মুদির দোকানের ভোগ্যপণ্য থেকে কাঁচাবাজারের শাক-সব্জি সবকিছুতেই অগ্নিমূল্য। কোথাও দম ফেলা যাচ্ছেনা। হাতে ধরা যাচ্ছেনা। সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রায় নাভিশ্বাস উঠেছে। সম্প্রতি ডিমের বাজারের অস্থিরতাই প্রমাণ করে, আসলে বাজার সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। সরকার ডিম আমদানি করেছো, বাজার মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে, কিন্তু যে লাউ সেই কদু। এটি অবশ্যই নতুন নয়; দীর্ঘ সময় ধরে এ অবস্থা চলে আসছে, কিন্তু কোনো সমাধান হচ্ছে না। গত সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব পণ্যের দাম কমাতে ব্যর্থ হয়েছিল। তাদের জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার ক্ষেত্রে এটাও ছিল অন্যতম কারণ। জুলাই-আগস্টে ছাতৃর জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের মানুষ আশাবাদী হয়ে উঠেছিল, নতুন অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার এই সংকট থেকে সাধারণ মানুষকে উদ্ধার করবে বলে। কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনাকাটার ক্ষেত্রে যে আশাভঙ্গ হয়েছে, সেটা বাজারে গেলে এবং সাধারণ মানুষের মনের কথা শুনলে বোঝা যায়।
অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার গঠনের কিছুদিন পরেই বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেছিলেন, কাঁচাবাজারসহ সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমতে চার-পাঁচ মাস সময় লাগবে। এর মধ্যে দুই মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। সরকার কিছু জিনিসের আমদানি শুল্ক মওকুফ করেছে। ভারত থেকে কিছু ডিম আমদানি করেছে, আরো ডিম আমদানির কথা বলেছেন। কিন্তু কোনো কিছুতেই দাম কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। খুচরা বাজারে প্রায় সব সবজির দাম ৮০ থেকে ১২০ টাকার নিচে নেই। গরিবের আমিষ বলে খ্যাত ডিমের দাম এখন প্রতিটি ১৫ /১৬ টাকা। আলু তো গরীবের খাবারের প্লেটে এখন ঠাঁই পায় না। অর্থাৎ সাধারণ কেটে খাওয়া মানুষগুলো একবেলা সব্জি দিয়ে ভাত খাবে সেই পরিস্িিথতও নেই। তাহলে মানুষ বাঁচবে কীভাবে? শুধু কেটে খাওয়া, নগরীব অসহায় মানুষ নয়, মধ্যবিত্ত চাকরিজীবী মানুষও সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন? মানুষের আয় বাড়ছে না, বরং ব্যয় বেড়েছে অনেক। অনেকেই খাদ্যতালিকা থেকে পছন্দের খাবার বাদ দিতে বাধ্য হয়েছেন। এদিকে কৃষক ফসল ফলিয়ে তার ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। অথচ তাঁদের উৎপাদিত পণ্যই চড়া দামে কিনতে হচ্ছে সাধারণ ভোক্তাকে।
সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কৃষকরা ক্ষেত থেকে তুলে যে সবজি বাজারে এনে কেজি ২০/৩০ টাকা বিক্রি করে, সেই সবজিই কয়েক দফা হাত বদলে শহরে আসতে আসতে পণ্যটির দাম ৮০ থেকে ১২০ টাকায় চলে যায়। মূলত কয়েকদফা হাত বদল ও মধ্য সত্বভোগীদের কারণে পণ্যের দাম বাড়ে। এর সঙ্গে রয়েছে পণ্য পরিবহনের সময় কয়েক জায়গায় চাঁদা দেওয়ার প্রবণতা। এছাড়া অদৃশ্য শক্তি সিন্ডিকেট তো আছেই। আগের সরকারের আমলের সিন্ডিকেট ভূত এখনও স্বমহিমায় বহাল আছে, তা বলার আর অবকাশ নেই। এরপরও পণ্যের দাম বাড়ানোর কারণগুলো সাধারণ জনগণ মোটা দাগে জানলেও তদারককারী কর্তৃপক্ষ কেন যেন তা বুঝতে পারে না, তা আমাদের বোধগম্যনহয় না। বাজারের ওপর সরকারের কেন কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না? ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বিভিন্ন অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়- এ কথা তো বহু বছর ধরে বলা হচ্ছে। বিগত দলীয় সরকার তাদের লাগাম টানতে পারেনি, কিন্তু নির্দলীয় সরকার পারবে না কেন?
মূল্য কমিয়ে আনার লক্ষ্যে অন্তর্র্বতী সরকার ইতিমধ্যে টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন টিম খুচরা বাজার তদারকি শুরু করেছে। পাশাপাশি কিছু পণ্য আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব আপাতত সমস্যা সমাধানের উপায় হলেও আমাদের আশঙ্কা যে, এতে প্রকৃত সমাধান আসবে না। কারণ পণ্যের বাজার পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। তাদের আগে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। ব্যবসয়ীদের সাথে কথা বলতে হবে। প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। জেল-জরিমানারও ব্যবস্থা করতে হবে। তবে হার্ডলাইনে যাওয়ার আগে আলাপ আলোচনার বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা অতীতে দেখেছি ব্যবসায়ীদের ক্ষেপিয়ে কোন লাভ হয়নি, তাই তাদের মনস্থাত্বিকভাবে নিয়ন্ত্রণে কৌশলী হতে হবে। আমরা ব্যবসায়ীদের কাছে মানবিকতা ও বিবেকসমৃদ্ধ জ্ঞান ও কর্ম প্রত্যাশা করতে পারি। তবে ানেকে বলে থাকেন, ব্যবসায়ীদের কাছে বিবেক, মানবিকতার আশা করা বৃথা। কারণ তাঁদের কাছে মুনাফার চেয়ে বড় কোনো বিষয় নেই।
আমরা মনে করি, বাজার ব্যবস্থাপনার ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এর জন্য পণ্য হাতবদলের সংখ্যা কমাতে হবে। ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত মুনাফা করার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। সাধারণ মানুষের নাগালে আসেনি পণ্যের দাম এর দায় নিতে হবে সরকারকেই। সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে দ্রæত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবে সচেষ্ট হবেন- এমনটি প্রত্যাশা।