আইনের দ্রুত এবং যথাযথ প্রয়োগই পারে ধর্ষণ রুখতে

1

রতন কুমার তুরী

একটি সমাজের পচাগলা নর্দমার কীট হচ্ছে হচ্ছে নারী ধর্ষণকারীরা। এদের বিকৃত মানসিকতা কখনও কখনও এতো নিচে নেমে যায় যে শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত এদের হাত থেকে রক্ষা পায়না। সাম্প্রতিক মাগুরায় একজন আট বছর কন্যা শিশু তারই আপনজন দ্বারা ধর্ষিতো হওয়ার পর প্রশ্ন জেগেছে, কোথায় নিরাপদ আমাদের কন্যা শিশুরা? এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে আমাদের সমাজ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে ? তাহলে কি দিনদিন আমাদের সমাজ অসহিষ্ণু হয়ে ওঠছে ? আমরা কি দিনদিন মানবিক মূল্যবোধ হারাচ্ছি। কি অপরাধ ছিলো মাগুরার ছোট্ট শিশুটির ? এ বয়সে যে শিশুটি এ সুন্দর পৃথিবীতে ঘুরে বেড়ানোর কথা। জীবন এবং সমাজের মানুষ সম্পর্কে ভালো ভালো ধারনা পোষন করার কথা, সেখানে সে ধর্ষিতো হলো অধিক বয়সি একজন ইতর শ্রেণির অমানুষ কর্তৃক। এ ছোট্ট মেয়েটি এখন কি করবে ? এ সমাজ সম্পর্কে এ শিশুটির এখন কী ধরনের ধারনাইবা জন্ম নেবে।
সমাজের মানুষ যদি এ শিশুটির প্রতি সহানুভূতিশীল না হয় এবং আইন যদি দ্রুত এ নরপশুর বিচার না করে তাহলে মানবতা যে আমাদের পরিহাস করবে সেকথা বলাই বাহুল্য। বর্তমান আধুনিক পৃথিবী হচ্ছে সাম্য এবং মানবিক পৃথিবী। এখানে নারী পুরুষ একসাথে কাজ করে সুন্দর একটা পৃথিবী গড়ে তুলেছে। পৃথিবীর সবদেশে নারী পুরুষ এখন সমান তালে কাজ করে যাচ্ছে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার জন্য। ফলে পৃথিবীর প্রায় সবদেশে নারীদের সম্মানের চোখে দেখা হয় এবং তাদের রক্ষায় কঠোর আইন প্রয়োগ করা হয়। আমাদের দেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী শিশু ধর্ষণ, নারী হেনস্তা সচেতন মানুষজনকে দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। কারণ অতীতেও এ ধরনের বেশকিছু ঘটনার কোনো বিচার হয়নি। সমাজে ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে, এসব ঘটনার যথাযথ বিচার না হওয়া এবং অভিযুক্ত বুকফুলিয়ে সমাজে চলাফেরা করা।
ধর্ষণের মতো ঘটনার যদি দ্রæত বিচার হতো তাহলে ধর্ষণ অনেকটাই কমে যেতো। আমরা অতীতেও লক্ষ্য করেছি ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটার পরও আইন অনুযায়ি স্বাক্ষী প্রমাণ হাজির করতে করতে ধর্ষিতার আর আদালতে ওঠতে শক্তি থাকেনা। অনেকেই আদালতে মামলা চালিয়ে গেলেও আইনের ফাঁক দিয়ে বের হয়ে ধর্ষিতাকেই তারা হুমকি ধমকি দিতে থাকে। এক্ষেত্রে আইনকে আরো কীভাবে ধর্ষিতার পক্ষে সহজিকরণ করা যায় সে বিষয়ে আইন বিশেষজ্ঞদের ভাবা উচিত। আর একটা বিষয় হচ্ছে ধর্ষণের বিচারের রায় খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে দেয়া উচিত কারণ আমাদের সমাজে বেশিরভাগ মেয়েই এসব বিষয় নিয়ে সহজে মুখ খুলতে চায়না। না চাওয়ার কারণও আছে, তারা জানে এসব নিয়ে তাদেরকে আদালতের বারান্দায় দীর্ঘদিন ঘুরতে হবে, নানান ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে তাই তারা মামলায় উৎসাহ দেখায়না। যদি আইন করে ধর্ষণের বিচার অল্প সময়ের মধ্যে করা যেতো তাহলে অনেক ধর্ষিতাই মামলা করার প্রতি উৎসাহিত হতো এবং ধর্ষকরাও এমন কাজ থেকে অনেকটাই বিরত থাকতো।
বর্তমানে আমাদের দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা কঠোর হস্তে দমন না করলে এটি আরো বাড়বে। সমাজে ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সহিংসতা রুখতে হলে রাষ্ট্রকে সর্বাগ্রে পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনবোধে কঠোর আইন করে এসব নরপশুদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। মোটকথা যে কোনো মূল্যে ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সহিংসতা রুখতে হবে। আসুন সবাই নারী প্রতি সহিংসতা রুখতে এক হই এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধর্ষকসহ নারী প্রতি সহিংসতাকারীদের ধরিয়ে দিতে সহায়তা করি। আমরা প্রত্যাশা করবো বর্তমান সরকার সাম্প্রতিক মাগুরায় ঘটে যাওয়া ধর্ষণ ঘটনার দ্রæত বিচার করে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন এবং তার সাথে সাথে যেখানেই নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা ঘটবে সেখানেই কঠোর হস্তক্ষেপ করবেন।
লেখক : কলেজ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক