নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রামের সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অনিবন্ধিত সিএনজি ট্যাক্সি। সড়ক আইন অমান্য করেই সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে এসব সিএনজি ট্যাক্সি সড়কে চলাচল করছে। বেপরোয়া গতিতে চলা নাম্বারবিহীন গাড়িগুলোর দুর্ঘটনায় নিয়মিত ঝরছে প্রাণ। চট্টগ্রামের বিভিন্ন রুটে ‘গ্রাম সিএনজি’ নামে পরিচিত প্রায় লক্ষাধিক অনিবন্ধিত ট্যাক্সি চলাচল করলেও এগুলো আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না। অভিযানে মাঝেমধ্যে কিছু সিএনজি ট্যাক্সি আটক করা হলেও ডাম্পিং স্টেশন না থাকায় সেগুলো রক্ষনাবেক্ষনে পুলিশের বেগ পেতে হয়। তবে গতমাসে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় ডাম্পিং স্টেশন করতে জায়গা খুঁজে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রস্তাবনা পাঠাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক।
গত ২০ সেপ্টেম্বর জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় নিবন্ধিত গ্রাম সিএনজি ট্যাক্সির চেয়ে অনিবন্ধিত ট্যাক্সির সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি। রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে গাড়িগুলো দীর্ঘ সময় ধরে যাত্রী পরিবহন করছে। অনিবন্ধিত গ্রাম সিএনজি ট্যাক্সিগুলো দ্রুত সময়ে নিবন্ধনের আওতায় না আসলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। বিআরটিএ ও জেলা পুলিশ অভিযান শুরু করবে। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে অনিবন্ধিত গ্রাম ট্যাক্সিগুলো জব্দ করে ডাম্পিংয়ে দেয়া হবে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী, আনোয়ারা ও উত্তর চট্টগ্রামের কোন উপজেলার কোথায় ডাম্পিং স্টেশন করা যায় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা জায়গা খুঁজে জেলা প্রশাসনের কাছে তালিকা দিলে যাচাই-বাছাই করা হবে।
এদিকে গত দুইদিনে মিরসরাই ও বাঁশখালীতে দুটি সিএনজি ট্যাক্সি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে শিশুসহ ৬ জন। গত মঙ্গলবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই খৈয়াছড়া ঝরনা সড়কের মুখে ট্রাকের ধাক্কায় সিএনজি ট্যাক্সিতে থাকা একই পরিবারের চারজন এবং গতকাল বুধবার বাঁশখালীতে গ্যাসভর্তি ট্রাকের ধাক্কায় দুইজন নিহত হয়েছে। মহাসড়কে সিএনজি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা না মানায় মিরসরাইয়ে এবং বেপরোয়া গতিতে ওভারটেক করতে গিয়ে বাঁশখালীর দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।
বাঁশখালী সড়কের নিয়মিত যাত্রী তৌহিদুল ইসলাম, আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘কর্ণফুলীর মইজ্জারটেক থেকে উপজেলা সদর পৌঁছতে সিএনজিতে সময় লাগে এক ঘণ্টা। এতেই বুঝা যায় কত গতিতে সিএনজিগুলো চলে। আনোয়ারা পর্যন্ত ওয়ানবাই রোড থাকায় দুর্ঘটনা কম ঘটলেও বাঁশখালীর সরু সড়কে চলতে সিএনজিগুলো প্রতিযোগিতায় নামে। প্রায়দিনই এ রুটে সিএনজি দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটে। সড়কটিতে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি গাড়ি চলে। এ রুটে মোড়ে মোড়ে সিএনজি স্টেশন।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রামে প্রায় লক্ষাধিক অনিবন্ধিত সিএনজি ট্যাক্সি চলাচল করে। শুধু গ্রামীণ সড়ক ছাড়িয়ে এসব অনিবন্ধিত সিএনজি শহরেও দাপটে চলে। কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে রাঙ্গুনিয়া, রাউজান, হাটহাজারী, পার্বত্য চট্টগ্রাম রুট, তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু (নতুন ব্রিজ) থেকে বাঁশখালী, আনোয়ারা, পেকুয়া, চকরিয়া রুট, বহদ্দারহাট খাজা রোডের মুখ থেকে বলিরহাট, সিএন্ডবি থেকে হামিদচর, কালুরঘাট সেতু থেকে বোয়ালখালী, পটিয়া, অক্সিজেন থেকে নতুন রাস্তার মুখ, মুরগীর ফার্ম থেকে বায়েজিদ, বায়েজিদ শেরশাহ বাংলাবাজার পর্যন্ত অনিবন্ধিত গ্রাম সিরিয়ালের সিএনজি চলাচল করে। এরমধ্যে কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে রাঙ্গুনিয়া, রাউজান, হাটহাজারী, পার্বত্য চট্টগ্রাম রুট, তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু (নতুন ব্রিজ) থেকে বাঁশখালী, আনোয়ারা, পেকুয়া, চকরিয়া রুট দুটিতেই প্রায় ৪০ হাজার গ্রাম সিএনজি চলে।
কয়েকজন সিএনজি ট্যাক্সি চালক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সংঘবদ্ধ চক্রের কাছ থেকে নেয়া ট্যাাকেন বানিজ্যে বিভিন্ন রুটে এসব সিএনজি চলাচল করলেও গত ৫আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনে পটপরিবর্তন হলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। গত দুইমাস ট্যাাকেন বানিজ্য বন্ধ থাকে। তবে চক্র বদলে আবারও কয়েকটি রুটে ট্যাাকেন বাণিজ্য শুরু হয়েছে। পুলিশ নিস্ক্রিয়তার সুযোগ কাজে লাগিয়ে নগরে ঢুকা ট্যাক্সি থেকে আবারও টাকা আদায় হচ্ছে। সড়কে পুলিশী অভিযান বন্ধ থাকার সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে সংঘবদ্ধ চক্র। শহরের প্রবেশমুখগুলো ঘিরে তাদের তৎপরতা বেশি।
চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও ট্রাফিক) এ.এন.এম ওয়াসিম ফিরোজ পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমরা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় যেখানেই অসঙ্গতি দেখছি সেখানেই অভিযান চালাচ্ছি। কোথায় নাম্বারবিহীন সিএনজি বেশি চলছে, এগুলো কার নেতৃত্বে চলছে আমরা খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিবো।’