অপারেশন-ওষুধ ছাড়াই হাঁটু কোমর-কাঁধের ব্যথা নিরাময়

218

দীর্ঘদিন ধরে হাঁটু ও কোমর ব্যথায় ভোগছেন কোহিনুর আক্তার (৫০)। স্বামী আবদুল কায়েস খবর পেয়ে স্ত্রী কোহিনুর আক্তারকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন নগরীর প্রবর্তক মোড়ে আল-নূর বদরুন সেন্টারের ৪র্থ তলায় অবস্থিত শিওরসেল মেডিকেলে। সেখান থেকে চিকিৎসা সেবা নেওয়ার পর কোহিনুর আক্তার জানান, ‘অনেক হাঁটু ব্যথা ও কোমর ব্যথা নিয়ে শিওরসেল মেডিকেলে এসেছিলাম। তখন অনেক অসুস্থ ছিলাম, হাঁটা-চলা করতে অনেক সমস্যা হতো। আমি এখানে ট্রিটমেন্ট নেওয়ার পর আগের চেয়ে অনেক ভালো আছি। আস্তে আস্তে অনেক ইমপ্রুভ হয়েছে আমার।’ স্বামী আবদুল কায়েসও তার স্ত্রীর সুস্থতার পেছনে শিওরসেল মেডিকেলের আন্তরিকতা ও উন্নত মানের চিকিৎসা পদ্ধতির কথা জানান।
একইভাবে শিওরসেল মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থতার গল্প জানালেন ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের সিনিয়র ম্যানেজার মাসুদুর রহমান খান (৪৫)। তিনি জানান, ‘ফুটবল খেলতে গিয়ে খুব জোরে পড়ে গিয়েছিলাম। পড়ে যাওয়ার পর লোকাল ডাক্তারের কাছে গেলে সেখানে আমাকে এক্সরে করায়। এমআরআই রিপোর্ট করার পর ডাক্তার জানায়, সার্জারি ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় নেই। আর সার্জারি না করে আমি বিকল্প কোনো উপায় খুঁজছিলাম। চট্টগ্রামে শিওরসেল মেডিকেলের কথা জানতে পেরে সেখানে চিকিৎসা নিই। আমি প্রথম দিকে সাপোর্ট ছাড়া হাঁটতে পারতাম না। প্রচন্ড ব্যথা ছিল। চারটি কোর্স নেওয়ার পর এখন আমার কোনো ব্যথা কিংবা ফুলা নেই। বলতে গেলে ফিজিক্যালি এখন কোনো সমস্যা নেই। বর্তমানে শিওরসেল মেডিকেল থেকে শিখানো পদ্ধতিতে ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম করছি। আশাকরি আমার আর সার্জারি লাগবে না।’
এছাড়া এখান থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থভাবে জীবন যাপন করছেন ডাক্তার তানুজা তানজিন। তিনি জানান, ‘ওষুধের একটা সাময়িক লিমিট আছে। কিন্তু দীর্ঘ সময় ভালো থাকার জন্য প্রথমে আমি পিআরপি নিলাম। প্রায় ৭ থেকে ৮ মাস হয়ে গেলো আমি ভালোই আছি। এ ধরনের চিকিৎসার ব্যাপারে আমি শতভাগ নিশ্চিত। এই পদ্ধতিতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। শিওরসেলের মাধ্যমে পিআরপি কিংবা স্টেমসেল থ্যারাপিটা সার্জারি না করে চিকিৎসার প্রাথমিক পর্যায় নিলাম। এটা খুব ভালো একটি পদ্ধতি যে, আমাদের দূরে যেতে হলো না। বাইরে গিয়ে যে টাকা পয়সা ও সময় নষ্টের ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে নিজ ঘরের কাছে সেবা নিতে পারছি।’
শুধু তাই নয়, প্রতিদিন শিওরসেল মেডিকেলে পিআরপি থেরাপি বা অর্থোপেডিক স্টেমসেল থেরাপির মাধ্যামে কোনো প্রকার ওষুধ কিংবা অপারেশন ছাড়াই হাঁটু ব্যথা, কোমর ব্যথা, পিঠ, ঘাড় ও অন্যান্য জয়েন্টের ব্যথা এবং বিভিন্ন সমস্যার সমাধান নিতে দূর দূরান্ত থেকে ছুঁটে আসছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। তারা নির্ধারিত কোর্স সম্পন্ন করার পর ফলোআপ নিতে এসে নিজেদের সুস্থতার কথা জানান।
এই পদ্ধতিতে রোগীদের নিজ শরীরের রক্ত বা ফ্যাটসেল ব্যবহার করা হয়। যার ফলে এতে কোন রকমের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকে না। এতে ক্ষয়প্রাপ্ত তরুণাস্থি ও জয়েন্টের ক্ষয়ে যাওয়া অংশ পুনরায় গঠিত হয় এবং রোগীদের ব্যথা সম্পূর্ণরূপে নিরাময় হয়। খেলাধুলাজনিত ইনজুরিতেও এ চিকিৎসা পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকর। কসমেটোলজি ও চর্মরোগ বিভাগেও পিআরপি ব্যবহার করা যায়। নতুন চুল গজানোর ক্ষেত্রে পিআরপি অত্যন্ত কার্যকর এবং ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধি ও ত্বকে বয়সের ছাপ মুছতে, ত্বকের ও চুলের বিভিন্ন সমস্যায় পিআরপি অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এছাড়া এ মেডিকেলে চালু করা হয়েছে ফিজিও থেরাপি ও পুষ্টি সংক্রান্ত পরামর্শ সেবা। স্টেমসেল থেরাপির মাধ্যমে আরো বিস্তৃত পরিসরে চিকিৎসা দেওয়া যাবে লিভার ডিজিজ ও স্নায়ুতন্ত্রের নানা সমস্যা, অটিজম, ডায়াবেটিকসহ জটিল রোগের। সর্বাধুনিক পদ্ধতিতে, অস্ত্রোপচার ও উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ওষুধ ব্যবহার না করে এসব রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব। ঊন্নত দেশগুলোর মতই এখন বাংলাদেশেও এইসব রোগের অত্যাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু করেছে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, মানবদেহে রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা শুধু নয়, রোগ নিরাময়েরও কোষ রয়েছে। রোগীর দেহের রক্ত থেকে কোষ আলাদা করে সেই কোষই আবার রোগীর দেহে প্রবেশ করিয়ে ব্যথা নিরাময় করা সম্ভব। অপারেশন কিংবা ওষুধ ছাড়াই ব্যথা নিরাময় সম্ভব হওয়ায় বিশ্বব্যাপী খেলাধুলা জগতের অনেকেই এ পদ্ধতিতে ইনজুরির চিকিৎসা নিচ্ছেন। এটি ‘কুবে থেরাপি’ হিসেবেও বিশ্বব্যাপী পরিচিত।
শিওরসেল মেডিকেলের এক্সেকিউটিভ ডিরেক্টর ডা. আবদুর রব বলেন, এই রোগের মানুষ কষ্ট করে ভারত ও ব্যাংকক কিংবা সিঙ্গাপুরে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। এই লক্ষ্যে এর সমস্ত বিষয়গুলো চিন্তা করে চট্টগ্রামে সর্বধরনের প্রযুক্তি স্থাপন করার উদ্যোগ নিই। এই পদ্ধতির চিকিৎসা আন্তর্জাতিক মানের। আমাদের প্রতিষ্ঠান এ রোগের আক্রান্তদের কম মূল্যে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। সার্জারি বা ওষুধ ছাড়াই হাঁটু, কোমর ও কাঁধের ব্যথা নিরাময় করা সম্ভব। এখানে রোগী ও তাদের স্বজনরা চিকিৎসা নেওয়ার পর ফলোআপে এসে সুস্থতার কথা জানাচ্ছেন। এসময় তিনি আগের চেয়ে রোগীর সংখ্যা দিনদিন অনেক বাড়ছে বলে জানান।
দীর্ঘ ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন অর্থপেডিক বিশেষজ্ঞ ডা. জাবেদ জাহাঙ্গীর তুহিন বলেন, আমাদের দেহে রোগপ্রতিরোধী ব্যবস্থা শুধু নয়, রোগ নিরাময়েরও কোষ রয়েছে। রোগীর দেহের রক্ত থেকে কোষ আলাদা করে সেই কোষই আবার রোগীর দেহে প্রবেশ করিয়ে ব্যথা নিরাময় করা সম্ভব। ঢাকার পরে চট্টগ্রামে একঝাঁক অভিজ্ঞ ও তারুণ্যদীপ্ত ডাক্তার, নার্স এবং স্টাফের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে শিওরসেল স্বাস্থ্যসেবা পরিবার, যা ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের ফার্স্ট ওয়েলনেস সেন্টার হিসেবে সুধীজনের আস্থা অর্জন করেছে।
উল্লেখ্য, ২৫ থেকে ৩০ বছর ধরে বিশ্বব্যাপী এ পদ্ধতিতে ব্যথার চিকিৎসা হয়ে এলেও বাংলাদেশে যাত্রা শুরু হয়েছে গত ২ বছর ধরে ঢাকাতে এবং চট্টগ্রামে শুরু হয়েছে গত বছরের ৭ জানুয়ারি থেকে। সেই থেকে অস্ট্রেলিয়ার অঙ্গ প্রতিষ্ঠান শিওরসেল মেডিকেল নগরীর প্রবর্তক মোড়ে আল নূর বদরুন সেন্টারের ৪র্থ তলায় রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে। বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ : ০১৭০১৬৬৪৪৪০।