তা ছাড়া বোর্ডের প্রশাসনিক প্রধান হলেন বোর্ডের সচিব। চট্টগ্রাম বোর্ড সৃষ্টির পর হতে কোনো সচিবকে বাদ দিয়ে সিলেকশন কমিটির সভা আহবান করা হয়নি। কিন্তু এবারের সভায় সচিবকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, যা রীতিমতো সন্দেহজনক বলছেন বোর্ড সংশ্লিষ্টরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানান, যে তিন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়ার আয়োজন চলছে- এরা হলেন সহকারী সচিব মো. ওসমান গণি, সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ আলী আকবর এবং অপরজন সহকারী কলেজ পরিদর্শক আবুল কাশেম মো. ফজলুল হক। পদ খালি না থাকা সত্ত্বেও এই ফ্যাসিবাদের দোসরদের ইন-সিটু (পূর্ববর্তী কর্মস্থলে বহাল রেখে উচ্চতর ধাপের সব সুবিধা প্রদান করা হবে) পদোন্নতি দেয়ার জন্যই মূলত এই আয়োজন বলে তিনি জানান।
এদের মধ্যে সহকারী সচিব মো. ওসমান গণি ভুয়া অভিজ্ঞতা সনদ দেয়া, চেক জালিয়াতি ও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার অভিযোগে তিন দফায় শাস্তি ভোগ করেছেন। বর্তমান চেয়ারম্যান যোগ দেয়ার পর তার সব শাস্তির আদেশ প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সেই শাস্তির কারণে কেটে নেয়া বেতন-ভাতার ১৫ লাখ টাকাও তাকে ফেরত দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা মৎস্যজীবী লীগের এই সদস্যকেই এখন উপসচিব পদে পদোন্নতি দেয়ার তোড়জোড় চলছে বলে সূত্র জানায়।
সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. আলী আকবর সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরীর আত্মীয় পরিচয়ে নওফেল শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালে বোর্ডে দাপিয়ে বেড়াতেন। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে গিয়ে উৎকোচ গ্রহণেরও অভিযোগ রয়েছে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। বিজি প্রেসে দায়িত্ব পালন করার সময়েও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
সহকারী কলেজ পরিদর্শক আবুল কাশেম মো. ফজলুল হক আওয়ামী লীগ আমলে শিক্ষা বোর্ডে কক্সবাজারের এমপি সাইমুম সরোয়ার কমলের ঘনিষ্ঠ হিসেবে দাপটের সাথে চলতেন। বর্তমান চেয়ারম্যানের সাথে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে অনুমোদন কমিটির বৈঠকি সিদ্ধান্তকে পাল্টে ফেলে বিতর্কিত একটি প্রতিষ্ঠানকে ইংরেজি মাধ্যমে পাঠদানের অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রেও এই কর্মকর্তার নাম আলোচনায় রয়েছে।
অভিযোগ আছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান ইলিয়াস উদ্দিন একজন আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তিনি বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের সময়ে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কাছ থেকে ডিও লেটার নিয়েছিলেন। তবে ৫ আগস্টের পর তিনি রূপ বদলে ফেলেন।
এসব বিষয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান ইলিয়াছ উদ্দিন আহাম্মদের সাথে মুঠোফোনে যোগযোগ করা হলে তার কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।