আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারী বাড়াতে হবে

3

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন এলাকায় ধর্মীয় সহিংসতা বেড়ে চলছে। এ সংঘাত চলছে ধর্মে ধর্মে, সম্প্রদায় সম্প্রদায়ে, একই ধর্মে বিশ্বাসী নানা মতের মানুষ ও গোষ্ঠীর মধ্যে। ধর্মীয় সংঘাত ও অসহিষ্ণুতা দেশ ও সমাজের জন্য বড় পীড়াদায়ক। এটি কারো কাম্য হতে পারে না। ঐতিহ্যগতভাবে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের জন্য বাংলাদেশের সুনাম রয়েছে। এরপরও রাজনৈতিক পটপরিবর্তন কিংবা নানা ইস্যুতে মাঝেমধ্যে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা প্রত্যক্ষ করতে হয়, যা দেশের ভাবমুর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। সম্প্রতি দেশের পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক প্রেক্ষপটে বিভিন্ন জেলা উপজেলায় সনাতন ধর্মাবলম্বী, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছাড়াও শান্তি ও সাম্যের ধর্ম ইসলামে বিশ্বাসী মুসলমানদের অভ্যন্তরেও নানা মত ও পথের মানুষের মাঝে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে দেখা যাচ্ছে, যা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার সফল বিপ্লবের পরপর প্রথম আঘাত আসে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপর। দেশের বিভিন্ন জায়গায় তাদের মন্দির ও ঘরবাড়ি ভাঙচুর করা হয়। অপরদিকে বিভিন্ন জায়গায় সমানতালে চলে মসজিদ-মাদ্রাসা দখল ও সুফি-সাধক ও পীর আউলিয়াদের মাজার ভাঙচুরের ঘটনা। পরবর্তীতে পার্বত্য জেলায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মন্দিরেও হামলার ঘটনা ঘটে। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, এসব ঘটনা যখন সংঘটিত হচ্ছে, তখন দেশের অধিকাংশ থানা ছিল পুলিশশূন্য। কারণ ৫ আগস্ট বিকাল থেকে সবচেয়ে বেশি হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে থানাগুলোতে। এসময় অনেক পুলিশ হতাহত হন। ফলে সমগ্র দেশ প্রায় দুই সপ্তাহ ছিল পুলিশশূন্য। এ সুযোগে বেড়ে যায় ধর্মীয় উন্মাদনা, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতর অবনতি। তবে এসময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা কোন কোন জায়গায় স্কুল কলেজ মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রী এমনকি এলাকাবাসীর মন্দির-মসজিদ পাহারা দেয়ার ঘটনা সংবাদপত্রে প্রকাশিত হতে দেখা যায়। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ কোনকালেই সাম্প্রদায়িক ছিল না, সুযোগসন্ধানী কিংবা রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে কেউ সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিতে চাইলে তাদের প্রতিরোধে সাহসি ভূমিকা রেখেছেন সাধারণ মানুষ। এবারও এর ব্যত্যয় দেখা যায় নি। কিন্তু সম্প্রতি পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)কে কেন্দ্র করে মুসলমানদের মধ্যে বিবাধমান গোষ্ঠীগুলোকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উস্কানিমূলক পোস্ট দিতে দেখা গেছে। আবার ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে আয়োজিত জুলুস ও র‌্যালিতে হামলার ঘটনাও ঘটতে দেখা গেছে। এতে বেশ কয়জনের হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। সম্প্রতি ভারতের মোম্বাইয়ে ইসলামের প্রবর্তক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর বিরুদ্ধে কটুক্তিমূলক বক্তব্যের প্রতিবাদ করতে গিয়েও মুসলমানদের অভ্যন্তরীণ বিবাদের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। গত সোমবার পটিয়ায় এ ধরনের একটি ঘটনায় রণক্ষেত্র পরিনত হয়েছে সড়ক। দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এ সংক্রাš প্রতিবেদনে উল্লেক করা হয়, পটিয়ায় মহানবী (সা.)কে কটূক্তি করে পোস্ট দেয়ায় পার্থ বিশ্বাস পিন্টু নামক এক যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে ধর্মীয় অবমাননা আইনে মামলাসহ তথ্য প্রযুক্তি আইনেও মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশ আসামী গ্রেফতার করার পর যখন আইন প্রক্রিয়ায় মামলার ব্যবস্থা করছেন তখন পটিয়া সদরে অবস্থিত কউমি ঘরণার জামেয়া জমিরিয়ার শিক্ষার্থীরা থানার সামনে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। বিক্ষোভ চলাকালে পটিয়া সেনা ক্যাম্পের দায়িত্বরত মেজর তাইজের গাড়িটি ক্যাম্পে যাওয়ার পথে বিক্ষোভকারীদের রোষানলে পড়ে। এসময় গাড়িটি আক্রমণ করে। এতে গাড়ির চালক, মেজরের ভাই ও শিশুসন্তান গুরুতর আহত হয়। এঘটনা পুরো চট্টগ্রামে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল দিনভর। মাদ্রাসার ছাত্ররা বিক্ষোভ করবে- নবীর অবমাননাকারী যেই হোক তার শাস্তির দাবি জানিয়ে প্রশাসনের কাছে দাবি জানাতে পারে। কিন্তু সেনাবাহিনীর বিশেষায়িত গাড়িগুলোতে কেন হামলা করা হবে! তাই নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ে সবখানে। একই দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাওলানা তাহেরীর উপর হামলার ঘটনা উত্তেজনার মাত্রাটা যেন বেড়েই গেল। এমনিতে দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা একেবারে নেই বললেই চলে। এর উপর ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক মানবতার নবীকে নিয়ে কটূক্তিমূলক পোস্ট, প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও সেনাবাহিনীর গাড়ি ভাঙচুর ইত্যাদি ঘটনা দেশের সামগ্রিক বিশৃঙ্খলাকে উস্কে দেয়। আমরা মনে করি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এ বিষয়ে আরো কঠোর দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। যেকোন ধর্মীয় উস্কানি ও সংঘাত দেশের মানুষ সমর্থন করে না। বিশ্বাস ও মতের ভিন্নতা থাকতে পারে তবে এটি যেন সংঘাত ও অসহিষ্ণুতায় রূপ না নেয় সে বিষয়ে আইন-সৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হতে হবে। বাড়াতে হবে নজরদারী।