অবৈধ বালু উত্তোলনের মেশিনসহ সরঞ্জাম জব্দ

1

পেকুয়া প্রতিনিধি

চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের বারবাকিয়া রেঞ্জের অধীনের বনভূমির অভ্যন্তরে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সময় বনবিভাগের কর্মকর্তা ও পেকুয়া থানার যৌথ অভিযানে ৪টি মেশিন ও সরঞ্চাম জব্দ করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এই অভিযান চালানো হয়।
জানা গেছে, উপজেলার বারবাকিয়া ও টইটং সীমান্তে প্রবাহিত ছড়ার পাদদেশে কৃত্রিম উপায়ে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে পাহাড় কাটার মাটি বালুতে রূপান্তর করে মেশিনের সাহায্যে সেই মাটি উত্তোলনের সময় অভিযান চালায় বনবিভাগ ও থানা পুলিশ। স্থানীয় চৌকিদার পাড়ার অংশ থেকে এসময় শফিউল আলম ও বাদশাহ’র মালিকানাধীন মেশিনসহ বালু উত্তোলনের সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। অন্যদিকে রমিজ পাড়া থেকে শাহাদত ও জমিরের মহাল থেকে বালু উত্তোলনের সময় বড় মেশিন ও ৫ ইঞ্চি পাইপ জব্দ করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, টইটং বিট ও বারবাকিয়া বিট অফিসারের সাথে গোপনে সমঝোতা করে মহালপ্রতি ৫০ হাজার টাকা মাসিক মাসোহারা ও কতিপয় সাংবাদিকসহ থানার পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বনবিভাগের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্বেও স্কেভেটর দিয়ে পাহাড় কেটে গর্তে ফেলা হয়। সেখান থেকে মেশিনের মাধ্যমে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে সড়কের পাশে নিয়ে স্কেভেটর দিয়ে ডাম্পার ট্রাকে তুলে তা বিভিন্ন জায়গায় পাচার ও বিক্রি করে আসছিল শফি সওদাগরের নেতৃত্বাধীন সংঘবদ্ধ একটি চক্র। বাদশা ও শফিউল আলম প্রকাশ শফি সওদাগর প্রায় ২ একরের মত পাহাড় কেটে প্রবাহিত ছড়ার চেয়ে ২০ থেকে ২৫ ফুট গভীরে খনন করে সেখানে উচু পাহাড় কেটে ভরাট করে মেশিন দিয়ে সেসব পাহাড়ি মাটি উত্তোলন করে আসছেন।
গত বৃহস্পতিবার বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা খালেকুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি টীম অভিযান চালালে বালু উত্তোলনকারীরা পালিয়ে যায়। এসময় বড় আকৃতির শক্তিশালী পাম্প মেশিন ও বালু উত্তোলনের বিভিন্ন প্রকার সরঞ্জামসহ জব্দ করতে গেলে অবৈধভাবে পাহাড়ি মাটি ও ছড়ার বালু উত্তোলনকারী শফি আলমের নেতৃত্বে সশস্ত্র লোকজন হামলা চালানোর আশঙ্কা তৈরি হয়। সে জন্য রেঞ্জ কর্মকর্তা পেকুয়া থানা পুলিশের সহযোগিতা নেন। অভিযানে পেকুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সিরাজুল মোস্তফাও অংশ নেন।
নিজের জায়গা দাবি করা শাহাদত উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, আমি নিজের জায়গা থেকে টইটং বিট অফিসার জমিরকে মাসিক ৫০ হাজার টাকা দিয়ে এবং শফি সওদাগরের মাধ্যমে মহাল ইজারাদারসহ দুই সাংবাদিকের মাধ্যমে থানার জন্য টাকা দিয়ে বালু উত্তোলন করেছি।
কালেক্ট্রী জায়গা হলে এভাবে পাহাড় বা ফসলী ভূমি খনন করে বালু বিক্রি করার আইনগত বৈধতা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৈধতা না থাকলে বিট অফিসার জমির টাকা নিয়েছে কেন? মহাল ইজারাদার তার কাছ থেকে গাড়ি প্রতি টাকা নেয় কেন? সম্প্রতি টইটং বালু মহাল ২৯ লাখ টাকায় কক্সবাজার থেকে ইজারা দেয়া হয়।
বনবিভাগের বারবাকিয়া রেঞ্জের অধীন গভীর বনাঞ্চলের অভ্যন্তরে কয়েকটি পয়েন্টে বালু উত্তোলন করে আসছে একটি সংঘবদ্ধ মহল। প্রথম বারের মতো সরকারিভাবে মোটা অংকের ইজারা মূল্যে মহালটি ইজারা দেয়া হয়। বালু মহালের ইজারা চুক্তি সমুদয় শর্ত পদদলিত করে স্থানীয় পাহাড়খেকোদের সংঘবদ্ধ করে বনাঞ্চলের রিজার্ভ পাহাড় কেটে বালুতে রূপান্তরিত করে বনবিভাগের টইটং বিট কর্মকর্তা জমির ও বারবাকিয়া বিট অফিসার শাহজাহান সজীব মাসিক মাসোহারার বিনিময়ে পাহাড় কেটে বালুতে রুপান্তরিত করার কৃত্রিম মহালের সুযোগ করে দেন।
অভিযান পরিচালনার সময় বিট অফিসার জমির-ই মেশিন মালিকদের ফোন করে সরে যেতে বলেছেন বলে স্থানীয় লোকজন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা খালেকুজ্জমান বলেন, পাহাড় কাটার ব্যাপারে কোনো প্রকার ছাড় দেয়া হবে না। লোকবল সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এধরনের অভিযান চলতে থাকবে। জব্দকৃত মেশিন ও সরঞ্জাম মালিকদের সনাক্ত করা হয়েছে। এই বিষয়ে মামলাও দেয়া হয়েছে।