অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম বৈঠক সময় উপযোগী

4

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। তিনদিনের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। আন্দোলন সংগ্রামে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটে। বর্তমানে অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রথম ও প্রধান কাজ দেশের আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্র্বর্তী সরকার প্রথম বৈঠকে অর্থনীতি চাঙা রাখতে ব্যবসায়ীদের উজ্জীবিত করা, দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া, বাজার নিয়ন্ত্রণসহ বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উপদেষ্টারা।
গত শুক্রবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্র্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম অনানুষ্ঠানিক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। এ বৈঠকে অন্তর্র্বর্তী সরকারের সব মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার পাশাপাশি কাজের ক্ষেত্রে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদেরও সম্পৃক্ত করার আলোচনা করা হয়। এ বিষয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, আমাদের উপদেষ্টা প্যানেলে অভিজ্ঞ এবং দক্ষ ব্যক্তিদের মনোনীত করেছি এবং ছাত্রদের পক্ষ থেকে আমরা দু’জন উপদেষ্টা মনোনীত হয়েছি। এর পাশাপাশি উপদেষ্টাদের সঙ্গে সহকারী হিসেবে ছাত্ররা কাজ করার সুযোগ পাবেন। তাদের জন্য ‘সহকারী উপদেষ্টা’ পদ সৃষ্টি করে সরকারের সঙ্গে যুক্ত করার আলোচনা চলছে বলেও জানান তিনি।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে। এখনো রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ নেই, শিক্ষার্থীরা রাস্তা ম্যানেজমেন্ট করছেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি না যে, কালই (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান) খুলে দেব। শিক্ষক সমাজের সঙ্গে আলোচনা করা হবে, শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে এনে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। প্রথম বৈঠকে সব সেক্টরের সংস্কার নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, সমাজের সবার সঙ্গে কথা বলা হবে, সবার সঙ্গে কথা বলে রিফর্ম এজেন্ডা ঠিক করে আলাপ-আলোচনায় যাওয়া হবে। বৈঠকে অর্থের বিষয়ে কথা হয়েছে। আর্থিক খাতগুলো শুধু চালু করলেই হবে না, সক্রিয় করতে হবে। সেখানে নেতৃত্বের স্থানে পরিবর্তন আনার প্রয়োজন যেগুলোতে আছে, অনতিবিলম্বে সেসব পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। জনগণের জীবন-জীবিকার কষ্ট লাঘব হবে, বাজারের ক্ষেত্রে যে নিয়ন্ত্রণ, অর্থের ক্ষেত্রে যে নিয়ন্ত্রণ, সেটাও অগ্রাধিকার পাবে অর্থ মন্ত্রণালয় যখন পরিকল্পনা করবে সেখানে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন আমরা দ্রুত আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর। সরকারপতনের প্রেক্ষাপটে দেশের আইনশৃঙ্খলার যে অবনতি হয়েছে, তা স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতেই অন্তর্বর্তী সরকার অগ্রাধিকার দেবে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেছেন, ‘অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার প্রথমত দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির চেষ্টা করবে। দ্বিতীয়ত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফেরানো, যেটি চরমভাবে কমে গেছে বলে আমি মনে করি।’
কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে প্রবল গণআন্দোলনে প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে সোমবার দেশত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। দুদিন পর বৃহস্পতিবার অন্তর্র্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা শপথ গ্রহণ করেন। নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস হয়েছেন এ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার দিনই দেশের বিভিন্ন থানায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পুলিশ সদস্যদের অনেকে হতাহত হন। এছাড়া সরকারি বিভিন্ন স্থাপনা, আওয়ামী লীগ অফিস ও সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও মন্দিরে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের খবর আসে। থানায় হামলার কারণে দেশের অনেক থানা পুলিশশূন্য হয়ে পড়ে। সড়কে ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় ভেঙে পড়ে ট্রাফিক ব্যবস্থা। নিরাপত্তা শঙ্কায় নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান পুলিশ সদস্যরা।
এ পরিস্থিতিতে পুলিশ সদস্যরা কাজে না থাকায় শিক্ষার্থী, বিভিন্ন সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের কর্মীদের সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও মন্দির পাহারা দেওয়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসেছে। এছাড়া সরকার পতনের ওপর ঢাকাসহ সারা দেশেই বিভিন্ন স্থানে রাতে সংঘবদ্ধ ডাকাতির খবর আসছে, যা প্রতিরোধে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে মানুষ। সরকারপতন ও অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বগ্রহণের পর ভেঙে পড়া পুলিশি ব্যবস্থা পুনর্গঠনে কাজ শুরু হয়েছে। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। থানার নিরাপত্তায় পুলিশের পাশাপাশি সেনা সদস্যরা কাজ করছে, সঙ্গে দেখা গেছে আনসার সদস্যদের।
অন্তর্র্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন রয়টার্সকে বলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় প্রশাসন ‘খুবই উদ্বিগ্ন’। তবে কিছু বিষয় ‘সামান্য অতিরঞ্জিত’ হয়েছে।’ শুক্রবার ঢাকায় কিছু পুলিশ কনস্টেবল সাদা পোশাকে কাজে যোগ দিয়েছেন। আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা থানার নিরাপত্তা জোরদার করেছে।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ছয়টি থানার মধ্যে তিনটির কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত অন্য থানাগুলোকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে কাজ চলছে। ট্রাফিক পুলিশের অনুপস্থিতিতে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে শিক্ষার্থী, স্কাউটস সদস্য, আনসার ও ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা কাজ করছেন। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল ও জননিরাপত্তা বিধানে আইনশৃঙ্খলার উন্নতিকল্পে সরকারের আরো দ্রæত এগিয়ে আসতে হবে এমন আশা দেশবাসীর।