আইন-শৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কা চিকনদন্ডী ঘিরে

3

হাটহাজারী প্রতিনিধি

হাটহাজারীতে গঠিত হচ্ছে নতুন থানা ‘হালদা’। এ উপলক্ষে হাটহাজারী মডেল থানাকে পৃথকীকরণের কাজ শুরু হয়েছে। যার মধ্যে উপজেলার ৫টি ইউনিয়নকে সংযুক্ত করা হচ্ছে। ইউনিয়নগুলো হলো মাদার্শা, দক্ষিণ মাদার্শা, চিকনদন্ডী, শিকারপুর ও বুড়িশ্চর। এদের মধ্যে চিকনদন্ডী ইউনিয়নের বাসিন্দারা নতুন নয় পুরনো থানাতেই থাকতে চান, অন্যথায় আন্দোলনে নামার হুমকি দিচ্ছেন। তারা বলছেন, চিকনদন্ডী ইউনিয়নকে নতুন থানার (হালদা) সাথে সংযুক্ত করলে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হলে প্রস্তাবিত নতুন থানা থেকে পুলিশ আসতে আসতে দুষ্কৃতকারীরা অপকর্ম করে ততক্ষণে পালিয়ে যাবে।
জানা যায়, উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে ২৪৬.৩২ বর্গ কিলোমিটারের এই জনপদটিতে প্রায় ৪ লক্ষ ৯৮ হাজার ১৮২ লোকের বসবাস। তাই, দক্ষিণ হাটহাজারীর আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে উপজেলা সদর থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে বুড়িশ্চর ইউনিয়নে ২০১৮ সালে মদুনাঘাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা হয়। এরপর থেকে বুড়িশ্চর এবং শিকারপুর ইউনিয়নের আইনশৃংখলা পরিস্থিতি ও মামলার তদন্ত হতো কেন্দ্রটিতে। ওই দুই ইউনিয়নে আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রটির প্রয়োজনীয়তা ছিল। এর মধ্যে হাটহাজারী মডেল থানাকে পৃথকীকরণ তথা নতুন পূর্ণাঙ্গ করে হালদা থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ শুরু হয়েছে। নতুন থানায় উপজেলার উত্তর মাদার্শা, দক্ষিণ মাদার্শা, চিকনদন্ডী, শিকারপুর ও বুড়িশ্চরের প্রায় ৪১.৯৭ বর্গ কিলোমিটারের ১ লক্ষ ৬৪ হাজার ৭৩১ জন লোকের ইউনিয়নকেও নতুন সংযুক্ত করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে উপজেলা সদর থেকে ১৬ কিলোমটার দূরে হওয়ায় হাটহাজারী মডেল থানা এলাকায় আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, অপরাধ দমনসহ জনগণের আকাংক্ষা ও প্রত্যাশা অনুযায়ী পুলিশী সেবা প্রদান এককভাবে সময় সাপেক্ষ ও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। তাই দ্রæততার সাথে সেবাসমূহ নিশ্চিত করতে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই মহাসড়কের যে স্থানে মদুনাঘাট তদন্ত কেন্দ্র রয়েছে উক্ত স্থানকে কেন্দ্র করে প্রয়োজনীয় ভূমি বরাদ্দপূর্বক হালদা নদীর নামানুসারে ‘হালদা খানা’ স্থাপন করার প্রস্তাব প্রেরণ করেন জেলা পুলিশ সুপার।
এমন খবর চিকনদন্ডী ইউনিয়নের বাসিন্দাদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ায় তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। উক্ত ইউনিয়নের নাগরিকরা নতুন হালদা থানার সাথে সংযুক্ত হতে অনাগ্রহ প্রকাশ করছেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে তীব্র সমালোচনা। অনেকে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছেন। কোনো মতেই হালদা থানার সাথে সংযুক্ত হতে চান না চিকনদন্ডী ইউনিয়নের বাসিন্দারা। তারা হাটহাজারী মডেল থানার সাথেই যুক্ত থাকতে চান।
বিষয়টি নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও হাটহাজারী সদরের বাসিন্দা ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন জানান, উপজেলার চিকনদন্ডীসহ নিয়ে নতুন থানা (হালদা) গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। এতে সমস্যা হলো চট্টগ্রাম-রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের নতুন পাড়া থেকে ইসলামিয়া হাট (বাদামতল) পর্যন্ত রাস্তার পূর্বপাশ চিকনদন্ডী এবং পশ্চিম পাশ ১নং দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডে অবস্থিত। এখন এই রাস্তার পূর্বপাশে/পশ্চিম পাশে আগামী দিনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে মদুনাঘাট থেকে পুলিশ আসতে আসতে দুষ্কৃতকারীরা অপকর্ম করে চলে যাবে। এমতাবস্থায় চিকনদন্ডী ইউনিয়নকে হাটহাজারী থানার অন্তর্ভুক্ত রাখা জরুরি।
প্রসঙ্গত, গত ১৯ এপ্রিল জেলা পুলিশ সুপার হাটহাজারী মডেল থানাকে বিভক্ত করে ‘হালদা থানা’ স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ পুলিশের আডিশনাল ডিআইজি (ওএন্ডএম) বরাবরে প্রস্তাব প্রেরণ করেন।
বিষয়টির প্রতিবাদ জানিয়ে চিকনদন্ডী ইউনিয়নের বাসিন্দা নুরুল হক বাবুল বলেন, হালদা থানা হতে যাচ্ছে এটা আমি মনে করি চিকনদন্ডীবাসীর জন্য কোন আনন্দের বিষয় নয় বরং এটা আমাদের জন্য যেমন শঙ্কার তেমনি ভোগান্তির। কারণ উপজেলা সদর তথা হাটহাজারী মডেল থানার সাথে তাদের এলাকার মানুষের যোগাযোগ বেশি। বুড়িশ্চরে প্রস্তাবিত হালদা থানায় তাদের স্থানান্তর হলে মানুষের ভোগান্তি বাড়বে এবং আমাদের অনেক সময় নষ্ট হবে। চিকনদন্ডীর একজন স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে আমি এর বিরোধিতা করছি এবং তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা চিকনদন্ডীবাসী তা কখনো মানবো না। প্রয়োজনে কঠোর আন্দোলনে নামবো।
এ ব্যাপারে জানতে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম সানতুর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। পরবর্তীতে মুঠোফোনে হাটহাজারী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আবু মাহমুদ কাওসার হোসেন জানান, উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে বুড়িশ্চর ইউনিয়নে হালদা নামে একটি নতুন থানা করার প্রস্তাব আছে বলে জানতে পেরেছি।