‘অস্থিতিশীল পরিস্থিতি’ সৃষ্টির পাঁয়তারা মনে করছে বিএনপি

4

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকার পতনের আড়ই মাস পর চট্টগ্রামে হঠাৎ করে ঝটিকা মিছিল বের করেছে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। গত শুক্রবার মধ্যরাতে নগরের জামালখান এলাকায় এ মিছিল বের করা হয়। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ এবং ‘শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেয়া হয় মিছিল থেকে। এদের কারও কারও হাতে অস্ত্রও দেখা গেছে। এ ঘটনাকে ‘অস্থিতিশীল পরিস্থতি’ তৈরির পাঁয়তারা মনে করছে বিএনপি।
শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার পর কিছু লোক জামালখান সড়কে এ বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিলটিতে অংশ নেওয়া বেশিরভাগই ছিল তরুণ। কয়েকটি মোটরসাইকেলযোগে তারা জামালখান মোড় এলাকায় ঝটিকা মিছিলটি বের করে। তবে তাদের কারো পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মিছিলের পরে রাতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আওয়ামী লীগের ভেরিফাইড পেইজ থেকে তিনটি ভিডিও শেয়ার করে লেখা হয়, ‘চট্টগ্রামে জয়বাংলা স্লোগানে প্রকম্পিত রাজপথ। অন্যায়, অত্যাচার, নির্যাতন করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকদের দমিয়ে রাখা যায় না।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘মনে হয় না তারা কোনো ধরনের শক্তি দেখানোর জন্য ঝটিকা মিছিল করেছে। তারা ভিডিও দেখানোর জন্য এটা করেছে। হয়তো কোথাও তাদের এই ভিডিও দেখানোর প্রয়োজন ছিল। ৫ আগস্টের আগে অস্ত্র নিয়ে ঘুরেছিল এমন অনেকেই এই মিছিলে ছিল। এদের বেশ কয়েকজনকে পুলিশ চিহ্নিত করেছে। কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছে। আওয়ামী লীগ আগামী একশ’ বছরেও আর কখনো একত্রিত হতে পারবে না। যদি তারা একত্রিত হতে চায়, পাবলিক তাদের বিতাড়িত করবে।’
গণ-আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর হামলার ভয়ে দেশের বেশিরভাগ এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা গা ঢাকা দিয়েছিলেন। শীর্ষ নেতারা অনেকেই দেশ ছেড়েছেন আবার কেউ কেউ দেশ ছাড়ার চেষ্টাকালে গ্রেপ্তার হয়েছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত হওয়ায় দেশে অবস্থান নেওয়া কেউ কেউ এলাকায় ফিরতেও শুরু করেছেন। নেতাদের প্রায় ‘আত্মগোপন’ থাকা অবস্থায় শুক্রবার রাতে চট্টগ্রামে প্রথমবার ঝটিকা মিছিল বের করে আওয়ামী লীগ।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর বলেন, ‘রাতের আঁধারে তারা মিছিল করেছে। নিশ্চয় তাদের খারাপ চিন্তাভাবনা আছে। দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করতে পারে। নানাভাবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। এসব দুষ্কৃতিকারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। পরিকল্পিতভাবে তারা অরাজকতা করতে চায়। প্রশাসনকে কঠোরভাবে এসমস্ত অপকর্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
এদিকে ঝটিকা মিছিলকারী ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে গতকাল শনিবার দুপুরে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। জামালখানে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে তারা। বিক্ষোভ শেষে মিছিল সহকারে সিএমপি কার্যালয় ঘেরাও করে অবস্থান নেয়।
ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, ‘পুলিশের নিষ্ক্রিতার সুযোগে এ কর্মসূচি পালনের দুঃসাহস দেখিয়েছে আওয়ামী লীগ। কারণ অস্ত্র হাতে ছাত্র-জনতার ওপর হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছে এ রকম সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। চট্টগ্রাম থেকে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ ও তার দোসরদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যে দেশের মাটিতে এখনো শহীদদের রক্ত মিশে আছে সে মাটিতে ছাত্রলীগ-যুবলীগ খুনি শেখ হাসিনার পক্ষে স্লোগান দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যেহেতু ছাত্রলীগ-যুবলীগের খুনি-সন্ত্রাসীদের পুলিশ আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারেনি তাই তাদেরকে আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছি। জামালখানে খুনি শেখ হাসিনার পক্ষে যারা স্লোগান দিয়েছে তাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি প্রশাসন আইনের আওতায় আনতে না পারে তাহলে চকবাজার, কোতোয়ালী এবং পাঁচলাইশ থানার ওসিকে পদত্যাগ করতে হবে। একইসাথে সিএমপি কমিশনারকেও প্রত্যাহার করতে হবে। যদি না হয় আমরা আগামীকাল থেকে কঠোর কর্মসূচি দেব।’