অবরুদ্ধ গাজায় দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়েছে

7

পূর্বদেশ ডেস্ক

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়েছে বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের একটি দল। অপুষ্টির কারণে সা¤প্রতিককালে সেখানে আরও বেশ কিছু শিশুর মৃত্যু হতে পারে, এমন আশঙ্কার কথাও জানিয়েছেন তারা। মঙ্গলবার (৯ জুলাই) একটি বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে দলটি। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই খবর জানিয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, অন্তত ৩০ শিশু অপুষ্টিতে মারা গেছে। তাদের বেশিরভাগই গাজার উত্তরাঞ্চলের। ৭ অক্টোবরে দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর গাজায় পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। প্রথমে উত্তর গাজায় হামলা করলেও মে মাসের শুরু থেকে তা দক্ষিণ গাজায় ছড়িয়ে পড়েছে। ইসরায়েলের বিধিনিষেধের কারণে গাজায় ত্রাণ প্রবাহ ব্যাহত হয়েছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় ত্রাণ প্রবেশে বাঁধা দেওয়ার অভিযোগে করেছে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো। খবর বাংলা ট্রিবিউনের।
মঙ্গলবারের বিবৃতিতে ১১ জন অধিকার বিশেষজ্ঞের একটি দল মে মাসের শেষ থেকে খান ইউনিসের দক্ষিণাঞ্চল এবং দেইর আল-বালাহের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে অপুষ্টিতে ১৩, ৯ এবং ছয় মাস বয়সী তিন শিশুর মৃত্যুর কথা উল্লেখ করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মধ্য গাজায় চিকিৎসা সত্ত্বেও এই শিশুরা যে অনাহারে মারা গেছে এতে কোনও সন্দেহ নেই। উত্তর গাজা থেকে মধ্য ও দক্ষিণ গাজাতেও দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়েছে।
খাদ্য অধিকার সম্পর্কিত বিশেষ রিপোর্টার মাইকেল ফাখরিসহ বিশেষজ্ঞদের স্বাক্ষরিত একটি বিবৃতিতে ‘ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের ইচ্ছাকৃতভাবে অনাহারকে অস্ত্রে হিসেবে ব্যবহারের’ নিন্দা করা হয়েছে। জেনেভায় ইসরায়েলের কূটনৈতিক মিশন বলেছে, বিবৃতিটির ‘তথ্য ভুল।’ তারা আরও বলেছে, ইসরায়েল গাজা উপত্যকাজুড়ে মানবিক সহায়তা বিতরণে ক্রমাগত সমন্বয় এবং সহায়তা বাড়িয়েছে। সম্প্রতি গাজার পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্টের সঙ্গে দেশটি তার বিদ্যুতের লাইন সংযোগ করেছে।
সোমবার খান ইউনিসের একটি হাসপাতালে ফিলিস্তিনি নারী ঘানিমা জোমা রয়টার্সকে বলেন, তিনি আশঙ্কা করছেন, তার ছেলে না খেয়ে মরে যাবে। তিনি বলেন, আমার সন্তানকে দেখে কষ্ট হচ্ছে ও অপুষ্টিতে মারা যাচ্ছে। যুদ্ধ, ক্রসিং বন্ধ করা এবং দূষিত পানির কারণে আমি ওকে কিছুই খেতে দিতে পারি না। কথাগুলো বলার সময় তিনি তার মৃত্যুর প্রহর গোনা ছেলের পাশে মেঝেতে বসে ছিলেন। ছেলেটির কব্জিতে ড্রিপ লাগানো ছিল।
একটি অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ আছে কিনা তা আনুষ্ঠানিকভাবে নির্ধারণ করা হয় জাতিসংঘ-সমর্থিত গ্লোবাল মনিটরের মাধ্যমে, যাকে ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) বলা হয়। আইপিসি প্রযুক্তিগত কিছু মানদন্ডের ভিত্তিতে তা মূল্যায়ন করে।
গত মাসে আইপিসি বলেছিল, গাজা দুর্ভিক্ষের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। কেননা তখন সেখানে যুদ্ধ অব্যাহত এবং সাহায্যের প্রবেশাধিকার সীমাবদ্ধ ছিল। এই অবস্থা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
গাজায় ৪ লাখ ৯৫ হাজারেরও বেশি মানুষ সবচেয়ে গুরুতর বা ‘বিপর্যয়কর’ স্তরের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হচ্ছে। এই সংখ্যা অঞ্চলটির মোট জনসংখ্যার এক পঞ্চমাংশেরও বেশি।