অবশেষে পুলিশের কব্জায় ‘ছোট সাজ্জাদ’

1

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ্যে গুলি ছুঁড়ে হত্যাসহ একের পর এক ভয়ঙ্কর সব অপরাধ সংঘটিত করে আলোচনায় আসা তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদকে অবশেষে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। তাকে ধরতে সহায়তাকারীকে নগদ অর্থ পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছিলেন সিএমপি কমিশনার। গত ১৫ মার্চ দিবাগত রাতে রাজধানী ঢাকার বসুন্ধরা এলাকা থেকে নগর পুলিশের একটি বিশেষ দল তাকে গ্রেপ্তার করে।
নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইনের মিডিয়া সেন্টারে গতকাল রবিবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে বিস্তারিত জানান সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ।
তিনি বলেন, গত শনিবার রাতে বউকে নিয়ে রাজধানী ঢাকার বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সে ঈদের বাজার করতে গিয়েছিলেন সন্ত্রাসী সাজ্জাদ। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে সেখানে অভিযান চালায় পুলিশ। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তিনি পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়।
এদিকে, আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল রবিবার বিকেলে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বক্কর ছিদ্দিকের আদালত পুলিশের দাখিল করা রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেনকে নগরীর চান্দগাঁও থানার তাহসিন হত্যা মামলায় আদালতে হাজির করে ১৪ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। পরে শুনানি শেষে আদালত সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ জানান, সাজ্জাদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন থানায় হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজিসহ মোট ১৫টি মামলা আছে। তিনি আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী বড় সাজ্জাদের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে চট্টগ্রামে অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করতেন। বিদেশে অবস্থান করে শীর্ষ সন্ত্রাসী বড় সাজ্জাদ তাকে সবকিছু নির্দেশনা দিতেন। ছোট সাজ্জাদ বিভিন্ন এলাকায় ভবন নির্মাণ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মালিকদের কাছ থেকে বিপুল অংকের চাঁদা দাবি করতেন। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের বাড়িতে এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ভাঙচুর ও আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করতেন।
সিএমপি কমিশনার বলেন, ছোট সাজ্জাদ দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী। তিনি রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, বায়েজিদ, চান্দগাঁও ও পাঁচলাইশ এলাকার ত্রাস সৃষ্টিকারী আসামি। সাজ্জাদ বায়েজিদ থানার আলোচিত ডাবল মার্ডার মামলার আসামি। চান্দগাঁও থানারও একটি খুনের মামলার আসামি তিনি। বায়েজিদ, চান্দগাঁও ও মোহরা কেন্দ্রিক ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ছিল তার হাতে। আমি সিএমপিতে যোগ দেয়ার পর থেকেই তাকে ধরার চেষ্টা করছি। একবার তাকে ধরতে তার বাসায় অভিযান চালিয়েছিল পুলিশ। সে কত বড় দুর্ধর্ষ, পাঁচতলা ভবনের ছাদ থেকে আরেকটি ভবনে লাফ দিয়ে পালিয়ে যায়। সেসময় তার ছোড়া গুলিতে ওই ভবনের দারোয়ান ও পুলিশের সোর্স আহত হন। এরপর সে সরাসরি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এসে আমাদের বায়েজিদ থানার ওসিকে লাঞ্ছিত করার হুমকি দেয়। এরপর আমরা সিদ্ধান্ত নেই, যথেষ্ট হয়েছে। আমি সিএমপি কমিশনার হিসেবে তাকে ধরিতে দিতে পারলে উত্তম অর্থ পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দিই। তাকে ধরতে পুলিশ হেডকোয়াটার্সের ইন্টেলিজেন্স টিম আমাদের অভ‚তপূর্ব সহযোগিতা করেছে।
হাসিব আজিজ বলেন, আমাদের সিএমপির উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার আমিরুল ইসলাম একটি ট্রেনিং কোর্সে সাতদিন ধরে ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। পুলিশ হেডকোয়াটার্সের দেওয়া তথ্যে তিনি জানতে পারেন সাজ্জাদ তার স্ত্রীকে নিয়ে শনিবার রাত আটটার বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সে বাজার করতে গিয়েছেন। সিএমপির একটি টিম আগে থেকেই ঢাকায় ছিল। তথ্য পেয়ে তারা সেখানে অভিযান চালিয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে। স্থানীয়রাও সাহায্য করেছে তাকে ধরতে। এরপর তাকে তেজগাঁও থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সহযোগীদের গ্রেপ্তার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।