অলসতা কি আসলেই খারাপ ব্যাপার?

50

লুচি গ্রান্সবুরি স্বঘোষিত ‘অলস’ এবং তিনি এ জন্য বেশ গর্ব করেন। যদি আপনি কিছুটা অলসতা প্রবণ হয়ে থাকেন তাহলে হয়তো এটি নিয়ে আপনার মধ্যে কিছুটা অপরাধ প্রবণতা কাজ করে। কিন্তু এখন বিষয়টি নিয়ে আপনি নতুন করে চিন্তা করতে পারেন।
এখানে লুচি, মেলবোর্নের একজন অভিনেতা, তার দাবি অলস হওয়াকে যতটা খারাপ ভাবা হয়, এটি আসলে ততটা খারাপ নয়। মজার বিষয়হলো গবেষকরাও তার তত্বকে সমর্থন দিচ্ছেন। লুচি বলছেন,‘অলস মানুষেরা বেশি ক্রেডিট ডিজার্ভ করে’। তার দাবি অলসতাকে প্রায়শই নেতিবাচক আচরণ হিসেবে দেখা হয় কিন্তু এটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা উচিত বলে মনে করেন তিনি। কারণ এটা আপনাকে অগ্রাধিকার নির্ধারণে সহায়তা করে। বেশ শক্তির যোগান দেয় এবং কাজ দ্রুত শেষ করতে পথ দেখায় যাতে করে একই কাজ দ্বিতীয়বার করতে না হয়।
লুচি বলছেন অনেক মহান উদ্ভাবনের উৎসাহ এসেছে অলসতা থেকেই। যেমন ধরুন টেলিফোন। অনেক হেঁটে হয়তো কারও বাসায় গিয়ে হেলো বলতে হতো। খবর বিবিসি
এ ধরণের চিন্তাভাবনার ক্ষেত্রে লুচি একা নন। মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসকে প্রায়শই উদ্ধৃত করা হয় যে তিনি বলেছেন কঠিন কাজের জন্য তিনি একজন অলস ব্যক্তিকেই পছন্দ করবেন কারণ কাজটি সহজে করার পথ তারাই খুঁজে বের করবেন। অলস সময় কিংবা আলস্য মস্তিষ্ককে পরিশ্রমী করে তোলে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মাসুদ হোসেইন বলছেন অলস হলে সেটি মস্তিষ্ককে পরিশ্রমী করে তোলে। তিনি অলস ও অলস নন এমন ব্যক্তিদের মধ্যে কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষাও চালিয়েছেন। আমরা তাদের একটি টেস্ট দিতে বলেছিলাম এবং এর ফলাফল হিসেবে অলস মানুষের মস্তিষ্ক বেশি শক্তি খরচ করে।
এটা খুব বেশি অবাক হওয়ার মতো বিষয় না যে অলসরা পুরষ্কারের জন্য কম চেষ্টা করবে কিন্তু যখন মস্তিষ্ক স্ক্যান করা হলো তখন বিজ্ঞানীরা খুব অবাক হলো।
প্রফেসর হুসেইন বলেন, অলসদের অনেক সময় নেতিবাচক ভাবে দেখা হয়। কিন্তু অলসদের মস্তিষ্ক অন্যদের চেয়ে আলাদা ছিলো। এটা গঠনশৈলীর দিক থেকে নয়বরং যখন তারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলো তখনকার সক্রিয়তার দিক থেকে।
তিনি বলেন বিস্ময়কর হলেও সত্য যে অলসদের মস্তিষ্ক ছিলো বেশি সক্রিয়। কিন্তু যদি অলস ব্যক্তিদের মস্তিষ্ক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় বেশি সক্রিয় থাকে তাহলে আলস্যকে নেতিবাচক হিসেবে দেখা হয় কেন?
আলসেমির ওপর সবার এমন দৃষ্টিভঙ্গির কারণ কী জানতে চাইলে কেমব্রিজে সামরিক ধাঁচের ফিটনেস ক্যাম্পে ক্লাস করা এক নারী বলেন বিছানায় সকালে থাকার চেয়ে তিনি পার্কে যেতে ভালোবাসেন। কারণ তিনি এভাবেই দিনটি শুরু করতে পছন্দ করেন। কিন্তু এটাকে ইতিবাচক ভাবা হলে বাসায় অলস থাকাকে কেন নয়?
এক ব্যক্তি বলেন যে এভাবেই আসলে ছোটবেলা থেকে শেখানো হয়। এটা নৈতিকভাবে ভুল। নিয়মিতভাবে এটা বলা হয়েছে। অভিভাবক বা সমাজ বলেছে। সমাজের প্রত্যাশা হলো অলসতা ভালো নয়। ছোটো বেলায় আমরা বিছানায় থাকার অনুমতি পেতাম না সকালে কারণ এটাকে খারাপ ভাবা হতো। আমার বাবা মা খুব ভোরে আমাদের উঠাতেন। এমনকি ছুটির দিনেও।
কেমব্রিজের শিক্ষক আনাস্তাসিয়া বার্জ বলেন, এমন দৃষ্টিভঙ্গিই অতীতে শক্তিশালী ছিলো এবং আলস্যের জন্য অনেকে শাস্তিও পেয়েছে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে এজন্য অনেককে শাস্তিও পেতে হয়েছে। কবি জোসেফ ব্রডস্কির বিচার হয়েছিলো এবং তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, আপনি কি করেন? আপনার কাজ কি? পেশা কি? জবাবে তিনি বলেন, আমি একজন কবি। কিন্তু এমন জবাব বিচারকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। পরে তাকে নির্বাসনে যেতে হয় যেখানে অন্তত তিনি কবিতা লেখার জন্য একটি কক্ষ পেয়েছিলেন।
লুচির মতে এখনকার প্রজন্ম এসব নিয়ে অনেক বেশি ভাবছে কারণ এগুলো মানসিক স্বাস্থ্যের সাথে সম্পর্কিত।