অভ্যুত্থানের ‘নায়কদের’ সামনে রেখে আসছে নতুন দল

2

পূর্বদেশ ডেস্ক

আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জুলাই অভ্যুত্থানের মূল নেতাদের সম্মুখ সারিতে রেখে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে ঘোষণা হতে যাচ্ছে নতুন রাজনৈতিক দলের আহব্বায়ক কমিটি।
জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নাগরিক কমিটির বর্তমান নেতৃত্বের বড় অংশ নিয়ে গঠন করা হচ্ছে এই নতুন দল।
বর্তমান কমিটিতে নেই এমন অন্তত ৩০ শতাংশ নতুন মুখ যুক্ত করে দেড়শ থেকে ২০০ জনের একটি আহŸায়ক কমিটির মাধ্যমে হবে দলের গোড়াপত্তন। ধীরে ধীরে এই কমিটির সদস্য সংখ্যা ৩০০ জনে উন্নীত হবে। ততদিনে সমান্তরালভাবে জেলা কমিটিগুলো সারা হবে। খবর বিডিনিউজের
সারাদেশে এ দলের কাঠামো ছড়িয়ে দিতে একের পর এক থানা কমিটি দিয়ে যাচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। দলের গঠনতন্ত্র, দর্শন, ঘোষণাপত্র, দলীয় প্রতীক চূড়ান্ত করতে চলছে নানা তৎপরতা। নতুন দলের আহব্বায়ক হিসেবে ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের নাম আলোচিত হচ্ছে। সদস্য সচিব হিসেবে আখতার হোসেন ও নাসির উদ্দিন পাটোয়ারীর নাম শোনা যাচ্ছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহব্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর নামও সদস্য সচিব হিসেবে আলোচনায় আছে। নতুন দলে তিনি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারেন বলে নাগরিক কমিটির মধ্যম সারির নেতাদের ধারণা।
জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহব্বায়ক সারওয়ার তুষার বলেন, ‘দল ঘোষণার জন্য একটা ঘোষণাপত্র, কর্মসূচি ও গঠণতন্ত্র- এই তিনটি বিষয় প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। যারা অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছে, তারা কে কীভাবে থাকবে; বাইরের যারা আসবে, তাদেরকে কীভাবে যুক্ত করব এগুলো নিয়ে এখন প্রস্তুতি চলছে। তরুণদের পাশাপাশি অন্তত ৩০ শতাংশ যাতে মধ্যবয়সী নেতৃত্ব রাখা যায়, সেই চিন্তাই প্রাধান্য পাচ্ছে। আগামি একটা সপ্তাহ আমাদের জন্য বেশ ক্রুশাল। ফেব্রæয়ারির শেষ সপ্তাহে দল ঘোষণা হবে’।
তুষার বলেন, ‘প্রবীণরা যারা আসবেন, তারা সবাই নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে পরিচিত। অনেকে প্রবাসে থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক তৎপরতায় ভ‚মিকা রেখেছিলেন। তারা কিন্তু এখন দেশে চলে এসেছেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন এমন লোক আমাদের মাঝে চলে এসেছেন। কিন্তু তরুণদের আধিক্য থাকবে। ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই থাকবেন তরুণ। নবীন ও মধ্যবয়স্কদের মধ্যে একটা সমন্বয় করার চেষ্টা আমরা করছি। এমন মধ্য বয়স্ক লোকজন আসবে, তরুণদের নেতৃত্ব মেনে নিতে যাদের কোনো সমস্যা হবে না’।

কমিটি কেমন হবে?
দলের কাঠামো কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে তুষার বলেন, একটি আহব্বায়ক কমিটি গঠন হবে। পরে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হবে। নির্বাহী কমিটি, কেন্দ্রীয় কমিটি, উপদেষ্টা পর্ষদ অথবা প্রেসিডিয়াম কমিটি থাকবে। উপদেষ্টাদের পরামর্শ আমরা নেব। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দলীয় ফোরামেই হবে। হয়ত দেড়শ সদস্য নিয়ে আহব্বায়ক কমিটি হবে। শেষ পর্যন্ত হয়ত সেটা ৩০০ জনে উন্নীত হতে পারে’।
নতুন দল হলেও জাতীয় নাগরিক কমিটি থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নাগরিক কমিটি একটা প্রেশার গ্রুপ হিসাবে থাকবে। নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মিলে একটা ইলেক্টরেট বডি থাকবে। তারাই ঠিক করবে যে কারা রাজনীতি করবে আর কারা নাগরিক কমিটিতে থাকবে’।
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহব্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখপাত্র সামান্তা শারমিন, যুগ্ম আহব্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহব্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সদস্য সচিব আরিফ সোহেল ও মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ নতুন রাজনৈতিক দলে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারেন বলে অনেকেই মনে করছেন।
ইসলামিক ছাত্র শিবির থেকে নাগরিক কমিটিতে আসা একটি পক্ষ বলছে, চমক হিসেবে কয়েকটি দলের তরুণ নেতাদের দেখা যেতে পারে এই দলে। কেউ কেউ দল ঘোষণার সময়, কেউ কেউ আবার নির্বাচনের আগে দলে যোগ দিতে পারেন।
ছাত্রশিবির ও বাম ছাত্রনেতাদের কয়েকজনের যোগদানের বিষয়টি এরই মধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে। বলা হচ্ছে, উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম সরকারের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করে রাজনীতিতে আসবেন। তবে অন্য দুই তরুণ উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভ‚ঁইয়া ও মাহফুজ আলমের এখনই পদত্যাগ করার সম্ভাবনা নেই।
নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম সারির নেতারা রাজনৈতিক দলে যোগ দিলে এই দুই সংগঠনেও আসবে নতুন নেতৃত্ব। দ্বিতীয় সারির নেতারা তখন সামনের সারিতে আসবেন।