বান্দরবান প্রতিনিধি
বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের ন্যস্ত প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। সেই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান প্রধান প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। চেয়ারম্যান ও সদস্যদের অনুপস্থিতিতে অনেকটা অকার্যকর বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ। প্রাথমিক শিক্ষা অফিস বা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোন শিক্ষক-শিক্ষকা বা কর্মচারীকে বদলি করতে হলে পার্বত্য জেলা পরিষদের অনুমোদন নিতে হয়। গেলো ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা আত্মগোপনে চলে যান। এতে করে পরিষদের উন্নয়ন কর্মকাÐ থেকে শুরু করে ন্যস্ত বিভাগের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী বদলিসহ সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বিল পরিশোধ করার জন্য পার্বত্য জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাকে পার্বত্য মন্ত্রণালয় থেকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এক প্রশ্নের জবাবে ‘বদলি বা উন্নয়নমুলক কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি’ বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পার্বত্য জেলা পরিষদের অনুমোদন ছাড়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নিজ ক্ষমতায় চলতি বছর ৬ অক্টোবর এক আদেশে লামা ও আলীকদম উপজেলায় কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মচারী বদলির আদেশ দেন। আলীকদম চস্পট পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জাহানারা পারভীন লাকীকে নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মিলন কান্তি চাকমাকে চস্পটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়। একই তারিখের আরেক আদেশে লামা উপজেলা শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী মংয়েইনু মার্মাকে আলীকদম এবং আলীকদম উপজেলা শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী হিরো ম্্েরাকে লামা উপজেলা শিক্ষা অফিসে বদলি করা হয়। এছাড়াও লামা উপজেলায় আরো দুই শিক্ষক বদলির খবর পাওয়া গেছে। জাহানারা পারভীন লাকী ও মিলন কান্তি চাকমা জানান, সরকারি চাকরি করতে হলে বদলি অবশ্যই হতে হবে। তবে এই মুহূর্তে কিভাবে আমাদেরকে বদলি করা হয়েছে আমরা কিছুই জানিনা। এদিকে ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর একটি আবেদনের আলোকে সহকারী শিক্ষক আবদুল দয়ানকে মেউলার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সহকারী শিক্ষক আজগর হোসেনকে লাইনঝিড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলির আদেশ দেওয়া হয়। তবে এই দুই শিক্ষক নিজের মধ্যে প্রায় ৩ বছর যাবৎ স্ব স্ব বিদ্যালয়ে সমন্বয় করে কর্মরত ছিলেন। তবে তারা স্ব স্ব পদে যোগদান না করায় তাদের বিরুদ্ধে চলতি বছর ২৯ আগস্ট বিভাগীয় মামলার জন্য একটি আবেদন পার্বত্য জেলা পরিষদে অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করা হয়। মামলা নিস্পত্তি ছাড়াই ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর আদেশে তাদেরকে বদলি করা হয়।
জানতে চাইলে সহকারী শিক্ষক আজগর হোসেন বলেন, আমরা দুই শিক্ষক পারষ্পরিক সমন্বয় করে করে স্ব স্ব বিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলাম। তবে একটি আদেশে যোগদান না করায় দুইজনের নামে বিভাগীয় মামলার জন্য পার্বত্য জেলা পরিষদে অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করা হয়। তবে মামলার আদেশ নিস্পত্তি হয়েছে কিনা আমি জানিনা। পূর্বের অফিস আদেশে লাইনঝিড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেছি। সহকারী শিক্ষক আবদুল দয়ানের কাছে একই বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আবেদনের প্রেক্ষিতে আমি চলতি বছর ৬ অক্টোবর মেউলার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করি।
অপরদিকে বদলির বিষয় জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবদুল মান্নান বলেন, জেলা পরিষদের প্রধানের সাথে আলোচনা করে তাদেরকে বদলি করা হয়েছে। তবে আমাদের জরুরি কিছু কিছু কাজ করতে হয়। পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠন করা হলে পরিষদ থেকে অনুমোদন নেওয়া হবে। যদি অনুমোদন না দেয় তাহলে এই আদেশ অকার্যকর হবে। দুই শিক্ষকের বিভাগীয় মামলার নিস্পত্তি না করে বদলি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ফাইল না দেখে বলা যাচ্ছে না।
বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ বিল্লাহ বলেন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ পার্বত্য জেলা পরিষদের ন্যস্ত। ন্যস্ত বিভাগের যেকোন কর্মকর্তা বা শিক্ষক এবং কর্মচারী বদলি করতে হলে পরিষদের অনুমোদন নিতে হবে। তবে চেয়ারম্যান না থাকায় কোন ধরনের বদলির অনুমোদন দেওয়া যাচ্ছেনা। তবে কেউ যদি নিজের ক্ষমতায় বদলি করে থাকেন তা গ্রহণযোগ্যতা পাবেনা।