অনিশ্চয়তায় ডুবছে খেটে খাওয়া জীবন

262

করোনাভাইরাসের মহামারী রুখতে ছুটি আর বিধিনিষেধে থমকে গেছে রাজধানীর খেটে খাওয়া মানুষের জীবনযাত্রা। এক সপ্তাহ আগেও তাদের কেউ প্রতিদিন রিকশা ভ্যান নিয়ে বের হতেন, কেউবা দিন চুক্তির মজুরিতে কাজ করতেন। অনেকে আবার বিভিন্ন পণ্য ফেরি করে চালাতেন সংসার। রাজধানীর বিভিন্ন বস্তি কিংবা টিনশেড ঘরে এইসব খেটে খাওয়া মানুষের বসবাস। দিনের কাজের টাকায় তাদের বাজার হয়, চুলায় হাড়ি চড়ে। তাদের সেই দারিদ্র্যক্লিষ্ট জীবনেও ছন্দপতন ঘটিয়েছে করোনাভাইরাস মহামারী।
মালিবাগ রেলগেইট, ঝিলপাড়, কমলাপুর, রামপুরা, বাড্ডা, ফকিরাপুল ও মোহাম্মদপুর ঘুরে নিম্ন আয়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে একই হতাশা আর অনিশ্চয়তার ছবি।
ভোলার চরফ্যাশনের আলী হোসেন ঢাকায় ইট ভাঙার কাজ করেন। গত সাত দিন বস্তির ছোট্ট ঘরে কর্মহীন কেটেছে তার। পেটের তাগিদে সোমবার সকালে পশ্চিম মালিবাগের বাগাানবাড়ি এলাকায় এক নির্মাণাধীন ভবনের পাশে বেড়ার আড়ালে ইট ভাঙতে বসেছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘কী করব স্যার, কাজ করতে মানা। কিন্তু এভাবে থাকলে তো পেটে ভাত জুটবে না। লুকিয়ে ইট ভাংতেছি। কাজ পাইছি চাইর দিন আগে। কিন্তু খোলা জায়গায় তো কাজ করতে পারতেছি না। এলাকার মুরব্বীরা বারণ করছে। আজকে উনাদের বলে কয়ে কাজ শুরু করেছি, বুঝেন তো।’
রিকশাচালক তমিজউদ্দিন বাড্ডায় থাকেন। ষাট বছর বয়সেও তাকে রিকশা চালাতে হয় বেঁচে থাকার তাগিদে। সোমবার সকাল ৮টায় তাকে মৌচাক মোড়ে বসে থাকতে দেখা গেল যাত্রীর আশায়। খবর বিডিনিউজের
আক্ষেপ করে বললেন, ‘বুড়াকালে আইসা এঠা কী দেখতেছি বাবা জান। ডাক দিলেও প্যাসেঞ্জার রিকশায় উঠতে চায় না। কম ভাড়ার কথা কইছি, তারপরেও কয় ‘যামু না’।’
রোজগার এভাবে বন্ধ হয়ে গেলে ছেলেমেয়েকে কী খাওয়াবেন, সেই চিন্তায় দিশা পাচ্ছেন না তমিজউদ্দিন।
মৌচাক মোড়ে একটি রিকশার গ্যারেজের ভেতরে বসে ছিলেন আখলাক মিয়া, সঙ্গে তার বানর ‘রূপবান’। বানর নাচিয়েই তার দিন চলে। আর স্ত্রী বিভিন্ন বাসায় গিয়ে করেন গৃহকর্মীর কাজ।
আখলাক জানালেন, গত সাতদিন ধরে তার রোজগারের পথ একেবারেই বন্ধ। তার স্ত্রীকেও কাজে যেতে মানা করেছেন বাড়ির মালিকরা। তাইলে চলমু কেমনে বলেন? আমার উপার্জনের শক্তি এই বান্দর, তারে ‘রুপবান’ বইলা ডাকি, তারেও খাবার দিবার পয়সা নাই। শিকল দিয়া বাইন্দা রাখছি ৭ দিন হয়। আমরা আর রূপবান সবতেই বন্দি।