অশান্তি সৃষ্টিকারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না

1

মো. দিদারুল আলম

আরবি ফ্যাসাদ শব্দের অর্থ কল্যাণের পরিপন্থী কাজ করা। মানুষের জন্য কল্যাণকর নয় জেনেও কোনো কাজ করলে তা ইসলামের দৃষ্টিতে ফ্যাসাদ বা বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি। সমাজে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা ইসলামে বিশ্বাসীদের কাজ নয়। পবিত্র কোরআনের অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা ফ্যাসাদ বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।ইসলাম শব্দের অর্থই তো শান্তি। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন, ‘তারা দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কাজ করে বেড়ায়; আল্লাহ ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্তদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা মায়িদা: ৬৪)অন্যত্র এরশাদ করেছেন, ‘দুনিয়ায় শান্তি স্থাপনের পর তোমরা তাতে বিপর্যয় সৃষ্টি কোরো না, তাঁকে (আল্লাহকে) ভয় ও আশার সঙ্গে ডাকবে।’ (সুরা আরাফ: ৫৬)
ইসলাম শব্দের অর্থই হচ্ছে শান্তি, শান্তি এর মধ্যেই রয়েছে। কোরআনের বহু জায়গায় এ কথাটি ব্যবহার করা হয়েছে। অনেক আয়াতের মধ্যে আল্লাহ তায়ালা শান্তির কথা উল্লেখ করেছেন। কারণ ইসলাম শান্তির ধর্ম, এটি প্রমাণিত সত্য বিষয়। এখানে দ্বিমত করার কোনো সুযোগ নেই। তাই ইসলামের নামে অশান্তি সৃষ্টি করা যাবে না। অশান্তি সৃষ্টিকারীকে মহান আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করেন না।
গত বৃহস্পতিবার টঙ্গীর তুরাগতীরে বিশ্ব ইজতেমা ময়দান দখলকে কেন্দ্র করে কাকরাইল মারকাজের মাওলানা জুবায়ের ও দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটল। এতে অন্তত চারজন নিহত ও অনেক সংখ্যক লোক আহত হয়েছেন। তাঁরা আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান করতে পারতো। সংঘাতের প্রয়োজন ছিল না। এভাবে যদি অশান্তি সৃষ্টি করা হয় ধর্ম সম্পর্কে সাধারণ মানুষের খারাপ ধারণার সৃষ্টি হবে। তাদের উভয় পক্ষের উচিৎ হবে তাঁরা যদি সমঝোতার মাধ্যমে এবার ইজেতেমা পালন করতে না পারে, তাহলে এবার তাঁদের পালন না করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। পালন করতে গিয়ে আবার যদি মারামারি-হানাহানি হয়, তবে আরো প্রাণ যাওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। কারণ সংঘাতের সম্ভাবনা থাকলে মোস্তাহাব পালন করা উচিৎ নয়। সংঘাত বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে মহান আল্লাহ তায়ালা নিষেধ করেছেন। সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনায় জুবায়ের ও সাদপন্থীরা একে অন্যের দিকে আঙুল তুলছেন। সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে সাদপন্থীদের নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন জুবায়েরপন্থীরা। তবে ইজতেমা মাঠের নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে পক্ষ দুটির রেষারেষি, সংঘর্ষ ও পরস্পরকে দোষারোপের ঘটনা এবারই প্রথম নয়।এর আগে, ২০১৮ সালেও তারা সংঘর্ষে জড়িয়েছিল এবং তাতে একজন নিহত ও শতাধিক মানুষ আহত হয়েছিল। এমনকি সবশেষ গত নভেম্বরেও ইজতেমা ও ঢাকার কাকরাইল মসজিদের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দু’পক্ষকে মুখোমুখি অবস্থানে দেখা গিয়েছিল।পরে সরকারের মধ্যস্থতায় পরিস্থিতি শান্ত হয় এবং অতীতের সমঝোতা মেনে জুবায়ের ও সাদপন্থীদের নেতারা সংঘাত এড়িয়ে চলার সিদ্ধান্ত নেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁরা তাঁদের সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারেনি।
ধর্মে ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারি সম্পর্কে কঠোর হুশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। আসল ধর্মের বাণী মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে। মহান আল্লাহ কোরআনে বলেন, তাদেরকে যখন বলা হয়, ‘পৃথিবীতে অশান্তিসৃষ্টি কর না’, তারা বলে,‘আমরাই তো শান্তি স্থাপনকারী’।(সূরা আল বাকারাহ, আয়াত-১১)।সমাজে অশান্তিসৃষ্টির মূল কারণ হলো ফেতনা ছড়ানো। এ কারণে কোরআনে ফেতনা তথা অশান্তিসৃষ্টির অপরাধকে হত্যার চেয়েও জঘন্য হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। আল্লাহ তায়াল ইরশাদ হয়েছে :হে মু’মিনগণ! তোমরা ইনসাফ প্রতিষ্ঠাকারী হয়ে যাও। আল্লাহর স্বাক্ষীরূপে-যদিও তা তোমাদের নিজেদের বিরুদ্ধে কিংবা পিতা-মাতা ও আত্মীয় স্বজনের বিরুদ্ধে হয়। সেব্যক্তি (যার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার আদেশ করা হচ্ছে) যদি ধনী বা গরীব হয় তবে আল্লাহ উভয় প্রকার লোকের ব্যাপারে তোমার চেয়ে বেশি কল্যাণকামী। সুতরাং এমন খেয়ালখুশির অনুসরণ করবে না, যা তোমাদের ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় বাধা হয়। তোমরা যদি পেঁচাও অর্থাৎ (মিথ্যা সাক্ষ্য দাও) অথবা (সঠিক সাক্ষ্য দেওয়া থেকে) পাশ কাটিয়ে যাও। তবে জেনে রেখো, আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কাজ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত। (নিসা : ১৩৫)
হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে : হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যারা মানুষের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহ তাদের প্রতি দয়া করেন না। (সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ফাযাইল, হাদীস ৬১৭২)আরো ইরশাদ হয়েছে : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, (জীবের প্রতি) দয়াকারীর ওপর দয়াময় আল্লাহ দয়া করেন। জমিনে বসবাসকারী মাখলুকের প্রতি দয়া কর, আসমানওয়ালা তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। (জামে তিরমিযী, হাদীস ১৯২৪)
ইজতেমার ইস্যু নিয়ে আমরা আর অশান্তি সৃষ্টি হোক তা চায় না। আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করুন। সমাধান করতে না পারলে এবার ইজতেমা পালন উভয় পক্ষ থেকে বন্ধ রাখুন। এটা সবার জন্য তথা দেশের জন্য মঙ্গলময় হবে। আল্লাহ সবাইকে বোঝার তাওফিক দিন।
লেখক : কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষক