অবশেষে মিলছে মাথাগোঁজার ঠাঁই

71

আগে আমরা টিনসেটের ভাড়া বাড়িতে থাকতাম। উনি অসুস্থ থাকায় এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে অনেক কষ্ট করে আমাদের দিন চলত। টাকার অভাবে ভালোভাবে চিকিৎসা করাতে পারেনি তাঁর। অসুস্থতায় চার বছর আগে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। ছেলে একটা ছোট চাকরি করে। মেয়েটার বিয়ে দিয়েছি। মেয়র নাছিরের কারণে একটা পাকা বাড়ি পাইছি। অবশেষে স্বস্তিতে ঘুমানোর জায়গা হল একটা। পূর্বদেশকে এমন অনুভূতির কথা বলছিলেন, প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইলিয়াছের স্ত্রী খুরশিদা বেগম।
তিনি আরও বলেন, আমার পা ভেঙে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ অবস্থায় দিন পার করছি। কোনদিন সরকারি মুক্তিযোদ্ধার ভাতা পাইনি। উনি বেঁচে থাকতে অনেক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু কপালে জুটেনি। অন্তত ভাতাগুলোর ব্যবস্থা হলে চিকিৎসা নিয়ে মরতে পারতাম।
জানা গেছে, ২০১৭ সালে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন উদ্যোগ নিয়েছিলেন অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বাড়ি নির্মাণের। এরই প্রেক্ষিতে নগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিললের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি যাচাই-বাছাই করে ৫০ জন অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার একটি তালিকা প্রস্তুত করে। তখন তাদের বসত বাড়ি নির্মাণে সিটি কর্পোরেশন ‘গৃহ নির্মাণ’ প্রকল্প গ্রহণ করে। আগামী ২০২২ সালের মধ্যে আনুমানিক ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এসব বাড়ি নির্মাণ করা হবে।
সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ২০১৭ সালের ২০ এপ্রিল মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ১০নং উত্তর কাট্টলীস্থ বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম মোহাম্মদ ইলিয়াছ এর বসতভিটায় ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা ভবন’ উদ্বোধন করেন। তারই নির্দেশনায় প্রাথমিকভাবে পাঁচ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কাজ শুরু করা হয়েছিল।
তাঁরা হলেন নগরীর ১০ নং উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডের বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম মোহাম্মদ ইলিয়াছ, ৪১নং দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডের মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন, ২৫নং রামপুর ওয়ার্ডের মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম, ৩০ পূর্ব মাদারবাড়ী ওয়ার্ডের মুক্তিযোদ্ধা নুর আহম্মদ এবং ৪নং চান্দগাঁও ওয়ার্ডের মুক্তিযোদ্ধা কুতুব উদ্দিন।
এদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াছের পরিবারের জন্য বাড়ির কাজ সম্পূর্ণ শেষ হয়েছে। আগামী সপ্তাহে এই বাড়ি উদ্বোধন হওয়ার কথা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যদের জন্যও গৃহ নির্মাণ করে দেবে চসিক।
সূত্র জানিয়েছে, প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধা ভবনে থাকছে ২টি বেড রুম, ১টি কিচেন, ১টি ডাইনিং, ২টি টয়লেট এবং ১টি ড্রাইনিং রুম। দেশের সিটি কর্পোরেশনসমূহের মধ্যে একমাত্র চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনই নগরীর অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এমন গৃহনির্মাণ করে দিচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে চসিকের সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবিদা আজাদ বলেন, মেয়র নাছিরের উদ্যোগে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের জন্য বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। আমার ওয়ার্ডে মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াছের পরিবারের জন্য বাড়ি নির্মাণের কাজ শেষ। মেয়র দেশের বাইরে আছেন। তিনি ফিরলেই বাড়িটি উদ্বোধন করা হবে। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী। আমি জানি তাদের সংগ্রামের পথ কত দীর্ঘ হয়।
তিনি আরও বলেন, মেয়রের এমন উদ্যোগ সত্যি প্রশংসনীয়। সারাদেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ করছেন। এতে অনুপ্রাণিত হয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের জন্য বাড়ি করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন।