নিজস্ব প্রতিবেদক
ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেছেন, অপরাধীর পরিচয় শুধু অপরাধীই। তার পরিচয় কোন দল বা গোষ্ঠী হিসেবে নয়। তিনি বলেন, ‘কোনো একজন ব্যক্তি যদি সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে থাকে, তাহলে সে ব্যক্তিটিই দায়ী হবে। তার ব্যক্তি পরিচয়, সামাজিক পরিচয়, ধর্মীয় পরিচয়, রাজনৈতিক পরিচয় কোনো কিছুই সামনে আসবে না। উঠে আসবে শুধু এ ব্যক্তি সন্ত্রাসী। তাই কাউকে কোনো সংগঠনের বলাটা যেন আমরা পরিহার করি, একক অপরাধের জন্য কোনো সংগঠন, দল বা কোন গোষ্ঠীর দিকে আঙ্গুল তোলা উচিত নয়।
গতকাল বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে চট্টগ্রামের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে এতে উপদেষ্টা হাসান আরিফ বলেন, আইন অনুযায়ী সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য যে সাজা হওয়া দরকার, সেটা রাষ্ট্রদ্রোহিতা হোক বা আলিফের হত্যাকান্ডের উস্কানিদাতা হোক, তাকে শাস্তি পেতে হবে। গত ২ মাসের মধ্যে চট্টগ্রামে যে ঘটনাগুলো ঘটে গেছে, ধারাবাহিকভাবে কেউ যদি কোন সংগঠনের পরিচয়কে অপব্যবহার করে থাকে, সেটা তার ব্যক্তিগত অপরাধ। সেই ব্যক্তি দোষী হবেন, কোন সংগঠন নয়। ওই ব্যক্তির ধর্মীয় পরিচয়, রাজনৈতিক পরিচয়, সামাজিক পরিচয় আসবে না, তখন শুধু তার পরিচয় হবে শুধু অপরাধী।
তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে অনেকেই অপরাধ কর্মকান্ড করে যাচ্ছে, সেই স্বৈরাচারী কর্মকান্ডের ধারাবাহিকতায়। যেহেতু তাদের এখনও আইনের আওতায় আনা হয়নি। এজন্য তারা এসব করার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। এখন সময় এসেছে যারা নিষিদ্ধ সংগঠনের (ছাত্রলীগ) সদস্য ছিলেন, তাদের আইনের আওতায় আনা। তাদের এ মুহূর্তে বাইরে রাখলে আমাদের আশঙ্কা, সমাজের আশঙ্কা, তারা এ ধরনের কর্মকান্ড করে যাবে। এজন্য আমরা সতর্ক থাকি। পারস্পরিক সৌহার্দ্য যেটা আজীবন ছিল, আগামীতেও থাকবে। সেটা বজায় রাখি এবং সকলে মিলে আমরা একটি সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গড়ি।
সভাপতির বক্তব্যে সিটি মেয়র বলেন, আওয়ামী লীগ বলেছিল, আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে চলে গেলে লাখ লাখ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা করা হবে। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত কোন ধরনের হামলা কিংবা কোন রাজনৈতিক দলের কারণে কোন আওয়ামী লীগ নেতা তো নয়, কোন সনাতনী স¤প্রদায়ের তো নয়, চট্টগ্রামে কোন নাগরিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়নি।
আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, আলিফকে মধ্যযুগীয় কায়দায় যেভাবে প্রফেশনালি মারা হয়েছে, এটা পেশাদার খুনি ছাড়া এ রকম কেউ করতে পারে না। আমি মনে করি, ধর্ম, বর্ণ বা রাজনৈতিক সন্ত্রাসী যেই হোক, তার কোন দল, ধর্ম, বর্ণ নেই। সে সন্ত্রাসী হিসেবেই পরিচিত হবে। আর তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি পেতে হবে।
তিনি বলেন, সন্ত্রাসী যুবলীগ-ছাত্রলীগের ক্যাডাররা এখনও মিছিল করে বেড়াচ্ছে, তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। যারা প্রায় এক হাজার ছাত্র-জনতা-শ্রমিককে খুন করেছে। অবৈধ অস্ত্র যতক্ষণ পর্যন্ত উদ্ধার করা হবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত সন্ত্রাসীরা মাথাছাড়া দিবে এবং এসব কাজ করবে।
হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টি বোর্ডের দায়িত্বে থাকা ৩ জনকে অব্যাহতি দিতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ট্রাস্টি বোর্ডের যে ৩ জনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অবিলম্বে তাদের ওই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। ওইসব সন্ত্রাসীরা টাকা ঢালছে। আমরা জানি কারা টাকা ঢালছে। সবাইকে আমরা চিনি। কারণ চট্টগ্রাম শহরে আমরা নতুন নই, এখানে বড় হয়েছি। সাবধান হয়ে যান, আপনারা কে কি করছেন সব জানা আছে। বীর চট্টগ্রাম ফুঁসে উঠলে কেউ রেহাই পাবেন না। স¤প্রীতি নষ্ট করে দাঙ্গা লাগানোর জন্য যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরির কাজগুলো করছেন, শক্ত হাতে সেগুলোর জবাব দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, নির্দোষ কারও ওপর যাতে অবিচার না হয়। আমরা সবাই চট্টগ্রামের সন্তান। সবাই মিলে স¤প্রীতির শহর গড়ে তলবো।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাসিব আজিজ, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমীর শাহজাহান চৌধুরী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম, রাসেল আহমদ।