শামসুদ্দীন শিশির
কিশোরদের ভুল ধরা, তাদের দোষ দেওয়া, সমালোচনা করা আমাদের অর্থাৎ বড়দের একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কেন? ওরা কী কিছুই ভালো করে না? ওদের ভেতর ভালো কিছু দেখা যায় না? কেবলই মন্দ? শুধুই খারাপ কাজ করে ওরা? মানলাম ওরা মন্দ। খারাপ কাজ করে ওরা। কিন্তু আমি বা আপনি? আমরা তো ভালো! কিশোরদের কোন কোন ভালো কাজটি করার জন্য তাদের পরামর্শ দিয়েছি কিন্তু তারা শোনেনি। এখন আর কোনো উত্তর নেই। এর মানে আমরা বড়রা আমাদের দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করিনি বা করি না। আমাদের চোখ শুধু মন্দই দেখে ভালো কিছু দেখে না। আমরা শুধু কিশোরদের বকাই দিতে পারি ভালো কোনো পরামর্শ দিতে পারি না। আমি জোর গলায় বলতে পারি আমাদের মা-বাবা, সমাজ, শিক্ষক ও রাজনীতিবিদদের ইতিবাচক চিন্তা, সৃজনশীল দিক নির্দেশনা কিশোরদের সৎপথে পরিচালিত করে একটি সুন্দর সুশৃঙ্খল সমাজ বির্নিমানে অনন্য ভূমিকা পালন করতে পারি।
প্রথমত : কিশোরদের দেখতে যেন সুন্দর দেখায়, মানুষের সন্তান মানুষের মতো দেখায় সেজন্য মাথার চুল থেকে শুরু করে পায়ের জুতা পর্যন্ত রুচিশীল করার জন্য পরামর্শ দিতে পারি। প্রয়োজনে তাদের জন্য সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারি। আমি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি কিশোরদের কোনো কিছু সুন্দর করে বুঝিয়ে বললে তারা কিন্তু মন দিয়ে শোনে এবং বাস্তবায়নের চেষ্টা করে।
দ্বিতীয়ত : ছোটো বড় সবাইকে শ্রেণি ভেদে স্নেহ ও শ্রদ্ধা করার বিষয়টি বুঝিয়ে বললে নিশ্চয়ই তারা শুনবে। কাজটি শুরু করতে হবে পরিবারের সদস্যদের দিয়ে। মা-বাবাসহ পরিবারের বয়োঃজ্যেষ্ঠদের শ্রদ্ধা ও ছোটোদের স্নেহ করার শিক্ষা পরিবারেই দিতে হবে। বার বার বলতে হবে। আমরা বড়োরা কোনো কথা একবার বলেই বিরক্ত হয়ে যাই। ছোটোদের সাথে খারাপ ব্যবহার করি। এমন আচরণ আমাদের পরিহার করতে হবে।
তৃতীয়ত : বিদ্যালয়ের শিক্ষক, সহপাঠী ও অন্যান্যদের সাথে কেমন আচরণ করবে তাও শেখাতে হবে। নিয়মিত শ্রেণি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা। শিক্ষকদের আদেশ- নিষেধ মেনে চলার দীক্ষাও দিতে হবে। ধৈর্য ধরে মন দিয়ে অন্যকে শোনার মানসিকতা তৈরি হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই। সুতরাং আমরা সেই সুযোগটি কাজে লাগাবো। স্কুলের নির্দিষ্ট গন্ডি পেরিয়ে কেউ কেউ কলেজে ভর্তি হবে। অনেকেরই মাধ্যমিক স্তর প্রান্তিক শিক্ষা। প্রান্তিক শিক্ষা যাদের জন্য তাদের কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার দ্বার উন্মোচিত করে দিতে হবে। হাতে-কলমে শিক্ষার ভবিষ্যৎ ফল সম্পর্কে তাদের ধারণা দিতে হবে। তবে তারা আত্মবিশ্বাসী হয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখবে।
চতুর্থত : কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা শেষে কিশোরদের বিভিন্ন শিল্প কারখানার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। কৃষিজাত পণ্য সামগ্রী উৎপাদন ব্যবস্থার সাথেও তাদের পরিচয় ঘটানোর দায়িত্বও আমাদেরই। আবার ক্ষুদ্র শিল্প ও কুটিরশিল্পের বিভিন্ন উৎপাদন সামগ্রী সংগ্রহ ও বাজারজাতকরণের উপর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে তাদের অর্থ উপার্জনের পথ প্রশস্ত করতে হবে। ফলে কিশোররা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আত্ম প্রত্যয়ী হতে পারবে। সংসারের হাল ধরতে পারবে এবং সাংসারিক কাজে আর্থিক সহায়তাও দিতে পারবে।
প্রিয়জন, আসুন আমরা আমাদের আগামীর পৃথিবী কিশোরদের সঠিক দিক- নির্দেশনা দিয়ে পরিবার, সমাজ, দেশ এবং পৃথিবীর সম্পদে পরিণত করি।
লেখক : শিক্ষক প্রশিক্ষক